নোটবন্দী-জিএসটি- মেট্রোয় ভাঙনের পর করোনা, কবে স্বাভাবিক ব্যবসায় ফিরবে জানে না স্বর্ণশিল্পের আতুঁরঘর বউবাজার
সর্নিকা দত্ত
সোনা বাঙালির কাছে বরাবরই খুব প্রিয়। বিয়ে বাড়ি হোক বা যে কোনও অনুষ্ঠান সোনার জুড়ি মেলা ভার। অথচ করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে এর জনপ্রিয়তায়। বৈশখের এই ভরা বিয়ের মরশুমেও দেখা নেই ক্রেতার। আর আশঙ্কার কালো মেঘ তাঁদের স্বর্ণ বিক্রতা থেকে শুরু করে বউবাজারের সোনাপট্টিতে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বর্ণ এবং অলঙ্কার শিল্পে ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা আশার আলো দেখছে না রাজ্যের বৃহত্তম অলঙ্কার হাব বউবাজার। করোনার থাবার কারণে বউবাজার এখন রেড জোন।
মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ, প্রতিটি গলি যেখানে কোথাও বাঁশ আবার পুলিশের ব্যারিকেট দিয়ে সিল, সেখানে দোকান খুলবে কে? বিক্রিবাটা করবেন কারা? কিনতেই বা আসবেন কে? আর সব থেকে বড় কথা, গয়না বানাবেন কে?
যাঁরা মনিকার বা স্বর্ণকার, তাঁরাই তো বেশিরভাগ ভিন রাজ্যের বা কেউ কেউ অবার ভিন জেলার। তাঁদের বেশিরভাগই এখন এখানে নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের ঘর থেকে বেরোলেই পুলিশ ধরছে।
আজ বৃহস্পতিবার বৈশাখ মাসের শেষ দিন। পাশাপাশি ছিল বিয়ের মাস। গড়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বর্ণ শিল্পকে বিয়ের মরশুম সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো কোটি টাকার ব্যাবসা হয়। এবার বাংলা বছরের শুরুতেই এই অঙ্কটা নিটোল শূন্য। ২০ হাজার স্বর্ণকার বেকার। শুধু বউবাজারেই বন্ধ ৪৭৬ টি গয়নার শোরুম।
করোনা আবহঃ মানবিকতা না প্রচার ,কে আগে ??
পাইকার, যাঁরা দোকান খুলে ব্যাবসা করেন না, সরাসরি ক্রেতার থেকে অর্ডার নিয়ে, স্বর্ণকারকে দিয়ে গয়না গড়িয়ে আবার ক্রেতার কাছেই পৌছে দেন, তাঁদের সংখ্যা আড়াই হাজার। পশ্চিমবঙ্গে গড়ে প্রতিদিন দুশো কিলো সোনার গহনা কেনাবেচা হয় এখানে।
বুধবার বাজারে ১০ গ্রাম সোনার দাম ৪৫ হাজার টাকা। তার মানে ১ কিলো সোনার দাম ৪৫ লক্ষ টাকা। এটাকে ২০০ দিয়ে গুন করলে যা হয়, সেই টার্নওভার বন্ধ রয়েছে টানা ৪৯ দিন। এবার সংখ্যাটা ভেবে দেখুন!
এদিন বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সম্পাদক সুব্রত কর বলেন, করোনা বউবাজারের স্বর্ণ ব্যবসাকে একদম শেষ করে দিয়ে গিয়েছে। কবে আবার আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব বলতে পারছি না। সোনা কারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নয়। প্রশাধনের অঙ্গ।
লকডাউন উঠে গেলেও মানুষের হাতে সোনা কেনার জন্য পয়সা থাকবে না। ফলে কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না।
প্রথমে নোটবন্দী, এরপর জিএসটি, তারপর মেট্রো প্রকল্পে ধাক্কা খেয়ে এমনিতেই ধুঁকছিল বউবাজার। করে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যাবে ভাবতেও পারা যাচ্ছে না।