করোনা ভাইরাস : গুজব ও বিভ্রান্তিতে ধ্বংসের মুখে দেশের পোল্ট্রি
দ্য কোয়ারি ডেস্কঃ করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ও বিভ্রান্তির জেরে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র পোল্ট্রি এখন ধ্বংসের মুখে। এর ফলে জীবিকা হারাতে বসেছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। অথচ কৃষিক্ষেত্রের এই শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধির হার অনেক দেশকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
২০১৭-১৮ তে এর বৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, ব্রাজিল ও চীনে এর বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ও ২.১ শতাংশ। আবার বিশ্বের মোট ডিম উৎপাদনের সাত শতাংশ উৎপাদন করে দিল্লি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির পাঁচ শতাংশ হয় এদেশে।
২০১৫-১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী এর মূল্য প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে এই সম্ভাবনাময় উৎপাদন ক্ষেত্র মৃত্যুর পথে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ জীবিকা ধ্বংস হতে বসেছে।
বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতেই দ্রুত বেশ কিছু ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সব থেকে বড় মিথ্যা তথ্য হল মাংস এবং হাঁস-মুরগি থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই দ্রুত চাহিদা কমে যায় মুরগির মাংসের। একধাক্কায় মুরগির মাংসের দাম ১০-১৫ টাকা কেজিতে নেমে যায়।
আরও পড়ুনঃ করোনা প্রাদুর্ভাব : সরকারি নির্দেশিকা মেনেই সতর্ক শাহিনবাগ, অব্যাহত বিক্ষোভ অবস্থান
অথচ, প্রতি কেজি উৎপাদনে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। জানুয়ারিতে যেখানে পাইকারি মূল্য ছিল ৯০ টাকা, সেখানে মার্চে পাইকারি মূল্য হয় ৫০ টাকা। গভীর সঙ্কটে পড়েন পোল্ট্রি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত খামার মালিক, খামার কর্মী, ফিড সাপ্লায়ার, ভেটেরিনারি চিকিৎসক সহ মুরগির মাংস বিক্রেতারা।
সূত্রের খবর, এর ফলে বেশ কয়েকজন মুরগি খামার মালিক আত্মহত্যা করেছেন। বহু জায়গায় ডিম ও জীবন্ত মুরগি কবর দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সরকারের তেমন উদ্যোগ না থাকলেও স্বাধীন প্রচেষ্টায় বিকাশ ঘটছিল গ্রামীণ এই ক্ষেত্রের। প্রান্তিক কৃষিজীবী মানুষ, মুরগির খাবারের উৎপাদক, ভেটেরিনারি স্বাস্থ্য কর্মীদের সমন্বয়ে এই ক্ষেত্রের স্বাভাবিক বিকাশে ৪০ লক্ষের থেকেও বেশি গ্রামীণ মানুষ উপার্জনে সক্ষম হয়ে উঠেছিলেন।
পাশাপাশি, মুরগির মাংসের মাধ্যমে সস্তায় প্রোটিনযুক্ত খাবারও পাচ্ছিলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজবের জেরে সেই বাজার মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বারবার আবেদন জানানোর পরও এবং বিভিন্ন রাজ্যে মন্ত্রীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘চিকেন পার্টি’র আয়োজন করার পরও গুজবের শিকার মানুষের আতঙ্ক কাটেনি।
অন্যদিকে, ন্যাশনাল এগ কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং পোল্ট্রি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এই গুজব সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দেশের বৃহত্তম গ্রামীণ শিল্প এক গভীর সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়েছে।