এ যেন ২০১৯ এর রিপিট টেলিকাস্ট! অর্জুনের ‘ঘরওয়াপসি’ নিয়ে জল্পনা আরও তীব্র
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেছিলেন। শোনা যায় বেশ শান্তিপূর্ণভাবে সেই আলোচনা হয়েছিল। তারপর দিদিকে প্রণাম করে বেরিয়ে আসেন অর্জুন। তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে আজও শোনা যাবে সেদিন মমতা ভেবেছিলেন তিনি শান্ত করতে পেরেছেন অর্জুনকে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগের ঘটনা। আর অর্জুন মানে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাহুবলী রাজনীতিবিদ তথা বর্তমান বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তার পরের ঘটনা তো সকলেরই জানা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা বিজেপিতে যোগ দেন ভাটপাড়ার তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক। সেই অর্জুনের ঘরওয়াপসি নিয়ে জল্পনা আরও তীব্র আকার ধারণ করল।
২০০৯ সালে ব্যারাকপুরে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদ তড়িৎ তোপদারকে হারিয়ে দীনেশ ত্রিবেদীর জয়ের মূল কান্ডারী মনে করা হয় অর্জুন সিংকে। সেবার দীনেশের ইলেকশন এজেন্ট ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ এর ভোটেই টিকিট চেয়ে বসেন অর্জুন। সেবার তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শান্ত করা গিয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন তো হল, নতুন রাজ্য সভাপতি বাছতে ত্রিপুরায় দিশেহারা বিজেপি
অর্জুন ঘনিষ্ঠদের দাবি, সেবার এই বাহুবলী রাজনীতিবিদকে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পরেরবার তাকেই লোকসভার টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অর্জুন বিরোধী বাকি তৃণমূল নেতাদের আপত্তিতে ফের দীনেশকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বিষয়টিকেই কাজে লাগান ততদিনে বিজেপিতে চলে যাওয়া মুকুল রায়। শোনা যায় তিনি তলায় তলায় অর্জুন ও দীনেশ দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছিলেন। যে তৃণমূলের টিকিট পাবে না তাকেই বিজেপিতে এনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার ছক ছিল মুকুলের। তবে অর্জুন টিকিট না পাওয়ায় কিছুটা সুবিধা হয় বিজেপির।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করে বেরিয়ে অর্জুনের সোজা বিজেপিতে গিয়ে যোগ দেওয়ার এই ঘটনাটি আজও আলোচিত হয়। সেই অভিজ্ঞতা মনে রেখেই উত্তর ২৪ পরগনার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ ভৌমিকরা প্রকাশ্যেই বলে থাকেন, অর্জুনের ভক্তি দেখে গলে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। সে যে কোনও মুহূর্তে যা কিছু করে বসতে পারে। তবে অর্জুন সিং নিজেই এবার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি বিজেপিতে থাকবেন কিনা তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে!
কিছুদিন ধরেই বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন অর্জুন সিং। প্রকাশ্য কারণ ছিল পাটের দাম নিয়ে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা। তবে ব্যারাকপুরের আনাচে-কানাচে কান পাতলে শোনা যায় একের পরে এক ঘনিষ্ঠদের তৃণমূল ভাঙিয়ে নেওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অর্জুন।
বুঝতে পারছেন বিজেপিতে থাকলে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে জামানত বাঁচানোও কঠিন হতে পারে। এদিকে বামেরাও আবার ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিচ্ছে। মাসখানেক আগে হয়ে যাওয়া পুরসভা নির্বাচনে নিজের গড় ভাটপাড়াও রক্ষা করতে পারেননি। এই অবস্থায় অর্জুনকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ হল, পাটের দামকে ছুতো করে আসলে তৃণমূলে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করছেন।
বেগতিক দেখে তাঁকে সোমবার দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তাঁর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়েই বিজেপিতে থাকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়সীমা জানিয়ে দেন অর্জুন সিং। বলেন, এই বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ঘরওয়াপসি অর্থাৎ তৃণমূলের ফিরে যাওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
সাদা চোখের হিসেব বলছে বিজেপি ছাড়লে তৃণমূলই হবে অর্জুনের গন্তব্য। কিন্তু নানান ঘটনায় পরিষ্কার পার্থ ভৌমিক, সোমনাথ শ্যাম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতারা অর্জুনকে সহজে মেনে নেবেন না। তবে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসেব বিবেচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তাঁকে দলে ফিরিয়ে নিতে রাজি থাকেন সেক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম হবে।
তবে অর্জুন দল ছাড়লে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বিজেপির ‘দোকান’ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের। সিপিএমও চাইছে অর্জুন তৃণমূলে ফিরে যাক। সেক্ষেত্রে তাদের সুবিধে। কারণ তাঁর কাজকর্ম নিয়ে ভোটারদের একাংশ ক্ষুব্ধ। অর্জুন তৃণমূলে গেলে এই বিক্ষুব্ধদের সমর্থন পুরোপুরিভাবে সিপিএমের দিকে চলে আসতে পারে। এতে বামেদের পুনরুত্থানে সুবিধা হবে।