সিএএ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে: শ্রিংলা

বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।

|| আবু আলী, ঢাকা ||

 

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আইনটি গৃহীত হয়েছে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, এটির মাধ্যমে যারা শরণার্থী হিসেবে কিংবা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের দ্রুত নাগরিত্ব পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২ মার্চ সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বি আইআইএসএস) ও ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ ও বিআইআইএসএস-এর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল মাসুদ আহমেদ

আরও পড়ুন : দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদে উত্তাল সংসদ, অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

শ্রিংলা আরও বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে এবং অনেকগুলো অভিন্ন সাংস্কৃতিক ধারা থাকায় এটা অস্বীকার করা যায় না যে, আমাদের দুই দেশেরই কিছু ঘটনা কারণে বা অকারণে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো আসামে নাগরিকপঞ্জি চালু করা ওই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারত সরকার সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্থানের হিন্দুসহ কয়েকটি ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

এই সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হিন্দুসহ এসব ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন

এর আগেই আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রণয়ন করা হয়সেখানে বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটিতে নাগরিকের তালিকা থেকে বাদ পড়েন বহু মানুষ।

আসামের অনেকের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অনেকে ওই রাজ্যে আবাস গড়েছেন।

গত সপ্তাহে দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষ দাঙ্গার রূপ নেয়।

টানা কয়েক দিনের সংঘাতে অন্তত ৪৬ জন মারা যান যাদের অধিকাংশই সিএএ বিরোধী এবং মুসলমান।

দিল্লির ওই ঘটনা বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক অশান্তির শঙ্কা তৈরি করে।

ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার যেভাবে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছে, তা নিয়েও সমালোচনা হয়।

এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা বলেন, এখানে আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সুতরাং বাংলাদেশের জনগণের ওপর এর কোনও প্রভাব থাকবে না। আমরা এই  ব্যাপারে আপনাদের আশ্বস্ত করছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রথমত, নাগরিকত্ব বিল কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।

দ্বিতীয়ত, নির্যাতনের শিকার হয়ে এসে যারা ভারতে আছেন, তাদের দ্রুততার সঙ্গে নাগরিকত্ব দেওয়া এর উদ্দেশ্য এবং

তৃতীয়ত, এটি (বাংলাদেশের) বর্তমান সরকারের সময়ের জন্য কার্যকর হবে না। কার্যকর হবে ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসক ও অন্য সরকারগুলোর সময়ে, যারা এখানে সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার দেয়নি।

‘মানবিক বিবেচনা’ থেকেই ভারত সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে দাবি করে শ্রিংলা বলেন, ‘বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ আছে, যারা ঘরবাড়ি ও রাষ্ট্রহীন। তারা নাগরিকত্ব পাবে। আগে যেখানে ১০ বছর লাগত, সেখানে এখন লাগবে ৫ বছর।’

আরও পড়ুন : কলকাতার রাজপথে ‘গোলি মারো’ স্লোগান, জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের

পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা পাঁচ হাজার মানুষকে গত পাঁচ বছরে ভারত নাগরিকত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের আইন অনুযায়ী স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এটা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটে ভারত সরকারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক সঙ্কট বাংলাদেশের ওপর যে প্রভাব ফেলছে এবং এ বিষয়ে ভারতের যে অবস্থান তা নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে, অনেকের আবার কিছু ‘ভিত্তিহীন ধারণাও’ রয়েছে।

‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভারত বাংলাদেশের মানবিক বোধের গভীর প্রশংসা করে, আপনারা প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। আপনারা যে বোঝা বহন করছেন আমরা তা স্বীকার করি ও সমবেদনা জানাই।

এ সময় বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে ত্রাণসামগ্রীর পাঁচটি চালান পাঠানোর কথা অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন পররাষ্ট্র সচিব। পাশাপাশি রাখাইনে বসতঘর নির্মাণসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট