EXCLUSIVE STORY: নেতা থেকে জননেতা শুভেন্দু অধিকারী, পর্ব-৩
||অনুপম কাঞ্জিলাল, সাংবাদিক||
শুভেন্দু অধিকারী যে ভাবে নেতা থেকে হয়ে উঠলেন জননেতা..আজ তৃতীয় পর্ব
২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পর নন্দীগ্রামই হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর নন্দীগ্রাম প্রতিরোধকে সামনে রেখেই আন্দোলন শুরু করেন। সেটাই স্বাভাবিক তিনিই প্রধান নেত্রী।
তবে আন্দোলনটাকে গোটা রাজ্যের কাছে পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হিসেবে তুলে ধরার জন্য স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে হয় শুভেন্দু অধিকারীকেই মনে রাখবেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠক হিসেবে সবচেয়ে বেশী ভরসা করেন শুভেন্দুকেই। তাই যে কোন কঠিন কাজে তিনি শুভেন্দুকেই সামনে নিয়ে আসেন। নেত্রীকে যোগ্য সঙ্গত দিতে কোন কার্পন্য নেই শুভেন্দুরও। মুর্শিদাবাদ থেকে মালদা দলীয় সংগঠন বাড়াতে শুভেন্দুই ভরসা।
শুভেন্দুর রাজনীতির একটা নিজস্ব ঘরানা আছে।লাগাতার জনসংযোগ সেই ঘরানার প্রথম কথা। শুভেন্দু বিশ্বাস করেন, প্রচলিত রাজনীতি তাদের কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতাকে মানুষের স্বার্থে কিছুটা হলেও ব্যবহার করে হবে। শুধু নিজের জন্য সব করলে মানুষ আস্থা পাবে না।
শুভেন্দুর রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ পর্যালোচনা করতে বসলে বোঝা যায় গভীর ও কঠিন তত্ত্বকথার আদর্শ তাড়িত রাজনীতি নয়। শুভেন্দুর রাজনীতি মানুষের রোজকার জীবন-যাপনের সঙ্গেই মিশে থাকে।
বড় বড় কথার ফানুষ নয়, মানুষের ছোট ছোট সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েই তাদের আস্থা অর্জন করে চলেছেন শুভেন্দু।
পরিবহন দফতরের দায়িত্ব নিয়ে তিনি সরকারি বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছেন। একই সঙ্গে সরকারি চাকরির অবকাশ তৈরির দীর্ঘ সূত্রিতা কাটাতে সরকারি বাসে ক্যাজুয়াল কর্মী নিয়গ করে চলেছেন ঢালাও গতিতে।
কেউ কেউ বলবেন এটা তো আসলে সরকারি নিরাপদ চাকরি তুলে দেওয়ার অভিপ্রায়।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE STORY: নেতা থেকে জননেতা শুভেন্দু অধিকারী,পর্ব-২
শুভেন্দুর যুক্তি,সরকারি চাকরির অবকাশ তৈরির জন্য অনেকটা সময় বসে থাকার চেয়ে কাজ শুরু করে দেওয়াটাই তো যুক্তিযুক্ত। পেট তো ক্ষিদে পেলেই জানান দেবে। সে তো আর সরকারি নিয়মকানুম মেনে বসে থাকবে না।
সহজ যুক্তি তবে একেবারে ফেলে দেওয়ার মত নয়।বস্তুত মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করা শুভেন্দু জানেন সরকারের লাল ফিঁতের বাঁধন কারোর কারোর কাছে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
শুভেন্দু নিজেকে কলকাতার নেতা নয় বলতে গর্ব অনুভব করেন। এর কারণ কিন্তু এই নয় যে, তিনি কাউকে অবজ্ঞা বা অপমান করতে চান।
এর কারণ তিনি বিস্তির্ণ গ্রামের মানুষকে এই বার্তা দিতে চান যে তিনি তাদের লোক।গাঁইয়া শব্দটাকে অপমানজনক নয় বরং সম্মানের সূচক বলে মনে করেন শুভেন্দু। তাই তিনি নিজেকে গ্রামের নেতা বলেন।
চমত্কার বক্তব্য রাখেন তবে একেবারে নিজস্ব ঢঙে। মেদিনীপুরের আঞ্চলিক অনুসঙ্গ বজায় রেখে। অযথা কটু কথা বলেন না। কাউকে বিনা কারণে অসম্মান করেন না। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসেন। লজিক মেনে কথা বলেন।
তাই যখন কোন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন অন্য দল ভাঙিয়ে দল বাড়াচ্ছেন কেন?তিনি কোন রাখঢাক না রেখেই বলে দেন,অন্য দল ভাঙিয়ে দল বড় করব না তো কী করবো? আমার তো আর মানুষ পয়দা করার ক্ষমতা নেই। তাই দল বড় করতে হলে অন্যদল থেকেই লোক আনতে হবে।
এমন অকপটে সত্য কথা বলার মুরোদ ধরেন বলেই তিনি মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি চলে যেতে পারেন।মানুষ তাকে দোষ গুণের মিশেলে তৈরি নেতা বলে মানেন।তিনি মানুষের কাছ থেকেই শেখেন,মানুষের সঙ্গেই থাকেন।