হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বিজেপি বিধায়কের রহস্যজনক মৃত্যুতে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। সোমবার উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ বিধানসভার বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের আকস্মিক ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আর তাই নিয়েই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।
এদিন রায়গঞ্জ ব্লকের বালিয়া মরে একটি দোকানের বারান্দায় বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। গলার পাশাপাশি তার হাতও ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা। ফলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে খুনই করা হয়েছে বিজেপি বিধায়ককে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের। প্রচুর মানুষ এসে জড়ো হয় ঘটনাস্থলে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশও। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।
দেবেন্দ্রনাথ রায়ের পরিবারের দাবি, গতকাল রাত ১টা নাগাদ কয়েকজন মোটর বাইক আরোহী তাঁকে বালিয়ার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। আজ সকালে বালিয়া মোড়ে একটি বন্ধ দোকানঘরের বারান্দা থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
স্থানীয়দের দাবি, রাত দশটা পর্যন্ত দেবেন্দ্রনাথবাবু স্থানীয় চায়ের দোকানে ছিলেন। তারপর রাত একটা নাগাদ একটি মোটর বাইক তাঁর বাড়ির দিকে যায়। এ ব্যাপারে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন বিধায়কের পরিবার।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও অভিযোগ করেছেন, দেবেন্দ্রনাথকে খুন করা হয়েছে। পরিচিত লোকেদের ডাকে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তা না হলে রাত একটায় কেউ বাড়ি থেকে বার হয় কি? প্রশ্ন দিলীপের।
তাঁর কথায়, ওখানকার এক তৃণমূল নেতা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে। সে ওখানকার যুব তৃণমূল নেতা। নাম গৌতম পাল। একুশের ভোটের আগে পথের কাঁটা সরাতেই খুন করেছে দেবেন্দ্রনাথ রায়কে।
দিলীপ ঘোষের অভিযোগ,রাজনৈতিক ভাবে পেরে না উঠে এবার খুনের রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। রাজ্য পুলিশকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করলে চলবে না। আমরা দাবি করছি, কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করাতে হবে।
এই ঘটনায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছে। তাঁর দাবি, হেমতাবাদের বিধায়ককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকার গুন্ডারাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
শচীন পাইলট বনাম অশোক গেহলোট, সোমবারের বৈঠকই বাতলে দেবে রাজস্থানের ভবিষ্যৎ
তিনি আরও বলেন,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা প্রামাণ করল এই ঘটনা। মানুষ এটাকে ক্ষমা করবে না।
ইতিমধ্যে বিজেপির রাজ্য যুব সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান হেমতাবাদের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। হেমতাবাদে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীও।
দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে ট্যুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এই ঘটনায় তিনি ফের রাজ্যে আইন-শৃংখলার অবনতি কথা বলে রাজ্য সরকারকে দুষেছেন। একইসঙ্গে এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
রাজ্যপাল লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা ও ষড়যন্ত্র কমার কোনও লক্ষণ নেই। উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় রেশ কিছু গুরুত্বপূণ বিষয় ও খুনের অভিযোগ উঠেছে। সত্য প্রকাশ এবং রাজনৈতিক হিংসা থামাতে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।
এদিকে জেলা তৃণমূলের তরফ থেকে বিধায়ক খুনের ঘটনায় বলা হয়েছে, প্রকৃত দোষীর শাস্তি চাইছে তৃণমূলও। তারাও চান এই ঘটনার তদন্ত হোক।
একইসঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এত রাতে বাড়ি থেকে কেন বেরোলেন দেবেন্দ্রনাথ বাবু। যাদের সঙ্গে তিনি বার হয়েছিলেন তারা কি তার অপরিচিত? নাকি পরিচিত?খুনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতা কানহাইয়ালাল আগরওয়ালও।
তিনি বলেন,অত রাতে বাড়ি থেকে কেন বার হলেন তার প্রকৃত তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্তে প্রকৃত সত্য সামনে আসবে।
এ দিন বিধায়কের দেহ উদ্ধার করতে গেলে প্রথমে উত্তেজিত জনতা এবং বিজেপি সমর্থকরা পুলিশকে বাধা দেয়৷
পুলিশের তরফে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলে শেষ পর্যন্ত দেহ সরাতে দেয় জনতা৷ বিধায়কের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ৷
এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ডগ স্কোয়াড। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি৷