রাষ্ট্রপতি নির্বাচন মানেই তৃণমূল নেত্রীর অস্বস্তি, গোপালকৃষ্ণের ‘না’ কী ফের সেটাই প্রমাণ করল?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সময়টা ২০১২ সাল। এমনই এক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগের মুহূর্ত। স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির অলিন্দে তখন রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে। প্রতিভা দেবী সিং পাটিলের পর দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছুটা চমকে দিয়েই সরকারের মুশকিল আসান প্রণব মুখার্জিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করার কথা জানাল কংগ্রেস।
বাঙালি ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে বামেরাও সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে হঠাৎ বিরোধিতা শুরু করেন প্রণববাবুর অত্যন্ত স্নেহের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে বৈঠক করে তৃতীয় বিকল্প প্রার্থী দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও জানিয়ে দেন।
সেই সময় মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সামনাসামনি ও টেলিফোনে কথা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল নেত্রীর এই তৎপরতায় অক্সিজেন পায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। কারণ ভোট কাটাকাটির অঙ্ক বলছিল তৃণমূল ও সমাজবাদী পার্টি যদি আরও দু-একটি ছোট দল জুটিয়ে প্রণব মুখার্জির বিপক্ষে কাউকে প্রার্থী দাঁড় করায় তবে এনডিএ শিবিরের প্রার্থী ফাঁকতালে জিতে যেতে পারে।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা দিয়েও একেবারে শেষ মুহূর্তে ভোল বদলান মুলায়ম সিং যাদব। তিনি হঠাৎই জানান প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন করবে সপা। মুলায়মের এই ঘোষণায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তিনি প্রণব মুখার্জিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। তাতে তাঁর ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছিল তা সহজে মেরামত হয়নি। এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও অতি তৎপরতা দেখাতে গিয়ে ফের মমতা নিজের সমস্যা নিজেই ডেকে আনলেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ইয়েচুরির ব্যাখ্যাতেও মিটল না ক্ষোভ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আড়াআড়ি বিভাজন সিপিএমে
এবার মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই গোপালকৃষ্ণ গান্ধি ও ফারুক আব্দুল্লাহর নাম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু তাঁরা দুজনই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তৃণমূল নেত্রীর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কংগ্রেস ও বামেদের দাবি, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করতে গিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেভাগে গোপালকৃষ্ণ ও ফারুক আব্দুল্লাহর নাম ভাসিয়ে দেন।
কিন্তু তাঁরা দুজনেই বেঁকে বসায় বিরোধী শিবিরের মুখ পুড়েছে। এখন অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও আগের সেই জমাট ভাবটা আর থাকবে না। বামেদের সরাসরি অভিযোগ, বিজেপির সুবিধা করে দিতেই এমন করেছেন মমতা! সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থেকেও বিজেপির প্রার্থী এবার সহজে জিতে যাবে।
বামেদের এই অভিযোগ সঠিক না ভুল সেটা পরের কথা। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখনই সক্রিয় হয়েছেন সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা। লাভের লাভ কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অস্বস্তিতেই পড়তে হয়েছে। তবে এবারের ধাক্কার অভিঘাত আরও বেশি। তৃতীয়বার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর খুব সহজেই জাতীয় রাজনীতিতে দ্রুত উঠে আসছিলেন তিনি। কিন্তু এইভাবে তাঁর পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব কমতে পারে তৃণমূলের।