জেলায় জেলায় সিপিএমের মিছিলে জনস্রোত, মিরাকল নাকি পুনর্মুষিকভব

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে হয়েছে, বালুরঘাটেও হয়েছে। তবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাগুলো বাদ দিলে জেলায় জেলায় লাগাতার কর্মসূচি নিচ্ছে সিপিএম।

মূলত পঞ্চায়েত ভোট এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে তারা জেলা শাসকের দফতর অভিযানের ডাক দিচ্ছে, শাসকদল বিরোধী আন্দোলন করছে। বেশিরভাগ জায়গাতেই মীনাক্ষী মুখার্জী, না হলে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম প্রধান বক্তা হিসেবে থাকছেন। তাঁদের কথা শুনতে উপচে পড়ছে মানুষ। কার্যত কালো মাথার স্রোত গুনে শেষ করা যাচ্ছে না।

এরই মাঝে ১৯ সেপ্টেম্বর ধর্মতলা চত্বরে ‘ইনসাফ’ সভার ডাক দেয় সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন। এসএফআই ও ডিওয়াইএফআইয়ের ডাকা ওই সমাবেশে যোগদান যে বিপুল ছিল তা স্বীকার করতেই হবে। সেদিন কার্যত কলকাতা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ভিড়ের চাপে। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলার ঠিক যে জায়গায় সভা করেন, সেখানেই অস্থায়ী মঞ্চের উপর উঠে বক্তব্য রাখেন মীনাক্ষী, সেলিমরা।

এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, জলপাইগুড়ি সহ কয়েকটি জেলাতেই মাত্র বামফ্রন্টের নামে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বাদ বাকি সমস্ত জায়গাতেই সিপিএম নিজের ব্যানারে সভা সমিতি, মিটিং মিছিল করছে। তাছাড়া বাস্তব পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বাকিদের রাজনৈতিক তৎপরতা প্রায় শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। সেখানে সিপিএম শরিকদের জন্য অপেক্ষায় না থেকে একাই মাঠজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে‌।

একুশের বিধানসভা ভোটের পর সবে দেড় বছর কেটেছে। শূন্য হয়ে যাওয়া সিপিএম কোন যাদুমন্ত্রে এতো দ্রুত মানুষের সমর্থন ফিরে পেল, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। কারণ বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কোন‌ও একমুখী উত্তর পাওয়াটা বেশ কঠিন। তাছাড়া অতীতের কিছু উদাহরণ এই আশার মধ্যেই বামেদের জন্য আশঙ্কার এক বীজ বুনে দিচ্ছে।

চাকরি ছাড়ার দিন বেঁধে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, না মানলেই বড় বিপদ

একুশের বিধানসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিগেডে কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ’কে নিয়ে মহাসমাবেশ করেছিল বামফ্রন্ট। বিজেপির ব্রিগেড সমাবেশকে তাদের এই জমায়েত কার্যত বলে বলে গোল দিয়েছিল।

আসলে এক দশকের উপর ক্ষমতা হারালেও নিজেদের শৃঙ্খলাবদ্ধ সংগঠনের জেরেই সিপিএমের বড় বড় সমাবেশে কখনোই সেভাবে জমায়েতের অভাব চোখে পড়েনি। কিন্তু ভোটের ফলে রক্তক্ষরণ অব্যাহত থেকেছে। আর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে তারা কেমন করে শূন্য হয়ে গিয়েছে সেটা সকলের‌ই জানা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলে থাকেন, সভা-সমাবেশে মানুষকে টেনে আনতে পারলেও সেই সমর্থনকে ভোট বাক্সে রূপান্তরিত করতে পারছে না বামেরা। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে সিপিএমের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে যেভাবে মানুষের ঢেউ উপচে পড়ছে তার পরেও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, এই জনসমর্থন আদৌ পঞ্চায়েত ভোটের ফলে প্রতিফলিত হবে তো?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা একটা অন্যরকম দিক খুজে পেলাম। সম্প্রতি সিপিএম যে বড় বড় কর্মসূচিগুলো নিচ্ছে তার সবকটা যে কলকাতা কেন্দ্রিক তা বলা যাবে না। বরং প্রতিবাদ সভা, আন্দোলনের ডাক জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা হোক বা বাঁকুড়ার ওন্দা, খয়রাশোল, এই ব্লকগুলিতে সিপিএমের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচির ডাক দেওয়া হচ্ছে সেখানে মানুষের ভিড় দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্লকের কর্মসূচিতে সেলিম বা মীনাক্ষী খুব একটা উপস্থিত থাকছেন না। সেগুলিতে সাধারণত জেলার নেতারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাতেই ঝেঁটিয়ে আসছে মানুষ। কিন্তু কেন?

এর একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে তাতে বিরক্ত, বিতশ্রদ্ধ মানুষ। তার ওপর স্থানীয় স্তরে তৃণমূল নেতাদের দাদাগিরি, দলের নাম করে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতেই হয়তো লাল ঝাণ্ডায় আস্থা রাখছেন তাঁদের অনেকে।

তবে আবারও বলতে হবে, বিষয়টা এতোটা সহজ সরল নয়। কারণ বিজেপি তাদের উগ্র দক্ষিণপন্থী মতাদর্শ গ্রাম বাংলার একটা বড় অংশের মধ্যে গেঁথে দিতে সফল হয়েছে। সেই মানুষগুলো চটকরে লাল ঝাণ্ডার দিকে আসবেন কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। তবে এই সমস্ত প্রশ্ন, সমীকরণের বেশ কিছুটা উত্তর আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাওয়া যেতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট