সমাজ সেবা যাদের হৃদয়ে…করোনা যুদ্ধে মানবিক মুখ
ঋত্বিক দে
উলুবেড়িয়ার অতনু করাতী, রঞ্জন বেলা, সোমনাথ বোস,কুন্তল,সপ্তর্ষী, তানিয়া – না ওরা কেউ আর্থিক দিক থেকে সম্পন্ন বাড়ির ছেলে-মেয়ে নয়। বছর পঁচিশ-ছাব্বিশ এর এই ছেলে-মেয়ে গুলো কোন রকমে বেঁচে বর্তে থাকার মতো উপার্জন করে। তাও বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লক ডাউনের প্রভাবে উপার্জন ও বন্ধ।
গত বছর পুজার সময় এদের দেখা গিয়েছিল নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কয়েক হাজার পোশাক কিনে দরিদ্র আবালবৃদ্ধবনিতাদের বিতরণ করতে।
তখন তাদের এই কাজ করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করায় উত্তর দিয়েছিল,”ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করে বাবা-মা তখন। একটা নতুন পোশাক কিনে দিত, তার গন্ধ আর আনন্দটা আজ ও ভুলতে পারিনি। আমাদের তখনের সেই আনন্দকে ধরে রাখতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের সংকটকালে এরা আবার ও পথে নেমেছে।৬ নং জাতীয় সড়ক দিয়ে পথ চলতে গিয়ে পরিযায়ী মানুষদের কষ্ট দেখে এদের মন বিচলিত হয়ে ওঠে।
এদের জন্য কিছু করার চিন্তা ভাবনা আসে।সকলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিজেদের সাধ্যমত কিছু খাবার রান্না করে সঙ্গে পানীয় জলের বোতল,হাত ধোয়ার সামগ্ৰী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে মুম্বাই রোগ ধরে।
স্ক্রিনে নয়, পথে নেমেই কাজ করা বেশি পছন্দের বিরোধীদের জবাব মুখ্যমন্ত্রীর
এদের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা দেখে বহু স্থানীয় মানুষ এদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এদের সংস্থা”আনন্দধারা”।
সংস্থার সদস্য রঞ্জন বেলা বলেন, আমরা প্রথমে আমাদের ক্ষুদ্র সাহায্য নিয়ে পথে নেমে ছিলাম।এখন বহু মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আমাদের লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খন্ড, ওড়িশ্যার বহু শ্রমিক মুম্বাই রোড ধরে যাতায়াত করছেন। জাতীয় সড়কের দুই ধারে দোকান পাট বন্ধ থাকায় জরুরী পরিষেবায় যুক্ত থাকা গাড়ির চালকরা আহার ও পানীয় জল পাচ্ছেন না।
এছাড়াও বহু ভবঘুরে, ভিখারী কুলগাছিয়া,বীরশিবপুর প্রভৃতি স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া মানুষ অভুক্ত আছেন। আমরা তাদেরকে মধ্যাহ্নের আহার ও রাতের জন্য ঝুরিভাজা,মুড়ি, একটি বিস্কুটের প্যাকেট ও পানীয় জলের বোতলের ব্যবস্থা করেছি। আমরা সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে এদের প্রত্যেকদিন সাহায্য করছি।
সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা অতনু করাতী জানালেন, করোনা পরিস্থিতি তে যে ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে ত্রাণের কাজ করার প্রয়োজন সে বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও এলাকার সচেতন মানুষ,যুবক-যুবতী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আগামীদিনে আরও বেশী সংখ্যক মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।লক গাউন উঠে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের এই দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করব।