চার আসনেই দাপিয়ে বেড়াল তৃণমূল
লোকসভা নির্বাচনে ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার পর এবার ৪ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিরাট জয় পেল তৃণমূল। ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে ৪ আসনের মধ্যে ৩ আসন ছিল বিজেপির দখলে৷ এবার খাতায় কলমে চার আসনই এখন তৃণমূলের। বাগদা থেকে জয়লাভ করেন মধুপর্ণা ঠাকুর, রানাঘাট দক্ষিণ থেকে জয়লাভ করেন মুকুটমণি অধিকারী, মানিকতলা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন সুপ্তি পাণ্ডে, রায়গঞ্জের জয়ী প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। দলের কঠিন পরীক্ষায় জয়লাভে বেজায় খুশিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০২১ সালে জয়লাভ করেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তখন তিনি ছিলেন বিজেপির বিধায়ক। এরপর পাঁচ মাসের মাথায় অক্টোবরে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। মুকুল রায় PACর চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিলে কৃষ্ণ কল্যাণীকে খাতায় কলমে বিজেপি বিধায়ক বলে দেখিয়ে ২০২২ সালের ২ জুলাই পিএসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেন স্পিকার। তার পর থেকে ওই পদে ছিলেন তিনি। এর মধ্যে গত বছর কৃষ্ণ কল্যাণীর রায়গঞ্জের বাড়ি ও কারখানাসহ একাধিক ঠিকানায় আয়কর হানা হয়। তবে তার পর আর তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি আধিকারিকরা। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ থেকে প্রার্থী হন তিনি। পরে অবশ্য বিজেপি প্রার্থী কার্তিক পালের কাছে পরাজিত হন তিনি।
বাগদা কেন্দ্রটিও আগে ছিল বিজেপির দখলে। প্রার্থী ছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। পরে তিনিও বিজেপিতে যোগদান করেন৷ ২৪ সালে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন বিশ্বজিৎ। শান্তনু ঠাকুরের কাছে পরাজিত হন৷ বাগদার উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয় মমতাবালা ঠাকুর কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুরকে। বাংলার সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক পদে নির্বাচিত হলেন তিনি।
অন্যদিকে, রানাঘাট দক্ষিণে ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে জয়লাভ করেন মুকুটমণি অধিকারী। ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলে যোগদান করেন। রানাঘাট থেকে প্রার্থী হওয়ার পর জগন্নাথ সরকারের কাছে পরাজিত হন। ফের রানাঘাট দক্ষিণে নির্বাচন হলে জয়লাভ করেন তিনি।
সব কিছুর মধ্যে বিশেষ নজর ছিল মানিকতলা আসনটি। ২০২১ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন সাধন পাণ্ডে। তাঁর জয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন কল্যাণ চৌবে। সাধন পাণ্ডে মৃত্যুর পর আইনি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন বিধায়কহীন ছিল মানিকতলা। নির্বাচনের অনুমোদন মিলতেই তৃণমূল প্রার্থী করে সাধন জায়া সুপ্তিকে। সুপ্তি পাণ্ডের এই আসনে জয় নিয়ে বিরাট উচ্ছ্বাস কর্মীদের মধ্যে।
মুম্বই থেকে ফিরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। এক দিকে এজেন্সি, এক দিকে বিজেপি। মানুষই সব রুখে দিচ্ছেন। পুরো কৃতিত্বটাই সাধারণ মানুষের।” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা বেড়ে গেল। আমাদের আরও বেশি করে মানুষের পাশে থাকতে হবে।” ২১ জুলাই তৃণমূলের কাছে শক্তি প্রদর্শনের বড় লড়াই। তার আগে দলের এই জয় বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে তৃণমূলকে। আর এই জয় শহিদদের উৎসর্গ করা হবে জানিয়ে দিলেন দলনেত্রী৷
শুধুমাত্র বাংলা নয় দেশজুড়ে ইন্ডি জোটের ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৩ আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি আসন পেয়েছে বিজেপি। ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ১০টি আসন। মুম্বই থেকে ফেরার পথে দমদম বিমানবন্দরে মমতা বলেন, “গোটা দেশেই বিজেপি বিরোধী ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। মানুষ বিজেপিকে নিচ্ছে না।”