অভিষেক-শুভেন্দু রাজনীতির বদলে ব্যক্তি আক্রমণেই যেন মত্ত!
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এই বাংলা বিধানচন্দ্র রায় ও জ্যোতি বসু দুই প্রতিপক্ষের রাজনীতির সাক্ষী থেকেছে। যেখানে রাজনীতির ময়দানে একে অপরকে ‘সূচাগ্র মেদিনী’ ছাড়েননি। আবার পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও সৌজন্য বরাবরই বজায় থেকেছিল।
সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ও জ্যোতি বসু, বঙ্গ রাজনীতির এই দুই কিংবদন্তির মধ্যে সম্পর্ক ইতিহাসের পাতায় নিশ্চিত ঠাঁই পাবে। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় যখন মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু প্রধান বিরোধী দলনেতা, আবার জ্যোতি বসু এই সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়কে হারিয়েই মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারে বসেন।
সেই সময় আবার বিরোধী কংগ্রেসের অন্যতম দাপুটে নেতা সিদ্ধান্ত শঙ্কর রায় ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শ তো বটেই, এমনকি জরুরি অবস্থার সময় সিপিএম নেতাদের প্রতি সিদ্ধান্ত শঙ্কর রায়ের সরকার চূড়ান্ত খড়্গহস্ত থাকলেও কখনোই এই দুই ব্যারিস্টারকে ব্যক্তি আক্রমণে মেতে উঠতে দেখা যায়নি। উল্টে তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল বলে শোনা যায়।
এমনকি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন মুখ্যমন্ত্রী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বিরোধী নেত্রী, সেই উত্তাল সময়েও ব্যক্তি আক্রমণ বাংলার রাজনীতিতে প্রায় অনুপস্থিত ছিল। সিপিএমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু শুধু তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষই নয়, কখনোই কারোর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এমন উদাহরণ বের করা অসম্ভব।
‘সিপিএম করলে খুন করে দেব!’ মঙ্গলকোটে ভয়ঙ্কর হুমকি
বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর পরে বঙ্গ রাজনীতির ব্যাটন কার হাতে যাবে তা নিয়ে জোরদার লড়াই চলছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে। রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু তৃণমূল কংগ্রেসই ছিলেন।
শোনা যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই তিনি নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। এদিকে মুকুল রায় ও শুভেন্দু বিদায়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান দ্রুতগতিতে হয়। বর্তমানে তিনি আক্ষরিক অর্থেই তৃণমূল কংগ্রেসের নম্বর টু। সাংগঠনিক যাবতীয় সিদ্ধান্ত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই নেন বলে শোনা যায়।
সেই শুভেন্দু ও অভিষেক পরস্পরকে যে রাজনৈতিকভাবে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে চাইবেন না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শুভেন্দু অভিষেককে এবং অভিষেক শুভেন্দুকে আক্রমণের বিষয়বস্তু হামেশাই রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে ব্যক্তিগত জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে।
প্রবীণ যাঁরা জ্যোতি বসু-সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়দের সময়ের সাক্ষী, তাঁরা এই গোটা ঘটনায় শুধু যে বিস্মিত তা নয়, রীতিমতো হতবাক। তাঁদের অভিযোগ, ব্যক্তি আক্রমণ করতে গিয়ে রাজ্যের এই দুই হেভিওয়েট নেতা হামেশাই শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিষয়টি আর রাজনীতির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না।
আর একটা বড় সমস্যা হল, শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরস্পরকে আক্রমণ মুখে করছেন। অর্থাৎ তাঁরা কথার মাধ্যমে একে অপরকে কুপোকাত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলেরই নিচু তলার কর্মীরা নেতাদের এই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া মন্তব্যকে একেবারে হাতে-কলমে প্রয়োগ করে বসছে। তার ফলে বাংলায় রাজনৈতিক অশান্তিও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।