ব্রিটেন থেকে ধার করা করোনা প্যাকেজেও দিশা দেখাতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী
সর্নিকা দত্ত
নিন্দুকেরা বলেন তিনি অনুকরনের মাস্টার। পুরনো জিনিসে মোরক পরিয়ে নতুন বলে চালিয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এবারও কি তাই করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? অন্তত তাঁর সমালোচকরা তো মঙ্গলবার ঘোষিত করোনা প্যাকেজে সেই ছায়াই দেখছে।
আমাদের দেশ ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। তাই আমাদের আইন থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ভাবনার ছাপ পাওয়া যায়। এবার মোদির ঘোষিত কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার করোনা প্যাকেজেও ব্রিটেনের ছায়া দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
কাকতালীয় কিনা বিষয়টা সময় বলবে তবে তথ্য বলছে মোদির ঘোষণা সঙ্গে বরিস জনসন সরকারের সিদ্ধান্তের অনেক মিল রয়েছে।
করোনার সংক্রমণ প্রায় ধসিয়ে দিয়েছে দেশের অর্থনীতিকে। ছেট-বড় ব্যবসা বন্ধ, খুচরো ব্যবসায়ীরাও দোকান খুলতে পারছেন না। শ্রমিকদের কাজ বন্ধ। এরকম এক অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে দিশা দেখাতে মঙ্গলবার ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ।
কিন্তু কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, ওই মডেল ব্রিটেন থেকে ধার করা। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গত মার্চ মাসে এরকমই এক আর্থিক মডেলের কথা ঘোষণা করেছিল বরিস জনসন সরকার।
তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে ব্রিটেন সরকার ৩০ বিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে, ৩৩০ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যবসায়ীক লোন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। বিশেষজ্ঞমহল এর ব্যাখ্যা, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবায়ীদের সাহায্য প্রধানমন্ত্রী যে দাওয়াই দিয়েছেন তা ব্রিটেনের দেখানো পথেই।
একেই তো কিছুই দেওয়া হল না, উল্টে মানুষকে কেন বিভ্রান্ত করা হচ্ছে? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন, তাঁর ঘোষিত প্যাকেজে জোর দেওয়া হচ্ছে ল্যান্ড, লেবার, লিক্যুডিটির ওপরে। এতে উপকৃত হবেন ছোট ব্যবসায়ী, শ্রমিক, চাষীরা। পরিযায়ী শ্রমিকরাও এতে উপকৃত হবেন। কটেজ ইন্ডাস্ট্রি, এমএসএমই, মধ্যবিত্তরাও এর সুফল ভোগ করবেন। এখানেও ব্রিটেনের সব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর এর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী যে আত্মনির্ভরতার কথা বলেছিলেন তা কি আদতে ব্রিটেন থেকে ধার করা?
ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রের ছাপ দীর্ঘদিনের। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক দেশের মানুষকে তা মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করছেন তা কি দেশের মানুষ আদেও ভালোভাবে নেবে? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
এদিকে আজই বিস্তারিত প্যাকেজ ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজের মধ্যে ১.৭ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজের ঘোষণা মার্চেই করা হয়েছিল। বাকি বাকিটা ঘোষণা হল এদিন। এই ঘোষণার মধ্যে ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং কুটির শিল্পের জন্য ছয় দফা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
যদিও এদিন সীতারামনের ঘোষণার পর তৃণমূল একে ‘অশ্বডিম্ব’ বলে কটাক্ষ করেছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছেন, জিডিপির ১০ শতাংশ বলে প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এদিন বাস্তবে দেখা গেল এই প্যাকেজ আদতে জিডিপির ২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজকে আই ওয়াশ বলে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ মোদিজীর প্যাকেজ থেকে কোন সুবিধাই পাবেন না। এই অবস্থায় রাজ্যগুলি তার কাছে আর্থিক সাহায্যের দাবি জানিয়েছিল। সে বিষয়েও কোন দিশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, এমনকি এই দিনের ঘোষণায় পরিকাঠামো ক্ষেত্র, বিশেষ করে স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা করে কোনো ঘোষণা করা হয়নি। কাজেই মোদিজীর প্যাকেজ আসলে বিগ জিরো।