২১ নয়, দিনটি হতে পারত ১৪ জুলাই ; এক ঘটনায় বদলে যায় বঙ্গ রাজনীতির গতিপথ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ। সেইসঙ্গে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। বরাবরের সিপিএম বিরোধী মমতা কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আনতে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তুমুল লড়াই করছেন। কিন্তু ‘সায়ন্টিফিক রিগিং’ করে মানুষের ক্ষোভকে হেলায় উড়িয়ে একের পর এক নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে সিপিএম।
তরুণী মমতা বুঝলেন সিপিএমের এই ছক ভাঙতে হলে ভোট ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। রিগিং ঠেকাতে ভোটারদের সচিত্র পরিচয় পত্র দরকার। এই ভাবনা থেকেই দিলেন মহাকরণ অভিযানের ডাক। দিনটা ছিল ১৯৯৩ সালের ১৪ জুলাই।
কিন্তু ১২ জুলাই প্রয়াত হন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসান। বিধি মেনে রাজ্যে শোক ঘোষণা করা হয়। স্বাভাবিকভাবে কর্মসূচি পিছিয়ে দেন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক এক সপ্তাহ পর, ২১ শে জুলাই নতুন দিন ঘোষণা করেন।
এইভাবেই যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানের দিন বদলে গিয়েছিল। বাকি ইতিহাস কমবেশি সকলেরই জানা। ওই অল্প বয়সেই বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ হয়ে ওঠা মমতার ডাকে যুব কংগ্রেসের কর্মীদের ২১ জুলাই ঢল নেমেছিল কলকাতার রাজপথে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খায় রাজ্য পুলিশ।
ভূমি দফতরে ঘুঘুর বাসা ! বুধবার জেলাশাসকদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে মুখ্যসচিব
এক পর্যায়ে সকলকে অবাক করে দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। রক্তাক্ত হয়ে ওঠে কলকাতার রাজপথ। একটুর জন্য বেঁচে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নাকি স্বরাষ্ট্র সচিব মনীশ গুপ্ত, কে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তা আজও জানা যায়নি। তবে সিবিআই এই ঘটনায় পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্লিনচিট দেয়।
বিভিন্ন সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠরা অভিযোগ করেছেন সেদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর তরফ থেকে প্রত্যাশিত সাহায্য পাননি মমতা ও তাঁর সমর্থকরা। না হলে হয়তো আরও আগেই বাংলার বাম জমানার পতন ঘটত। সে অন্য বিষয়।
তবে ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাইয়ের এই মর্মান্তিক ঘটনা যুব কংগ্রেসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হলেও তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কার্যত ইতিহাসের পাতায় এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সংগ্রামের উপর পুলিশের বর্বরোচিত আক্রমণ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে।
তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করলে স্বাভাবিকভাবে ২১ শে জুলাইয়ের লিগ্যাসি তাঁর দিকে চলে আসে। আজও প্রতিবছর ২১ জুলাই মৃত শহিদদের স্মরণ করেন মমতা। তাঁদের কাউকেই ভুলে যাননি তৃণমূল নেত্রী। ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের পর সেই শহিদদের পরিবারের পাশে যতটা সম্ভব তিনি দাঁড়িয়েছেন।
যুব কংগ্রেস নেত্রী থেকে আজকের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে ওঠার পিছনে ২১ শে জুলাইয়ের আন্দোলনের অবদান অপরিসীম। কারণ এই ঘটনার মধ্য দিয়েই সারা বাংলা তথা সারা ভারত বুঝেছিল এক অধমনীয়, লড়াকু, একরোখা ও আপসহীন নারী শক্তির উত্থান ঘটেছে বাংলার রাজনীতিতে। এবারের ২১ শে জুলাইয়ে শহিদ স্মরণ মঞ্চে সেই আপসহীন মমতাকে ফের গর্জে উঠতে দেখা যাবে বলেই মনে করছেন তৃণমূল অন্তপ্রান মানুষ।