“আমিও মোমবাতি জ্বালাবো…”
পার্থ প্রতিম বিশ্বাস
রাজ্য সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি
প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে আমি একজন আদ্যান্ত কংগ্রেসী। দলীয় নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে গান্ধীবাদ ও সমাজবাদী নীতিই আমার কাছে সব। সমাজবাদ আমার জীবনে সেই শিক্ষা, যা প্রতিনিয়ত অনুশীলন ও প্রয়োগ করতে হয়।
আমার হৃদয়ে মধ্যযুগীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। আমি তাই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা মেনে বাড়ির সব আলো নিভিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালাবো, কারণ সেটা আমার মহান দেশ আমার মাতৃভূমির প্রধানমন্ত্রীর আবেদন।
– হ্যাঁ আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো, যেদিন উনি এবং ওনার দল এটা ভাবা বন্ধ করবেন যে উনি শুধু হিন্দুদের প্রধানমন্ত্রী। যেদিন উনি নিজেকে ভারতের সকল হিন্দু -মুসলিম – বৌদ্ধ – খ্রিষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষেরও প্রধানমন্ত্রী ভাববেন, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের বুকে যেদিন উনি ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতি বন্ধ করবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– পাকিস্তানে আক্রান্ত পাকিস্তানী সংখ্যালঘু হিন্দু ও বাংলাদেশে আক্রান্ত সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিয়ে রাজনীতি না করে যেদিন উনি নিজের দলের কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলিম- শিখ – বৌদ্ধ – খ্রিষ্টানদের নিয়ে ভাববেন, সেদিন আমি মোমবাতি জ্বালাবো।
আরও পড়ুনঃ ছাগল দিয়ে লাঙল চাষ হয় না, থালা বাজাও মোমবাতি জ্বালাও
– ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে এটা মানুষকে না বুঝিয়ে যেদিন উনি চিন – রাশিয়ার সমতুল্য উন্নত ও বিজ্ঞান নির্ভর দেশ ভারতকে বানাতে পারবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত সংবাদ মাধ্যমকে কিনে না নিয়ে, কন্ঠরোধ না করে, ভয় না দেখিয়ে, বিরোধীদের প্রচার করতে দিয়ে উনি যখন সংবাদ মাধ্যমকে স্বাধীন ভাবে চলতে দেবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন উনি প্রভাব খাটিয়ে কুলদীপ সিং সেঙ্গারের মত ধর্ষককে না বাঁচিয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে পারবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন উনি নিজের বৃদ্ধা মাকে এটিএম লাইনে দাঁড় করিয়ে নিজের মাকে নিয়ে রাজনীতি করে পৃথিবীর সকল মহিলা ও মাকে অপমান করার ভুলটা স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধীকে গুলি করে হত্যা করা নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমি না বলে দেশদ্রোহী হিসেবে গণ্য করে ওই দেশদ্রোহীর ছবিতে যেদিন থুতু ফেলবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়া সাভারকর এবং স্বার্থপর রাজনীতির পুরধা নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে দেশপ্রেমী বানিয়ে ভগৎ সিং – সুকদেব – রাজগুরুদের অপমান না করে যেদিন সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদদের ছবি নিজেদের পার্টি অফিস থেকে ছুড়ে ফেলবেন আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন গো – মাংস খাওয়ার বিরোধিতা করার আগে উনি ভারতকে গো-মাংস রপ্তানিতে প্রথম স্থান থেকে নামিয়ে ১০০ নম্বরে আনতে পারবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন তিনি চিনকে তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে বল্লভভাই প্যাটেলের মুর্তি বানানো ভুল হয়েছিলো স্বীকার করবেন এবং নতুন করে অন্য কারও মূতি বা মন্দির না বানিয়ে প্রয়োজনীয় স্কুল হাসপাতাল শিল্প কারখানা বানাবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– কংগ্রেস সরকার এত বছর কী করেছে? এই প্রশ্ন না তুলে যেদিন উনি কংগ্রেসী শাসনে বানানো হাসপাতালগুলোকে বেসরকারী বা রুগ্ন করে না দিয়ে, ওই সময়ে সৃষ্ট দেশের নামীদামী সম্পদগুলোকে বিক্রি না করে, নতুন করে আরও কিছু সৃষ্টি করবেন, সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– চোর, গুণ্ডা, ধর্ষক, খুনীদের টিকিট দিয়ে সংসদের মত পবিত্র স্থানে না ঢুকিয়ে যেদিন উনি শিক্ষিত সাংসদ চাইবেন সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন উনি শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞানে অধিক অর্থ ব্যয় করে দেশকে সেরা বানাবেন ও দেশের প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর থেকে অহেতুক করের বোঝা তুলে নেবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন দেশের প্রতিটা গরীবের পেটে ভাত আর নিরক্ষরকে শিক্ষা দিতে অগ্রনী হবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন লকডাউনের ফলে হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরতে চাওয়া মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের পাশে যেদিন উনি দাঁড়াবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
আরও পড়ুনঃ কাল রাত ৯টায় শক্তির প্রদর্শন -“৯” এর রহস্য ভেদে হাজার প্রশ্ন – উত্তর অজানা
– বিজ্ঞানের দুনিয়ায় দেশবাসীকে থালা, ঘটি, বাটি বাজাতে না বলে ও করোনা রুখতে ঘরের আলো না নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে কুসংস্কারের অন্ধকারে ঠেলে না দিয়ে যেদিন উনি সবার হাতে স্যানিটাইজার, মুখে মাস্ক তুলে দিতে পারবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন উনি এশিয়ার নোবেল নামে খ্যাত ম্যাগসাইসাই পুরস্কার জয়ী রবীশ কুমারকে ইন্টারভিউ দেওয়ার সাহস দেখাবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন উনি সারদা, নারদা ও রোজভ্যালির সাথে যুক্ত মানুষদের জেলের ঘানি টানাতে পারবেন, আমি সেদিন মোমবাতি জ্বালাবো।
– যেদিন উনি দেশের সমস্ত গরীব মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ ও আলো পৌঁছে দিতে রাজনীতি না করে বাস্তবিক আগ্রহ দেখাবেন, সেদিন আমি আমার গান্ধীবাদ সরিয়ে রেখে মোদীজীর নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে তার নির্দেশ মতো ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালাবো, কথা দিলাম…