জহর ‘জ্বালায়’ কতটা ছটফট করছে তৃণমূল? নাকি উড়ো খ‌ই গোবিন্দায় নমঃ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ জহর ‘জ্বালায়’ কাত তৃণমূল, হেডলাইনটা এমন হতেই পারত। সোমবার সন্ধ্যেয় একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন বাঙালি আমলা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার।

তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন কেবল অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, যাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদেরকে বাদ দিতে হবে। তবেই কাজের কাজ কিছু হবে। না হলে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে তৃণমূল। এমনকি রাজ্যসভায় দলীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পান না বলেও জানিয়েছেন।

লক্ষনীয় বিষয় হল রাজ্যসভায় তৃণমূলের সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের কেবলমাত্র প্রশংসা করেছেন এই প্রাক্তন আমলা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু না বললেও কোন‌ও প্রশস্তি মূলক বাক্য‌ও শোনা যায়নি। কিন্তু এতো কিছুর পরেও জহর ‘জ্বালায়’ কতটা জ্বলছে তৃণমূল?

প্রথম কথা হল, জহর সরকারকে দিয়ে তৃণমূলের ঘরে একটা ভোট বেশি বা কম আসে বা যায় না। প্রসার ভারতীর এই প্রাক্তন সিইও সজ্জন, শিক্ষিত মানুষ। দলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে জাতীয় স্তরে তৃণমূলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। বাংলাতেও সুশীল সমাজের মধ্যে তাঁর একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে।

কিন্তু তৃণমূল বলতে ঠিক নিচুতলার যে সাধারণ মানুষগুলোকে বোঝায় তাঁদের মধ্যে কোনভাবেই পড়েন না জহরবাবু। তিনি কোনও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা দলীয় সম্মেলনে বক্তব্য‌ও রাখেন না। বলতে গেলে ‘আ অ্যাপলিটিক্যাল পলিটিক্যাল পার্সন’ হলেন জহর সরকার।

গ্লাসানস্ত ও পেরেস্ত্রইকার নায়ক গর্বাচেভ আর নেই

তাই তাঁর এই বিস্ফোরক মন্তব্যে আপাত দৃষ্টিতে তৃণমূল কংগ্রেসের কোন‌ও সমস্যা নাও হতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার, যেভাবে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়ছে বাংলার শাসক দল, তাতে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

যারা এইসব খাওয়াখাই বা অনৈতিক পথ থেকে দূরে থাকেন, সেই সমস্ত সাংসদ-বিধায়কদের কাছে এ এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। সেই কথাই উঠে এসেছে জহর সরকারের মুখ দিয়ে। এই মানুষগুলো যদি দল ছেড়ে চলে যায় তবে আপাত দৃষ্টিতে দলীয় সংগঠনে প্রভাব না পড়লেও আমজনতার কাছে খুব খারাপ বার্তা যাবে। যা ঘুরিয়ে ভোট বাক্সে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

তাছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি জহর সরকাররা তৃণমূল থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে বাঙালির সচেতন অংশের ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এর পরিণতি ২০১১ সালে ভালোমতো টের পেয়েছিল সিপিএম। তাই তৃণমূল কংগ্রেসের আগে থেকে সাবধান হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া জহর সরকাররা এইভাবে মুখ খুলতে শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা লোফা বল পেয়ে যাবে। তাতে অস্বস্তি বাড়বে বই কমবে না।

তবে জহর সরকাররাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। সোমবার এই প্রাক্তন আমলা বলেছেন, তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধবরা বলছেন কেন তিনি এখনও তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সবেমাত্র এক বছর হল জহর সরকার রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। অথচ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আজকের নয়। সেই কবে সারদা কেলেঙ্কারি সহ বহু কোটি টাকার চিটফান্ড দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তাদের।

এরপর নারদ কেলেঙ্কারিও ঘটেছে। তাছাড়া কয়লা ও গরু পাচার নিয়েও তদন্ত তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। নতুন বলতে, জহরবাবু সাংসদ হওয়ার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়া আর গরু পাচার কেলেঙ্কারিতে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের একের পর এক সম্পত্তির হদিশ পাওয়া।

সেক্ষেত্রে তো বলতেই হয়, দুর্নীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস অভিযুক্ত তা জেনেই যুক্ত হয়েছিলেন জহর সরকার। তাহলে এখন কাঁদুনি গাইছেন কেন? এই প্রশ্নটাও উঠছে, ওঠা স্বাভাবিক। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, জহর সরকারের পলিটিক্যাল ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হলেও খুব কিছু যায় আসে না। কিন্তু তিনি বা তাঁর মতো আরও অনেকে ধীরে ধীরে মুখ খুললে তৃণমূল কংগ্রেসের সমূহ বিপদ।

সম্পর্কিত পোস্ট