নিচুতলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পঞ্চায়েতে ভালো ফল কঠিন বুঝেই সক্রিয় মমতা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ তৃতীয় তৃণমূল সরকার গঠনের পর সবে এক বছর হয়েছে। এরইমধ্যে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দল। তৃণমূলনেত্রী নিজে অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করলেও তাঁর দলের নিচুতলার নেতাদের একাংশ যে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
পাঁচ বছরে পথের ভিখারি থেকে তৃণমূলের একের পর এক ব্লক সভাপতি বেতাজ বাদশায় পরিণত হয়েছেন। তা মানুষ মোটেও ভালভাবে নিচ্ছে না। আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত ঘর গোছানো প্রয়োজন তৃণমূলের। না হলে মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত করা সম্ভব হবে না। বৃহস্পতিবার দলের নতুন অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রথমবারের জন্য গিয়ে সেই কথাই ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের নিচুতলার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও তাদের অনৈতিক কাজ কর্ম যে পুরোপুরিভাবে তাঁর নখদর্পণে আছে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ঘোষণা করেছেন ২০ মের পর বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও একেবারে নিচুতলার ব্লক সভাপতিদের অনেককেই তিনি বদলে ফেলবেন।
তবে এই গোটা কাজটা যে কলকাতা থেকে চাপিয়ে দেবেন না তাও জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। একেবারে নিচুতলার কর্মীদের চাহিদা শুনে, রিপোর্ট নিয়েই তিনি পরিবর্তন করবেন বলে দলের রাজ্য নেতাদের সামনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
এলেন, ময়দানে নেমে আন্দোলনও করলেন, কিন্তু বাঙালির মন জয় করতে পারলেন শাহ?
বগটুই (Bogtui) গণহত্যার পর থেকেই টানা উত্তাল বীরভূম (Birbhum) জেলা। সেখানে তৃণমূলের ছোট থেকে বড় প্রায় সব নেতাই বালি পাচার ও পাথর খাদানের বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।
এদিকে সেই জেলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) সিবিআই থেকে বাঁচতে এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রায় মাস ঘুরতে চলল জেলাতেই নেই। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ বীরভূমে মমতা বড় পদক্ষেপ করতে চলেছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকায় একের পর এক মাওবাদী পোস্টার দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে ঝাড়গ্রামের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খবর এসে পৌঁছেছে দলের স্থানীয় স্তরের নেতারা দুর্নীতিতে ডুবে আছেন।
তা থেকেই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে। এমনকি জেলা নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না বলে খবর পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতি মাসেই তিনি ঝাড়গ্রাম সফরে যাবেন। সূত্রের খবর ঝাড়গ্রাম জেলার দলীয় সংগঠনের খোলনলচে পাল্টে ফেলতে পারেন মমতা।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া ও হুগলি জেলার একাধিক ব্লক সভাপতিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। একটা বিষয় পরিষ্কার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান তিনি যেমন সেবার আদর্শে রাজনীতি করেন, দলের নিচুতলার নেতাকর্মীরাও সেই পথেই চলুন।
দল করার নামে সাধারণ মানুষের হকের টাকা মারা বা মানুষের সেবার নামে নিজের সেবা করে একের পর এক অট্টালিকা হাঁকানো মোটেই পছন্দ করছেন না তৃণমূলনেত্রী। তিনি চান না দলের নিচুতলার একাংশের দুর্বিনীত আচরণের জন্য বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সুযোগ পেয়ে যাক। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূলের সংগঠনে চলতি মাসেই বড় ঝাঁকুনি দিতে চলেছেন মমতা।