আনিস কাণ্ডে নাম জড়িয়েও পদে ছিলেন সৌম্য, ব্যবস্থা নেননি মমতা, সেকথা ভোলেননি সালেম খান
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সাম্প্রতিক অশান্তিতে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকা। উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, অঙ্কুরহাটিতে যা হয়েছে তা সারাদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে প্রথম তিন দিন পুলিশ যেভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল তা কোনও সভ্য সমাজে ঘটে কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এরপরই কড়া হাতে হাল ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন সৌম্য রায়কে। যিনি আবার টলিউড অভিনেত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্রর স্বামী। ঘটনা হল এই আইপিএসের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ নতুন নয়। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ ছাত্রর নেতা আনিস খানকে যখন নির্মমভাবে খুন করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে তখনও হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার পদে ছিলেন সৌম্য রায়।
তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ ধামাচাপা দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের আড়াল করার অভিযোগ তুলেছিল আনিসের পরিবার। মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানের বাবা সালেম খানের পরিষ্কার অভিযোগ ছিল, আমতা থানার আইসি সহ অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন পুলিশ সুপার সৌম্য রায়।
সেই সময় সারা বাংলা দেখেছিল খোদ থানার বড়বাবুর বিরুদ্ধে আনিস খানকে খুন করার অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি সিপি। উল্টে তাঁর অফিস থেকে বিবৃতি জারি করে একরকম ক্লিনচিট দিয়ে দেওয়া হয়েছিল অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে উঠলে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় সরকার। তারপরই অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয় অভিযুক্ত আইসি’কে।
তবে এখানেই আইপিএস অফিসার সৌম্য রায়ের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা শেষ হচ্ছে না। আনিস খানের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে পাঁচলার পুলিশ সুপার অফিস অভিযানের ডাক দেয় বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি। সেই প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন ডিজিএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। সেদিন সৌম্য রায়ের নেতৃত্বেই পুলিশ মীনাক্ষী সহ বেশকিছু বামপন্থী কর্মীকে গ্রেফতার করে। বামেদের অভিযোগ, লকাপে মীনাক্ষীর উপর অত্যাচার করেছিল পুলিশ।
রাজনৈতিক স্বার্থেই এই পরিস্থিতি, মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া কঠিন
পরে আদালতে যাওয়ার সময় মীনাক্ষীকে রীতিমত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়। এতেও সৌম্য রায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। একটা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়ে টানা ১০ দিন জেলে কাটাতে হয়েছিল মীনাক্ষী মুখার্জিকে। এক্ষেত্রে কীভাবে মামলা সাজাতে হবে সেই বিষয়টির তত্ত্বাবধান করেছিলেন এই আইপিএস অফিসার।
সেই সময় বামেরা তো বটেই, এমনকি আনিস খানের বাবা সালেম খানও বারবার হাত জোড় করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন সৌম্য রায়ের বিরুদ্ধে সরকার যেন ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই কথায় কান দেয়নি। অজস্র অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও সরকারের গুডবুকে থাকার দৌলতে হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের দায়িত্বে থেকে গিয়েছিলেন সৌম্য রায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে কর্তব্যে বড়সড় গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় এবং সর্বস্তর থেকে এই নিয়ে চাপ আসায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হল রাজ্য সরকার।
তবে সেদিনের কথা ভুলে যাননি আনিস খানের বাবা সালেম খান। তাঁর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁর কথা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, তিনি কোনদিনই সৌম্য রায়কে ক্ষমা করতে পারবেন না। এমনকি সেদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আবেদন না শোনায় তাঁকেও ক্ষমা করতে প্রস্তুত নন সন্তানহারা এই বৃদ্ধ বাবা!