করোনা মোকাবিলায় ত্রাতা অরুপ, নিজ উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিলি

নয়ন রায়

শুরু হয়েছে লকডাউনের দ্বিতীয় অধ্যায়। চলবে ৩ মে পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ের মত এবারেও বারবার সকল দেশবাসীকে জরুরী কাজ ছাড়া বাইরে বেরোতে বারংবার নিষেধ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে সাংবাদিকতা যেহেতু আমার পেশা, তাই পেশার টানে এবং বলা ভাল এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রত্যেকটি কোনায় থাকা দিন আনা-দিন দিন-খাওয়া মানুষগুলো কেমন আছেন সেটা প্রকাশ্যে আনাই মূলত আমার প্রধান দায়িত্ব বলে মনে হয়েছে।

এক্ষেত্রে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নিরপেক্ষতা। যদি সরকারি সাহায্য সমস্ত প্রান্তিক স্তরের মানুষেরা পেয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, তাহলে সেটা সরকারের সাফল্য। আর যদি একজন মানুষও এই মুহুর্তে অনাহারে দিনযাপন করেন, তাহলে সেই দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।

এইসব ভাবনা মাথায় নিয়েই নিজের দু’চাকা নিয়ে রওনা দিলাম বাঁকুড়ার উদ্দেশে। আরামবাগ হয়ে জয়রামবাটি কামারপুকুর হয়ে ওন্দার দিকে এগোচ্ছি। দুপাশে জয়পুরের ঘন জঙ্গল। গন্ধেশ্বরী নদী ব্রিজ পার হয়ে সতীঘাট। সুকান্ত মূর্তির পাশেই বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেন্টর অরুপ চক্রবর্তীর বাড়ি।

বাড়ির বাইরে বিরাট প্যান্ডেলের মত করা। বহু মানুষ বসে আছেন সেখানে ত্রানের আশায়। অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই।

আরও পড়ুনঃ গুগলে নেই, বাস্তবে আছে, শিবদা কে করোনা মুক্ত করাই চ্যালেঞ্জ তাপস বাবুর

জেলার এই প্রান্তিক মানুষগুলির জন্য অরুপ বাবুর এই চিন্তা দেখে সত্যিই মন ভরে গেল। চাল, ডাল, তেল, আলু, সবজি থেকে শুরু করে বাদ নেই কোনো কিছুই।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেকটি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে। একে একে ত্রান সামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন হাসি মুখে। পুরো বিষয়টি দাঁড়িয়ে থেকে পরিচালনা করছেন অরুপ বাবু নিজে।

জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে এত বড় কাজ একা হাতে সামলাচ্ছেন?

একদম সরাসরি উত্তর দিলেন, “ যদি মুখ্যমন্ত্রী এই পরিস্থিতিতে সোজা ব্যাট করতে পারেন, তাহলে আমি কেন পারব না? “

পাশাপাশি রেশন নিয়ে দুর্নীতি যে বাঁকুড়া জেলাতেও হচ্ছে তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তিনি। সমস্ত রেশন ডিলারদের সতর্কবার্তাও দিলেন।

তাঁর কথায় বাঁকুড়া জেলার মূল সমস্যা হল কয়েকটি ব্লক একদম পিছিয়ে পড়েছে। এরপর লকডাউন মিটলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। তখন সরকারকেই ওই সমস্ত এলাকা গুলির জন্য বাড়তি নজর দিতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন বলেও জানান। পাশাপাশি বাঁকুড়া জেলার অবসার্ভার শুভেন্দু অধিকারীর সহযোগীতারও ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি। বৈশাখ মাস পড়ে গিয়েছে। ক্রমশ চোখ রাঙাচ্ছে সূ্র্য। এমতাবস্থায় পানীয় জলের সমস্যা নেই বলেই জানালেন তিনি।

তবে সবকিছুর মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে সাংসদ সৌমিত্র খাঁনের ভূমিকা নিয়ে। তবে সাংসদের কাজে যে জেলাবাসি খুশি নন তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন অরুপ বাবু।

লকডাউনের পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি যে তৈরী রয়েছেন তাও জানালেন এদিন। সমস্ত মানুষের কাছে এদিন অনুরোধ করে তিনি জানালেন, এই কঠিন লড়াইয়ের সময় কেউ রাজনীতি করবেন না। মানুষের পাশে থাকুন।

দিন গড়িয়ে বিকেল। ফিরতে হবে বর্ধমান। অরূপ দার সঙ্গে কথা বলে জয়পুর জঙ্গলের বুক চিড়ে রওনা হলাম বর্ধমানের উদ্দেশে। এভাবেও যে কাজ করা যায়, নিজের চোখে না দেখলে হয়ত বিশ্বাসই করতাম না।

সম্পর্কিত পোস্ট