বীমা খাতে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে হবে : হাসিনা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বীমা পরিবারের সদস্য। ১৯৬০ সালের পয়লা মার্চ যোগ দিয়েছিলেন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে।
|| আবু আলী, ঢাকা ||
টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বীমার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই খাতে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে হবে।
রবিবার জাতীয় বীমা দিবসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বীমা পরিবারের সদস্য। ১৯৬০ সালের পয়লা মার্চ যোগ দিয়েছিলেন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে। তাই আমার জন্যও বীমা কোম্পানিতে যেন একটা চাকরি থাকে। অন্তত রিটায়ারমেন্টের পরে। টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বীমার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এই খাতে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে হবে। বীমা প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ ডিজিটাল বা প্রযুক্তি নির্ভর করার তাগিদও দেন তিনি।
বীমার যেকোনও কিছু অর্থাৎ বীমার দাবি নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে বীমা সেবাকে আরও সহজীকরণে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য্।
এটা করলে তবে দুর্নীতি দূর হবে। এর থেকে মানুষ উপকার পাবে। কাজেই সেক্ষেত্রে বীমা খাতটাকেও আপনাদের প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে।
রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেকেরই ইন্সুরেন্সটা করা থাকলে পরে তাদের যে সুবিধাটা হয়, সেটা একটু দেখা দরকার এবং এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিটা এখন কার্যকর করা দরকার। পৃথিবীর সবদেশে এটা হয়ে গিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের দেশেও পুরো বীমা পদ্ধতিটাকে আপনারা ডিজিটাল সিস্টেমে দাঁড় করাবেন।
তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি, সারাদেশে ব্রড ব্র্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছি, মোবাইল ফোন সকলের হাতে হাতে, ফোরজি আমরা চালু করেছি।
আমি বলব, বীমাটাকে আপনারা আরও মানুষের কাছে নিয়ে যান। এখন আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ কিন্তু অনেক বেশি সচেতন। সেদিক থেকে আমরা মনে করি, মানুষের আরও আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব হবে। দেশের সকল বীমা প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসলে বীমা খাতের উন্নয়নের সাথে সাথে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হবে এবং কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে বীমার গ্রাহকদেরও আস্থা এবং বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। বীমা খাতের প্রিমিয়ামসহ দেশের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন : সিএএ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে: শ্রিংলা
‘এছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ‘স্টেট-অব-দি-আর্ট টেকনোলজি’ সম্পন্ন ‘ইউনিফাইড মেসেজিং প্লাটফর্ম’ (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করেছে।
যা গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে বলে আমি বিশ্বাস করি’ একথা উল্লেখ করে এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এই অনুষ্ঠানে বীমা খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতির জন্য পাঁচ জনের হাতে ‘বীমা পদক’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) ‘বীমা ম্যানুয়েল’ এবং ‘বীমা নির্দেশিকা’ নামক দুইটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়ি যারা ব্যবহার করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইন্সুরেন্সটা সঠিকভাবে করেননি। কারও গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সে যে টাকা পেতে পারে বা ইন্স্যুরেন্সের টাকায় গাড়ি মেরামত করাতে পারে, সে বিষয়টা মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে জানানো দরকার।
তাঁর অভিমত, ‘কেউ যদি আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে, তাহলে তার ইন্সুরেন্স থেকেই আপনার জরিমানার টাকা পাওয়া দরকার। যদিও এই সিষ্টেমটা আমাদের দেশে এখনও শক্তিশালীভাবে গড়ে ওঠেনি। আমি মনে করি, এটা গড়ে ওঠা দরকার।
তিনি বীমা কোম্পানির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বীমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে সেগুলো মানুষের কাছে আরও ব্যাপভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।’
এক্ষেত্রে তাঁর সরকারের কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, রেল যাত্রীদের জন্য বীমা, এমনকি ভবনের জন্য বীমা করার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের লেখাপড়া চালানো এবং সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই তাদের নামে একটি করে বীমা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্যও বীমা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন : বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে বাণিজ্য চালু
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা মালিকদের প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ চালুর বিষয়টি তাঁর সরকার পরিকল্পনায় রেখেছে।
শেখ হাসিনা বীমা কোম্পানীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের যারা পর্যবেক্ষক হবেন বা ঘটনার ইন্সপেকশনে যারা যাবেন, তাদের ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সৎ লোক হতে হবে। গ্রাহকরা বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামটা যাতে সঠিকভাবে দেয় সেটাও যেমন প্রয়োজন, বীমার টাকা যেন পায় এবং সঠিকভাবে পায় সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। যতটুকু ক্ষতি ততটুকুই যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফাঁকি দিয়ে নেওয়ার প্রবণতাটাও দূর করতে হবে।