শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে রেলের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী,চাইলেন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে পাঠানো নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের ভূমিকায় রাজনীতি দেখছেন তিনি।

তাঁর মতে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অন্ধকারে রেখে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে পাঠানো হয়নি, একইভাবে অন্ধকারে রাখা হয়েছে মহারাষ্ট্র সরকারকেও। আর সে কারণেই এতে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন গোটা বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা না বলেই মহারাষ্ট্র থেকে পরপর ট্রেন পাঠানো হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা আসার পর রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তাই রাজ্য চেয়েছিল বিশেষ পরিকল্পনা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের আনতে। কিন্তু রেল রাজ্যের কথা শুনল না।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, সংক্রমণ রুখতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। বুধবার রাতের মধ্যেই জেলায়-জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ম্যানেজমেন্টের জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, চেন্নাই-এই পাঁচ রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকে। তার জন্য স্কুলগুলি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পরিযায়ী শ্রমিকরা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন থাকার পর করোনা পরীক্ষা করা হবে, সেই পরীক্ষায় পাশ করলেই বাড়ি ফিরতে পারবেন ফিরতে পারবেন তারা। একইভাবে অন্য রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও কোন লক্ষণ থাকলে তাঁকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যেতে হবে। অথবা ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এদিন নবান্নে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতার রাস্তায় আজ থেকেই নামল অটো, ফুটপাতের দোকান খোলার কথা থাকলেও আমফানের কারণে ব্যাহত পরিষেবা

তাঁর কথায়, স্রেফ ভুল পরিকল্পনা ও ভ্রান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য সারা দেশে করোনা ছড়াচ্ছে। রেল রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ইচ্ছামতো পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি মহারাষ্ট্রের কথাও তুলে ধরেন।

বলেন, সেখান থেকে একসঙ্গে ৪০টি ট্রেন পাঠানো হচ্ছে। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাই করা হয়নি।আমি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে কথা এ নিয়ে কথা বলেছি। তিনিও জানান এ নিয়ে কেন্দ্র সরকার তাঁদের সঙ্গে কথাই বলেনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাকে পলিটিক্যালি ডিস্টার্ব করতে এগুলি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মর্জি মতো আপনারা এসব করছেন, বুঝতে পারছেন না এত লক্ষ মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই।

তিনি আরো বলেন এত লক্ষ মানুষকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইন করার ক্ষমতা তাদের (কেন্দ্রের) আছে কি? আমি তো আগেই বলেছিলাম, প্রয়োজনে আপনারাই গোটা বিষয়টা টেককেয়ার করুন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আমি অমিত শাহকে বলেছিলাম, এতো টিম পাঠাচ্ছেন পাঠান। আপনার যদি মনে হয় আমার সরকার পারছে না, আপনি নিজে দায়িত্ব নিন না। আপনি করোনাটাকে সামলান। আমার কোনও আপত্তি নেই।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তবে হ্যাঁ, আমি তাঁকে থ্যাঙ্কস জানাচ্ছি। উনি এখানে প্রেজেন্ট নেই। তাও বলছি, উনি বলেছিলেন, না না তেমন তো কিছুই হয়নি। সরকার ভেঙে দেব কী করে?

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ,আমাকে রাজনৈতিকভাবে সমস্যা ফেলতে গিয়ে বাংলার সর্বনাশ করা হচ্ছে। এটা মানুষ মেনে নেবে না।

এদিন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে,  মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, চেন্নাই থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হবে সেখানে পরিবার থেকে এসে তাঁদের খাবার দিতে পারে। আর যাদের সেই পরিস্থিতি নেই, তাঁদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে রান্না করে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের ডাল, ভাত খাওয়াব। রাজ্যের হাতে মাছ, মাংস খাওয়ানোর মতো তো টাকা নেই। যেদিন হবে সেদিন আবার খাওয়াবো। ১৪ দিন তাঁদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারপর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট