কেষ্ট কাণ্ড ছাড়াও ডিয়ার লটারির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন বের হয়। তা থেকে জানা যায় বোলপুরের অনুব্রত মণ্ডল ডিয়ার লটারি কেটে ১ কোটি টাকা জিতেছেন। এর সঙ্গে যে ছবি ছিল তা হুবহু কেষ্টর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। যিনি বীরভূমের মুকুটহীন সম্রাটের স্বীকৃতি পেয়েছেন বিভিন্ন মহলে।
কিন্তু গরু পাচার মামলার তদন্ত চালাতে গিয়ে সিবিআই যেন লটারির বিষয়টিতে নজর দিয়েছে ওমনি জানা গেল, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কখনও কোনও লটারি জেতেননি। অন্তত বোলপুরের রাহুল লটারি দোকানের মালিকের দাবি তাই, যাঁর দোকানের টিকিটে কোটি টাকা উঠেছে।
কেষ্ট মণ্ডল যখন লটারি যেতেননি তবে তাঁর ছবি ছেপে বিজ্ঞাপন বের হল কেন? রাহুল লটারির মালিকের বক্তব্য গোটাটাই ডিয়ার লটারি কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। তবে শুধু যে অনুব্রতর ঘটনা তাই নয়, এর আগেও বারবার ডিয়ার লটারির কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি জোড়াসাঁকো বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তর স্ত্রী এই ডিয়ার লটারি কেটে কোটি টাকা জেতেন বলে জানা গিয়েছে।
তার কদিনের মধ্যেই জানা যায় সেই বীরভূমেরই নলহাটি বিধানসভার তৃণমূল বিধায়কের আত্মীয়ও এই লটারির টিকিট কেটে কোটিপতি হয়েছেন। এরপরই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সুর চড়িয়ে বলেন, “এটা ডিয়ার লটারি নয়, এটা আসলে ভাইপো লটারি”। শুভেন্দুর দাবি, ডিয়ার লটারির নামে তৃণমূল নেতাদের পকেট ভরার কাজ চলছে। সাধারণ মানুষ টিকিট কাটতে আর কোটি টাকা পাচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের বাড়ির সদস্যরা!
‘উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত’ গ্রুপ, সোশ্যাল মিডিয়ায় বঙ্গভঙ্গের পক্ষে জনমত গঠনের কাজ অনেক দিন ধরে চলছে
ঘটনা হল রাজ্যের সর্বত্র এখন ডিয়ার লটারির রমরমা। ৩০ টাকার বিনিময়ে ৬ টাকা মূল্যের ৫ টি টিকিট কিনছে মানুষ। অনেকে প্রতিদিন এবেলা-ওবেলা করে লটারির টিকিট কাটছেন। সকলেই একবার কোটি টাকা জেতার অপেক্ষায়।
আমজনতার মধ্যে চাহিদা দেখে বড় লটারি দোকানের পাশাপাশি পাড়ার মোড়ে, গলিতে ছোট একটা টেবিল বিছিয়েও অনেকে লটারির টিকিট বিক্রি করতে শুরু করেছে। কর্মসংস্থানের অভাবে ধুঁকতে থাকা বাংলায় ডিয়ার লটারি বিক্রি কার্যত বিকল্প কর্মসংস্থানের জায়গা করে নিয়েছে। করোনা সংক্রমণের পর এর রমরমা আরও বেড়েছে।
প্রতিদিন তিনবার খেলা হয় ডিয়ার লটারি। প্রতিবারই প্রথম পুরস্কার থাকে ১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক মাসে অন্ততপক্ষে ৯০ জনের কোটি টাকা জেতার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সারা মাসে ৫-৬ জনের বেশি প্রথম পুরস্কার পান না। অর্থাৎ, প্রতিদিন ৩ বার করে খেলা হলেও বেশিরভাগ সময় সারা দিনে একজনও কোটি টাকা জেতেন না। অথচ মানুষ ব্যাপকহারে টিকিট কাটে। প্রশ্ন হল এই কোটি টাকাগুলো তবে যায় কোথায়?
মাসখানেক আগে জলপাইগুড়ির ডিয়ার লটারি বিক্রেতারা অভিযোগ করেন , ইচ্ছে করে বিক্রি না হওয়া টিকিটে কোটি টাকা তুলতে ডিয়ার কর্তৃক। রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, ডিয়ার লটারি নিয়ে যাবতীয় দূর্ণীতি বিক্রি না হওয়া টিকিটেই লুকিয়ে আছে। বেশিরভাগ পুরস্কার বিক্রি না হওয়া টিকিটে দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে। এই নিয়ে বিজেপির দাবি, পিছন থেকে ডিয়ার লটারিতে নিয়ন্ত্রণ করছে তৃণমূল নেতারা। তারা এই নিয়ে ইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছে।