আপার প্রাইমারীঃ ৭ বছর পরেও কাটল না নিয়োগ জট, প্রশ্নের মুখে চাকরীপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ

কথায় আছে ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’। সেই স্লোগানকে সামনে রেখেই এদিন তাদের স্লোগান হয়ে ওঠে ‘একটি আপার প্রাইমারি চাকরি একটি পরিবারের প্রাণ’৷ শুক্রবার ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে ১০ জুন পর্যন্ত৷

সহেলী চক্রবর্তী

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখার বার্তাও দেন এদিন।

রাজ্যের সর্বত্রই পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা লেন্স বন্দী হয়েছে। তবে গতানুগতিক বিষয় থেকে বেরিয়ে এসে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অভিনব একটি কর্মসূচী গ্রহণ করতে দেখা গেল আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চকে। যার নাম “আপার প্রাইমারী”।

কথায় আছে ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’। সেই স্লোগানকে সামনে রেখেই এদিন তাদের স্লোগান হয়ে ওঠে ‘একটি আপার প্রাইমারি চাকরি একটি পরিবারের প্রাণ’৷ শুক্রবার ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে ১০ জুন পর্যন্ত৷

কেন এমন কর্মসূচী?

এক চাকরীপ্রার্থীর কথায়, দীর্ঘ সাত বছর ধরে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। প্রথম ফর্ম ফিলাপ হয় ২০১৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে। TET পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১৬ অগাষ্ট। ফল প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু হয়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। প্রভিশনাল মেরিট লিস্ট বের হয় কোর্ট অর্ডারে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর।

SSC কমিশন কোর্ট অর্ডার ২১ দিন অভিযোগ নেন ৫-২৫ অক্টেবর ২০১৯। এরপর দীর্ঘ সাত মাস কেটে গেলেও নিয়োগ অধরা।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই টানাপোড়েন থেকে মুক্তি চাইছেন তারা, তা স্পষ্ট। তাদের কথায়, একইসঙ্গে একটি চাকরীর মাধ্যমে নিজদের পরিবারকে বাঁচাতেই এই অভিনব কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে উদ্যত হয়েছেন।

আগামী ৯ জুন থেকে খুলছে হাইকোর্ট, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে মামলার শুনানি

তাদের দাবি “রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দপ্তর অতি দ্রুততার সঙ্গে মহামান্য হাইকোর্টের আইনি সমস্যা সমাধান করে গেজেট বিধি মেনে আপডেট ১:১.৪ শূন্যপদে উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমাদের সাত বছর ধরে চলতে থাকা বঞ্চনার মুক্তি দিক।”

প্রসঙ্গত, সমাধান থাকা সত্ত্বেও কিছুতেই শুরু করা যাচ্ছে না নিয়োগ পরীক্ষা। একাধিকবার এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশ পেলেই শুরু করা হবে আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷

সেই আশ্বাসই সার। বাস্তবায়ন যে হয়নি তা কারোর অজানা নয়। তাই সরকারের বিভিন্ন স্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই বৃক্ষরোপণ, প্ল্যাকার্ড-পোস্টার লেখা এবং ফেসবুক গণ লাইভের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পালন করা হবে৷

পাশাপাশি, আপার প্রাইমারি মামলাটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় (EXTREMELY URGENT MATTER)-এর তালিকাভুক্ত করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানির ব্যবস্থা করা হোক৷

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, ৩৯ নম্বর কোর্টের বিচারপতি ও রেজিস্টার জেনারেল, সরকার পক্ষের আইনজীবী, অ্যাডভোকেট জেনারেল, পিটিশন পক্ষের সমস্ত আইনজীবী ও বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের কাছে তারা এই বিষয়ে অনুরোধ জানাচ্ছেন৷

সরকার পক্ষ ও পিটিশনার পক্ষের আইনজীবীদের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের অনুরোধ, দ্রুত শুনানির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হোক৷

প্রার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ৷

তবে সরকারের টনক কবে নড়বে তা বলা সম্ভব নয়। আদৌও আপার প্রাইমারী কোনো নিয়োগ এই বছরে হবে কিনা তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কোন দিকে যাচ্ছে হাজার হাজার চাকরী প্রার্থীর ভবিষ্যৎ? উত্তর দেবে সময়।

সম্পর্কিত পোস্ট