পুরনো বদনাম ঘুচিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সেচ দফতর, তবে চলার পথ অনেকটাই বাকি
দ্য কোয়ারি ডেস্ক: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলিতে একটা বড় সময়জুড়ে সেচ দফতরের দুর্নীতি নিয়ে বিতর্কের অন্ত ছিল না। শ্যালো চালিয়ে চাষের জমিতে জল দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব বা বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ মেরামতের ক্ষেত্রে পয়সা নয়ছয়ের ভুরিভুরি অভিযোগ উঠে আসত। বাংলা সেই তালিকার বাইরে ছিল না।
এর ফলে চাষে প্রভূত ক্ষতি হতো। শুধু তাই নয় ভালো উপাদান দিয়ে তৈরি না হওয়ার ফলে প্রতি বছর বর্ষায় বাঁধ ভেঙে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ভেসে যাওয়ার ঘটনা ছিল অতি পরিচিত।
কৃষি কাজের ক্ষেত্রে সেচ দফতরের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের কাজ সারা বছরজুড়েই চলতে থাকে। বর্ষার সময় ধরে রাখা জল বছরের শুখা মরসুমে খাল-বিলের মধ্য দিয়ে সরবরাহ করে চাষাবাদে সহায়তা করতে হয়। পুরোটাই এই দফতরের উপর নির্ভর করে।
কিন্তু অতীতে বারবার অভিযোগ উঠেছে সেচ দফতরের স্থানীয় কর্মী-ইঞ্জিনিয়ারদের ঘুষ দিয়ে অনেকেই বেআইনি সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। এর ফলে ব্যক্তিবিশেষের লাভ হলেও একটা বড় অংশের মানুষের চাষের বড় ক্ষতি হয়ে যেত।
আর তাছাড়া বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তো অতিপরিচিত ঘটনা ছিল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাংলার সর্বত্র সেচ দফতরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠত। তা একসময় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে অধিকারী গড় তমলুকে জিতে রাজ্যের সেচমন্ত্রী হন সৌমেন মহাপাত্র।
রাজীবের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় বড় চমকের অপেক্ষায় তৃণমূল
তার পর পুরনো ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। যেন তাঁর হাত ধরে যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই দফতর। গত এক বছরে তেমন কোনও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেনি এই দফতরের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দীঘা সহ রাজ্যের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বহু বাঁধ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সৌমেন মহাপাত্রের নেতৃত্বাধীন সেচ দফতর সেই সমস্ত বাঁধ সারিয়ে তুলেছে। সুন্দরবন এলাকাতেও তারা বিপুল অংশের নদীবাঁধ ভালোভাবে গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে সবকিছু হয়ে গিয়েছে ভাবলে ভুল হবে। গতবছর বর্ষায় দেখা গিয়েছিল ঘাটাল থেকে আরামবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত হয়ে যায়। এই এলাকার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালায় পলি জমে জমে নাব্যতা কমে গিয়েছে।
তার উপর বাঁধগুলো ঠিকঠাকভাবে তৈরি না হওয়াতেই এই বিপর্যয় হয়। আর ক’দিনের মধ্যেই বর্ষা শুরু হবে। এই কঠিন পরিস্থিতি কীভাবে সেচ দফতর সামলায় সেটাই এবার দেখার।
পাশাপাশি সৌমেন মহাপাত্রর হাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। দামোদর অববাহিকাকে প্রতিবছর বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে হলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করাটা খুব জরুরি।
কিন্তু বহু চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও এই বিষয়ে কেন্দ্র ছাড়পত্র দিলেও টাকা বরাদ্দ করেনি। সৌমেনবাবুকে দিল্লি গিয়ে এই বিষয়টি যেকোনভাবে সমাধান করতেই হবে। না হলে দামোদর অববাহিকার তিনটি জেলার মানুষের দুঃখ কিছুতেই ঘুচবে না।