গ্লাসানস্ত ও পেরেস্ত্রইকার নায়ক গর্বাচেভ আর নেই

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ইতিহাসের যবনিকাপাত। তা গর্বের না হতাশার সেটা পরবর্তী প্রজন্ম ঠিক করবে। তবে গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নামক দুই দুনিয়া বদলকারী শব্দের জনক শত প্রশংসা ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে গেলেন মঙ্গলবার। দীর্ঘ রোগভোগের পর ৯১ বছর বয়সে মারা গেলেন কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভ।

কমিউনিস্ট দুনিয়ার কাছে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত খলনায়ক ও একটি স্বপ্নের ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থেকেছিলেন গর্বাচেভ। কারণ তাঁর আমেরিকার নিকটে আসা ও ঐতিহাসিক গ্লাসানস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতির কারণেই ১৯৯১ সালে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় কমিউনিস্ট শাসিত সোভিয়েত ইউনিয়ন।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধী বিশাল কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি মুহূর্তের মধ্যে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন শিবিরের সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিকরা গর্বাচেভকেই কারণ বলে ঠাওরেছেন। পুঁজিবাদী দুনিয়ার কাছে তিনি নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন। অপরদিকে কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক শিবিরের কাছে আমৃত্যু একজন ঘৃণ্য মানুষে পরিণত হয়েছিলেন।

ইবোলায় আবার মৃত্যু! বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের ছায়া

তবে বিনা রক্তপাতেই মিখাইল গর্বাচেভ আমেরিকার সঙ্গে সোভিয়েতের ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই আবার এক হতে পেরেছিল দুই জার্মানি। বরাবরই গর্বাচেভের জীবন রঙিন ছিল। ১৯৮৫ সালে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

সেই সূত্র ধরেই সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থার রাষ্ট্রপতি হন। যদিও তাঁর সঙ্গে বরাবরই মতের অমিল ছিল উপরাষ্ট্রপতি গেন্নাদির। গর্বাচেভ বিরোধী শিবির বলে থাকে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও ভদকা খেয়ে রাশিয়ার বরফে ঢেকে যাওয়া রাস্তায় নাকি মাতলামো করতেন, গড়াগড়ি খেতেন তিনি!

তাঁর গ্লাসানস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ঠিক যখন পতনের মুখে দাঁড়িয়ে, সেই সময় কট্টর কমিউনিস্ট শিবিরের নেতা তথা দেশটির উপরাষ্ট্রপতির গেন্নাদি শেষ চেষ্টা হিসেবে দেশের রাষ্ট্রপতি গর্বাচেভকে গ্রেফতার করেছিলেন। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা রাশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলেৎসিন  তাঁকে মুক্ত করেন।

তাঁর নীতির কারণেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় পরবর্তী সময়ে আমেরিকা সহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে কার্যত নায়কের মর্যাদা পেয়ে এসেছেন গর্বাচেভ। ১৯৯০ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছিলেন। মস্কোর পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুর খবরে সীলমোহর লাগানো হয়েছে। মস্কোতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে পুতিন প্রশাসন।

সম্পর্কিত পোস্ট