গেহলোটের সঙ্গে দুরত্ব বাড়ছে পাইলটের, দল নিয়ে ক্রমাগত সংশয়ে কংগ্রেস
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ক্রমাগত কোণঠাসা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট। অভিযোগ তুলে সোজা দিল্লিতে হাইকম্যান্ডের কাছে উপস্থিত হয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট।
২৪ ঘন্টা আগে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট অভিযোগ তুলেছিলেন রাজস্থানে সরকার ভাঙার চেষ্টা করছে বিজেপি। এখন সেই অভিযোগ দলের তরফে বুমেরাং হয়ে দাড়িয়েছে।
তিন মাস আগে রাজ্যসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যের তিন বিধায়ককে ২৫ কোটি টাকা করে টোপ দেয় বিজেপি। এমনকি সেই বিধায়কদের একাউন্টে ১০ কোটি অগ্রিম দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এবিষয়ে তদন্তের জন্য উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটকে ডেকে পাঠানো হয়। এতেই বেজায় চটেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েকমাস ধরে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল তাতেই কার্যত ঘি এর ছিটে পড়ল।
তিন বিধায়কের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে সরকার বদলের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত চলাকালীন স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের তরফে চিঠি পাঠানো হয় শচীন পাইলটকে।
শচীন পক্ষের বিধায়কদের তরফে জানানো হয়, এর আগে কখনোই এভাবে কোনও উপমুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এরকম তদন্তের নোটিশ আসতে দেখা যায়নি।
পাল্টা অশোক গেহলোট জানিয়েছেন, এর আগে তাকেও এরকম তদন্তের নোটিশ ধরানো হয়। এসময় তার উচিত তদন্তের সাহায্য করা। আইনের উর্দ্ধে গিয়ে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
দিল্লিতে এসে হাইকম্যান্ডকে শচীন জানান তার সঙ্গে ২৩ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। যার মধ্যে ১২ জন তার সঙ্গে দিল্লিতে উপস্থিত হয়েছে। তাদেরকে কোথায় রাখা হয়েছে সেবিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
যদিও তাদের সুরক্ষার সমস্ত দায়িত্ব দল নেবে বলে আশ্বস্ত করেছে হাইকম্যান্ড। ইতিমধ্যেই দলীয় বিধায়কদের নিয়ে রাত ৯ টায় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকের আহবান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট।
বিজেপি ও রাজভবনের অঙ্গুলী হেলনে বিপাকে ফিরহাদ, বিধায়ক পদ খারিজ নয় কেন? চিঠি কমিশনের
গেহলোট ঘনিষ্ঠদের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবারের বৈঠকে থাকার কথা রয়েছে শচীনেরও। কিন্তু তার সঙ্গে এখনও ফোনে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি দল।
২০১৮ সালে বিজেপি সরকারকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে যে পাঁচ রাজ্যে বিজেপি বিরোধী সরকার গঠন হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল রাজস্থান। যেখানে ২০০ টি আসনের মধ্যে ১০৭ টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে কংগ্রেস।
বিজেপি পায় ৭৭ টি আসন। ১২ টি নির্দল সহ ২ টি সিপিআইএম এবং অন্যান্য দলের সমর্থন পায় কংগ্রেস। সেবারে শচীন পাইলটকে সামনে রেখেই বিজেপির বিরুদ্ধে ঘুটি সাজিয়েছিল কংগ্রেস।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য অশোক গেহলোটকে বেছে নেয় দল। পরিবর্তে উপমুখ্যমন্ত্রী সহ পাঁচটি দফতর পান শচীন।
পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বভার তার কাঁধে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই দু্’পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমাগত জমা হচ্ছিল৷
শচীনকে কোণঠাসা করতে এবং প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই গেহলট এবং তার সঙ্গিদের এই রণনীতি বলে মনে করা হচ্ছে।
পাল্টা গেহলট মন্ত্রীসভার মন্ত্রী প্রতাপ সিং খাচরিওয়াস জানিয়েছেন, মধ্যপ্রদেশের মত রাজস্থানেও সরকার ভাঙতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু এবার তারা সক্ষম হবে না।
প্রসঙ্গত মাস তিনেক আগেই মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস পদ থেকে সরে দাড়ান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সেইসঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন প্রায় ২০ জন বিধায়ক।
তার ফল হিসাবে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ সরকারের পরিবর্তে ক্ষমতায় আসে শিবরাজ সিং চৌহানের বিজেপি সরকার।
সেবারেও রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলটেরও দল বদলের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন শচীন নিজেই। কোনওভাবেই বিজেপিতে তিনি যাবেন না। সাফ জানিয়ে দেন।
দিল্লিতে গিয়ে ঘটনা দলের হাইকম্যান্ডকে জানানো হয়েছে বলে সুত্রের খবর। এখন ২৪ আকবর রোডের তরফে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়? সেটাই দেখার।
ইতিমধ্যেই দলের কর্দমাক্ত অবস্থা নিয়ে টুইটারে মন্তব্য পেশ করেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বাল। দলের অবস্থা নিয়ে তিনিও যে বেশ বিচলিত তা আকার ইঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন।