অগ্নিপথে বিপদ কোথায়? দেশ উত্তালের কারণ জানুন
দ্য কোয়ারি ডেস্ক: অগ্নিপথ বিতর্কে দেশ কার্যত জ্বলছে। সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রতিবাদে যুবকদের একটা বড় অংশ রাস্তায় নেমেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিক্ষোভ মাত্রাছাড়া হয়ে পড়ছে। যারা রাস্তায় নেমেছে সকলেই আগামী দিনে নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন সদসূ হিসেবে দেখতে চায় তাই এই প্রতিবাদ আন্দোলনে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে।
নিজেদের ফিট এবং প্রস্তুত প্রমাণ করতে আন্দোলনকারীরা রাস্তাতেই ডন-বৈঠক, শারীরিক কসরত করছে। কিন্তু শুধুমাত্র চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও চার বছর পর ৭৫ শতাংশ তরুণের কর্মহীন হয়ে পড়ার মধ্যেই অগ্নিপথের বিপদ সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই নতুন প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক এবং বিপদের আরও অনেক দিক আছে। সেই সঙ্গে উঠছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।
স্বাধীনতার আগে থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন রেজিমেন্টে নতুন সেনাদের নিয়োগ করা হয়। সাধারণত গোটা কর্মজীবন একজন সেনা নির্দিষ্ট রেজিমেন্টেই কাটিয়ে দেন। সে তিনি যত বড়ই অফিসার হন, সবার জন্য এক নিয়ম। একমাত্র দেশের চারটি জোনের জিওসি হলেই তখন রেজিমেন্ট থেকে পদোন্নতি ঘটে সেই পদে গিয়ে বসেন।
ফলে গোটা কর্ম জীবনটাই একজন ভারতীয় সেনা একই সতীর্থদের সাথেই কাটানোর সুযোগ পান। ফলে লড়াইয়ের ময়দানে সমন্বয়ের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু অগ্নিপথ প্রকল্পে যে অগ্নিবীরদের নিয়োগ করা হবে তারা কোনও রেজিমেন্টে সুযোগ পাবে না। চার বছর পর যে ২৫% কে স্থায়ী করা হবে কেবল মাত্র তারাই কোনও না কোনও রেজিমেন্টের অংশ হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
বোঝাই যাচ্ছে অগ্নিপথ প্রকল্প ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এক বড় বৈষম্য তৈরি করতে চলেছে।
সেইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অগ্নিপথের মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত সেনাদের স্থায়ী সেনা কর্মীদের মত একইরকমভাবে যুদ্ধ বাধলে লড়াই করতে হবে। কিন্তু স্থায়ী সেনাদের থেকে কম বেতন, মাত্র চার বছরের চাকরিজীবন, পেনশন না থাকায় যুদ্ধ বাধলে অগ্নিবীররা আদৌ নিজেদের সেরাটা দেবেন কিনা বা জীবন বিপন্ন করে লড়াই করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সেই সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, সমান ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও কেন অগ্নিবীররা কম বেতন পাবেন? পাশাপাশি আপাতত যা জানা যাচ্ছে তাতে অগ্নিপথ প্রকল্পে নিযুক্ত অস্থায়ী সেনাদের মাত্র ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে! সেনাবাহিনীতে এমনিতে দেড় বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে মাত্র ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে কীভাবে তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে সেই বিষয়টি ভেবে আঁতকে উঠেছেন সমর বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তাঁরা বলছেন, “সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ না করিয়ে রাশিয়া তাদের নবীন সেনাদের একাংশকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাদের পরিণতি ভালো হয়নি।”
এছাড়া এই অস্থায়ী সেনা জওয়ানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে। এমনিতেই দেশে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ভালো নয়। উত্তর ভারতের অসংখ্য যুবক সেনাবাহিনীতে নিজেদের কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ছোট থেকে প্রস্তুত হয়।
এক্ষেত্রে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতও খুব একটা পিছিয়ে নেই। সেখানে মাত্র চার বছরের জন্য চাকরি করার পর নতুন কাজ খুঁজে নিতে বাধ্য হওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া খুব কঠিন। তাই অগ্নিপথ বিক্ষোভ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভের চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, চার বছর পর যে অগ্নিবীরদের কাজ চলে যাবে তাদের জন্য সিআরপিএফ, বিএসএফ, উপকূল রক্ষী বাহিনীর মতো বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীতে নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ করা হবে।
কিন্তু তথ্য বলছে এই আধাসামরিক বাহিনীরগুলিতে প্রতিবছর এতটাও কর্মসংস্থান তৈরি হয় না যেখানে চার বছর পর কাজ হারানো অগ্নিবীররা সকলে নিযুক্ত হতে পারবে।
সেই সঙ্গে প্রাক্তন সামরিক কর্তাদের প্রশ্ন, এইভাবে চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের ফলে দেশের সামরিক বাহিনীতে শিথিলতা আসবে নাতো? যুদ্ধের সময় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেনার অভাবে বাহিনীকে ভুগতে হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
এর পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বিপুল সংখ্যক ছেলে যদি পরবর্তীতে অন্যত্র ঠিকঠাক কাজ না পায় তবে দেশে অপরাধপ্রবণতা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা। এই সুযোগে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও জঙ্গিগোষ্ঠী সেনাবাহিনীর মধ্যে নিজেদের জাল আরও সহজে বিস্তার করতে পারবে বলে মনে করছে কিছু মহল।