এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচে বিরোধী এমএলএ-এমপি’দের বাধা, এ কোন ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথে বাংলা?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রত্যেক সাংসদের মতো বিধানসভার প্রত্যেক বিধায়কও নিজের এলাকার উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পান। একসময় এই অর্থ সরাসরি সাংসদ ও বিধায়কের খরচ করার অধিকার ছিল। কিন্তু নানান সময়ে তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এই অর্থ খরচের নিয়মে পরিবর্তন হয়েছে। এখন নিজের এলাকায় কোনও ক্ষেত্রে অর্থ কতটা খরচ করা হবে তা সংশ্লিষ্ট সাংসদ বা বিধায়ক ঠিক করতে পারেন।
কিন্তু তা সরাসরি তাঁদের হাত দিয়ে খরচ হয় না। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁরা প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেন। প্রশাসন সেটি খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেয় এবং প্রশাসনিক স্তর থেকেই গোটা কাজ পরিচালনা হয়। কিন্তু এমএলএ-এমপিদের এই তহবিলের অর্থ খরচ নিয়ে বাংলার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা।
বিরোধীদের অভিযোগ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের সাংসদ ও বিধায়কদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচ করতে দিচ্ছে না প্রশাসন। অন্যায়ভাবে তাদের জমা দেওয়া প্রস্তাবগুলি দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হচ্ছে। এর ফলে উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে রাজনৈতিকভাবেও বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে একযোগে অভিযোগ করেছে বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম।
এই অভিযোগ অবশ্য আজকের নয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই বামেদের পাশাপাশি কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীরা অভিযোগ করতে শুরু করেন এলাকা উন্নয়নের জন্য সাংসদ হিসেবে তাঁরা বছরে যে ৫ কোটি টাকা পান বা বিধায়করা বছরে ৬০ লক্ষ টাকা পায়, তা কোন তেই খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সাংসদ-বিধায়ক সব বিজেপির, আলিপুরদুয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা ডাক পাবেন তো?
দ্রুত সমস্ত প্রকল্পের প্রস্তাব জেলাশাসক বা মহকুমা শাসকের কাছে জমা দেওয়া হলেও তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে সেগুলি ফেলে রাখছেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল গোটাটাই হচ্ছে নবান্নের ইশারায়। ফলে বছরের শেষে অব্যবহৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত চলে যাচ্ছে, অথচ এলাকার কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না।
সেই সময় রাজ্যে বিজেপির জনপ্রতিনিধি ছিল না। তবে তারাই এখন প্রধান বিরোধীদল। এছাড়া কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক না থাকলেও অধীর চৌধুরী ও আবু হাশেম খান চৌধুরী এই দুই সাংসদ আছেন। রাজ্যসভার সাংসদ পদে আছেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের পাশাপাশি এনারাও নিজেদের সাংসদ তহবিলের বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করে উঠতে পারেননি বলেই বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে। অথচ সকলেরই দাবি সমস্ত অর্থ বরাদ্দ করে দিয়ে প্রস্তাব জেলাশাসকের কাছে বহু আগে জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
যদিও এর আগে বারবার দেখা গিয়েছে সরাসরি সরকারের কাজ ছাড়া এমপি ল্যাড বা এমএলএ ল্যাডের টাকায় এলাকায় এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধান, ছোটখাটো রাস্তাঘাট তৈরি করে দেওয়া, স্কুল বিল্ডিং তৈরি, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার মতো কাজগুলো খুব সহজেই হয়ে যেত। এতে সরকারের ঘাড়ে চাপও কমত।
বিরোধীদের অভিযোগ এর ফলে তাদের বিধায়ক ও সাংসদদের কথার খেলাপ হচ্ছে ভোটারদের কাছে। ফলে দ্রুত জনপ্রিয়তা কমছে। গেরুয়া শিবিরের দাবি, এই পরিস্থিতিতে তাদের দলের জনপ্রতিনিধিরা ব্যাপক কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
কেউ কেউ নিজের রাজনৈতিক জীবনের স্বার্থে দলবদলে তৃণমূলে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ সেক্ষেত্রে তাঁরা এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ খরচের সুবিধা পাবেন। ফলে ভোটের আগে এলাকার মানুষের সামনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কিছুটা অন্তত রক্ষা করা যাবে।
বিজেপির দাবি এই কারণেই তাদের দলের বেশ কিছু বিধায়ক ও সাংসদ ‘এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে যোগ দিলাম’ জাতীয় কথা আউড়ে দলবদল করছেন। এই বিষয়ে ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে একযোগে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, গণতন্ত্রে বিরোধী দলের অস্তিত্ব অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস এতটাই ক্ষমতার নেশায় মত্ত যে তারা বিরোধী দলের অস্তিত্বই রাখতে চায় না। তাই আমজনতার ক্ষতি করে তারা বিরোধীদলের জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে তাদের বাধ্য করছে দলবদল করতে!