জঙ্গলে রাতযাপন, মেঘালয় থেকে গুয়াহাটি ফিরলেন ২৬০ আতঙ্কিত পরিযায়ী শ্রমিক
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে উত্তপ্ত মেঘালয়। শনিবার থেকে মেঘালয়ের একাধিক স্থানে জারি কার্ফু। এরই মধ্যে মেঘালয়ের জাতি ও উপজাতির সংঘর্ষে আটকে পড়েন শতাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে ২৬০ জনকে উদ্ধার করে মেঘালয়া এবং অসম পুলিশের যৌথ বাহিনী। এই মুহুর্তে তাঁদের গুয়াহাটিতে নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা লোয়ার অসমের ধুবরি, কোকরাঝাড় এবং গোয়ালপাড়া জেলার বাসিন্দা। এর মধ্যেই বেশীরভাগ মেঘালয়ের সোহরা, ইচ্ছামতি সহ মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলসের একাধিক জায়গায় কাজ করতেন। গত কয়েকদিন ধরে মেঘালয়ে চলা ঘটনায় বহু মানুষ আটকে পড়েছেন বলে দাবী পুলিশের। আতঙ্কে জঙ্গলে রাত কাটাতে হয়েছে, এমনটাই দাবী করছেন অনেকে।
আরও পড়ুনঃসিএএ-আইএলপি ইস্যুতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে শিলঙে হত এক, জারি অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ, বাতিল ইন্টারনেট
গুয়াহাটি পৌঁছানোর পর তাঁরা জানিয়েছেন, হিংসা ছড়িয়ে পড়তেই জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। খাবার ছাড়াই ৪ দিন কাটাতে হয় তাঁদের। পরে একটি নিকটবর্তী এক পুলিশ স্টেশনে এসে উপস্থিত হন তাঁরা। সেখানে কোনও খাবার, জল কিছু মেলেনি বলে দাবী জানিয়েছেন অনেকেই।
অসম পুলিশের আইজি দীপক কেদিয়া জানিয়েছেন, খবর পাওয়া মাত্রই মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। অসমে পৌঁছানো অবধি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ জারি রাখেন তিনি। বিএসএফ ক্যাম্প এবং পুলিশ স্টেশনে এখনও অনেকে আটকে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন অসমের ইনস্পেক্টর জেনারেল।
অসমের পুর্ব বিলাসিপাড়া বিজেপি বিধায়ক অশোক কুমার সিংহী জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে প্রায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার জন আটকে রয়েছেন। তাঁদেরকে অসমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাদের মধ্যে অনেকেই লোয়ার অসমের সপ্তগ্রাম জেলার। অসম পুলিশের আইজিপি দীপক কেডিয়ার নেতৃত্বে ২৬০ জনকে উদ্ধার করা গেছে।
এবিষয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান বিজেপি বিধায়ক। অসম পুলিশের এডিজি জিপি সিংয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলেছেন তিনি। লোয়ার অসমের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান অশোক কুমার সিংহী।
আরও পড়ুনঃসংসদ বিরোধী আচরণের জন্য সাত কংগ্রেস সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন স্পিকার
চার দিন পর শিলংয়ের একাধিক জায়গায় কার্ফু শিথিল করা হয়। ছয় জেলায় চালু করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। এরই মাঝে ফের শিলংয়ে হিংসার ঘটনা দেখা যায়। শিলং থেকে কিছুদূরে নংমিসোং এলাকায় কার্ফু চলাকালীন একটি ট্যাক্সিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে উত্তেজিত জনতা। যদিও সরকারি তরফে ওই এলাকায় কার্ফু তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবী করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর রিভোই জেলার উমসিং বাইপাসের ধারে একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে উত্তেজিত জনতা। এর ফলে গাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে রি ভোই জেলায় রাত্রি বেলা কোনও কার্ফু জারি থাকছে না। এমনটাই পুলিশ সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে প্রতিবাদে ইছামতী জেলায় মিছিল বের করে খাসি ছাত্র সংগঠন। তাঁদের দাবী, নতুন আইনে ইনার লাইন পারমিটের যে বদল আনা হয়েছে তা পরিবর্তন করতে হবে। ঘটনায় প্রাণ হারায় দুজন। যার মধ্যে একজন খাসি ছাত্র সংগঠনের ছাত্র বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেঘালয়ের পরিস্থিতি।