সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের ৫০ বছর, বিচার মেলেনি শুধু দগদগে ঘা হয়ে আছে

সাঁইবাড়ির ঘটনা কর্পূরের মতো উবে যাবে না। ‘সাঁইবাড়ি করে দেবো’ কথাগুলো কিন্তু মূল ঘটনার পরবর্তী প্রজন্ম।

পার্থ প্রতীম বিশ্বাস
রাজ্য সম্পাদক
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি

সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ড পর্যন্ত সীমারেখাটা থাকলে হয়তো আর পাঁচটা ঘটনার সঙ্গে ওই ঘটনাটাও মিশে এবং গুলিয়ে যেত।কিন্তু পরবর্তীকালে কথায় কথায় ‘সাঁইবাড়ি করে দেব’ বলার বা ওই কথা বলে হুমকি দেওয়ার ভেতর দিয়ে সাঁইবাড়ির ঘটনাটাকে বিশেষ রূপে প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।

যারা ঘটনাটা ঘটিয়ে ছিলেন তাদের ও তাদের উত্তরাধিকারদের  মাধ্যমে কার্যত বিষয়টাকে স্বীকার করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।  

আজ সেই সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের ৫০তম বর্ষ। প্রকৃত অপরাধীদের অনেকেই পরবর্তীকালে মুখোশ পরে রাজ্যপাট চালিয়েছেন এবং ‘অকাল প্রয়াণ’-এর পথে গিয়েছেন ।

ওরা হয়তো একদিন মানুষের দুর্বল স্মৃতি থেকে হারিয়েও যাবেন। কিন্তু সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ড ইতিহাসের পাতায় দগদগে ঘা হয়েই থাকবে।

আগামীদিনের রাজনীতি ও তার ছাত্রদের জন্য সেই দগদগে ঘা এক চরম শিক্ষা। মুখে নয় জীবন দিয়ে গনতন্ত্রকে রক্ষা করার পাঠ নিতে যেমন হবে, তেমনই তার প্রয়োগও চাই।

সাঁইবাড়ির ঘটনা যদি একজন মানুষকেও সেই শিক্ষা দেয় তাহলেও সেদিন শহীদ হওয়া মানুষগুলোর আত্মা শান্তি পাবে।

জানি, কেউ কেউ বিচার ব্যবস্থা, তদন্ত কমিশন ইত্যাদি শব্দগুলো ও তার অপপ্রয়োগের কথা তুলে পুরো বিষয়টাকে ধামা চাপা দিতে চাইবেন, মানুষের নজর ঘোরাতে চাইবেন।

‘আমরা-ওরার দেওয়াল ভাঙার গল্প’…

কিন্তু তার ফলে সাঁইবাড়ির ঘটনা কর্পূরের মতো উবে যাবে না। ‘সাঁইবাড়ি করে দেবো’ কথাগুলো কিন্তু মূল ঘটনার পরবর্তী প্রজন্ম।

পিতা না থাকলে সন্তানের জন্ম হয় না। পিতার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে নিজেকে প্রমাণ করাটাও অসম্ভব। সত্য সবসময় সুন্দরই হয়। তাকে স্বীকার করার মধ্য দিয়ে সেই সুন্দরকে ছোঁয়া যায়, অনুভব করা যায়।

রঘু  ডাকাতের ছেলেকেও রঘু ডাকাত হতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সে নামীদামী ডাক্তারও হতে পারে। কিন্তু সে যে রঘু ডাকাতের ছেলে সেটাকে কি ভোলানো সম্ভব?

ফলে হাজার চেষ্টা করেও সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের নৃশংসতাকে ভোলানো যাবে না। ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাঁইবাড়িতে হামলা চালায় সিপিএম কর্মীরা।

সাঁই পরিবারের দুই ছেলে প্রণব সাঁই ও মলয় সাঁইকে মেরে তাঁদের রক্ত দিয়ে বৃদ্ধা মা’কে ভাত মেখে খেতে বাধ্য করার মতো নৃশংস কান্ড ঘটায় তারা।

বাংলার গর্ব মমতা’য় কখনই সিলমোহর দেবে না বাঙালি

বাড়ির বড় ছেলে নবকুমার সাঁইয়ের চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। সবশেষে প্রণব ও মলয়ের দেহ সহ বাড়িটি পুড়িয়ে দেয় সিপিএম কর্মীরা।

একবছরের মধ্যেই মারা যায় অ্যাসিড আক্রান্ত নবকুমার। সিপিএম নেতা নিরুপম সেনের নেতৃত্বে নৃশংস এই আক্রমণ বলে অভিযোগও ওঠে সেসময়।

কিন্তু হাইকোর্ট থেকে এই মামলার নথিপত্র নিখোঁজ হয়ে যায়।পরবর্তীকালে রাজ্যের মন্ত্রী হন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিরুপম সেন।

বেশ কিছুদিন আগে তিনি প্রয়াতও হয়েছেন। ওদিকে বিচার মেলেনি সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের। ইতিহাসের দগদগে ঘা হয়ে রয়েছে সাঁইবাড়ি।

প্রতিবেদনে প্রকাশিত বক্তব্য সম্পূর্ণভাবেই লেখকের ব্যক্তিগত। কোনোভাবেই #TheQuiry কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। 

সম্পর্কিত পোস্ট