ফের বজ্র আঁটুনি, সংক্রমন রুখতে কনটেন্টমেন্ট জোনে কমপ্লিট লকডাউন

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  কনটেনমেন্ট জোনের পরিধি বাড়িয়ে এবার কনটেনমেন্ট জোনে লকডাউন কড়া করছে রাজ্য সরকার।

নবান্নসূত্রের খবর, আগামী ৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে সারা রাজ্যের সব কনটেনমেন্ট জোনে কমপ্লিট লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রুখতে চূড়ান্ত এই কড়া লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

তবে কনটেনমেন্ট জোনের পরিধি ঠিক করবে জেলা প্রশাসন। জেলা ডিএম এসপিদের সঙ্গে আলোচনা করে এই কনটেনমেন্ট জোনের তালিকা নবান্নকে পাঠাবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবান্ন।

সোমবার করোনা সংক্রমণ নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বিভিন্ন জেলার ডিএম ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে একাধিক জেলা প্রশাসনের তরফে সংক্রমণ রুখতে লকডাউন কড়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উত্তর ২৪ পরগনার ডিএম এই জেলায় সংক্রমণের বাড়-বাড়ন্তের কথা মাথায় রেখে জেলার শহরাঞ্চল এবং কোভিড রোগী বেশি রয়েছে এমন এলাকাগুলি কমপ্লিট লকডাউনের পরামর্শ দেন।

তবে নবান্নের তরফে বলা হয়, শুধু উত্তর ২৪ পরগনা নয়। প্রয়োজনে গোটা রাজ্যেই কিছু জায়গায় লকডাউন করতে হবে।

এরপরই নবান্নের তরফে বিজ্ঞপ্তি জাড়ি করে লকডাউন কড়া করার কথা জানানো হয়। তবে সেই নির্দেশিকাতে লকডাউন কিছু গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছে।

সেগুলি হল-

  • কনটেন্টমেন্ট জোনের তালিকা ঠিক করবে রাজ্য নিজেই।
  • ওই এলাকায় থাকবে পুলিশি টহলদারী।
  • বন্ধ থাকবে সব স্কুল-কলেজ-দোকান-অফিস-কারখানা।
  • বন্ধ থাকবে সব বাজার।

তবে কনটেনমেন্ট জোনের সংজ্ঞাও বদলে দেওয়া হচ্ছে। কনটেনমেন্ট জোন, বাফার জোন ও পাশের গ্রিন জোন মিলিয়েই হচ্ছে এই নতুন কনটেন্টমেন জোন। ফলে মনে করা হচ্ছে, এবার কার্যত অর্ধেক রাজ্যই চলে গেল লকডাউনের আওতায়।

ইতিমধ্যেই নবান্নের তরফে লকডাউন সম্পর্কিত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে প্রত্যেক জেলাশাসকের দফতরে। যেখানে বলা হয়েছে, কোন কোন বিষয়গুলি লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে।

সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী,

  • বন্ধ থাকবে বাজার, তবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান যেমন মুদি, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফল, ওষুধ- এগুলির ক্ষেত্রে মিলবে ছাড়।
  • সেক্ষেত্রেও বেঁধে দেওয়া হয়েছে সময়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্তই খোলা থাকবে এই দোকানগুলি।
  • পাশাপাশি, হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
  • তবে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে চা-সহ রাস্তার ধারের সমস্তরকম খাবারের দোকান।
  • পাশাপাশি, বন্ধ রাখতে হবে সবরকম চা-এর দোকান।
  • বন্ধ থাকবে সবরকম অফিস-কলকারখানা।
  • বন্ধ থাকবে সমস্তরকম ব্যবসায়ীক লেনদেন, কাজকর্ম।
  • এছাড়াও সবরকম পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ বাস, অটো, টোটো, ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব, রিক্সা কিছুই চলবে না এই জায়গায়।

এদিকে কলকাতা পুরসভা এদিন প্রায় ৩৩ টি নতুন কনটেনমেন্ট জোনের কথা ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও হাওড়া জেলার সিংহভাগ এলাকাই এই লকডাউনের আওতায় চলে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই কনটেনমেন্ট জোনের তালিকা সরকারি ওয়েবসাইটে শীঘ্রই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ যাতে তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারে তাই কিছুটা সময়ও তাঁদের দেওয়া হচ্ছে।

এরপর ৯ জুলাই বিকেল ৫ টা থেকে কড়া লকডাউন করা হবে এই এলাকাগুলিতে।

বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, আগামী ৭ দিনের জন্য লকডাউন মালদা

রাজ্যে কোভিড সংক্রমণে প্রথম কলকাতা এবং তার পরেই উত্তর ২৪ পরগনা। কাজেই এই দুই এলাকায় কড়াকড়ির দরকার বলে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের অভিমত।

কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, শিলিগুড়ি, মালদা এবং দুই চব্বিশ পরগনায় ক্রমশ বাড়ছে করোনা সংক্রমনের হার। তার মধ্যে রয়েছে চূড়ান্ত জনসচেতনতার অভাব।

উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতে পুলিশের প্রচার সত্ত্বেও প্রায় প্রতিদিনই বিনা মাস্কে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গিয়েছে মানুষকে। নেই দূরত্ব বিধি। এমতবস্থায় যা চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞদেরও।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার এই সব জেলার জেলা শাসকদের লকডাউন জারি করা নিয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।

সেই অনুযায়ী জেলাগুলি নিজেদের এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পাঠায় নবান্নে।

সম্পর্কিত পোস্ট