বিপক্ষে ইয়ং ব্রিগেড, কর্মীদের তালুতে আনতে ভরসা রাহুল!
শুভজিৎ চক্রবর্তী
প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় তিনি পাপ্পু বা টিউবলাইট। কিন্তু রাজনীতির আঙিনায় আগাগোড়া তিনি দেশের যুব সম্প্রদায়ের ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ ক্ষমতার সময়সীমা সুদুরপ্রসারি করতে গেলে দেশের যুব সম্প্রদায়ের ওপর নজর রাখাটা ভীষণভাবে জরুরি।
তাঁর পুর্বাভাস কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি বুঝে গিয়েছিলেন। তাই দলে একঝাঁক বর্ষীয়ান নেতাদের উপস্থিতির মাঝেও তরুণ তুর্কিদের হাতে দায়িত্ব সঁপে দিয়েছিলেন। এতে লাভবান হয়েছিলেন বটে। কিন্তু সেই ধারা ধরে রাখতে পারল না কংগ্রেস।
সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে রাহুল গান্ধীর ইস্তফার পরেই দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সোনিয়া গান্ধী। এতে যে একেবারে লাভ হয়নি, তা কিন্তু বলা যায় না।
কারণ মহারাষ্ট্রে শরদ এবং সোনিয়ার বুড়ো হাড়ের ভেল্কিতেই সরকার গঠন হয়। পার্টি লাইন বদলে একেবারে কট্টর হিন্দু দল শিবসেনাকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত সোনিয়া ছাড়া অন্য কারোর পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
তাতে একদিক রক্ষা পেলেও অন্যদিক ভেঙে পড়ে। শুরু থেকেই শুরু করা যাক।
ত্রিপুরার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদের জন্য প্রদ্যুত দেববর্মাকে নির্বাচিত করল দল। তরুণ নেতাকে সামনে রেখে লোকসভায় ভোটের মার্জিন বাড়ল কংগ্রেসের।
কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কংগ্রেস সভাপতি পদ এবং দল দুই-ই ছাড়লেন রাজা প্রদ্যুত দেববর্মা। যার কারণে আপাতত ত্রিপুরা থেকে আলোচনার বাইরে চলে গেল কংগ্রেস।
রাজস্থানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতা প্রদর্শনে এগিয়ে গেহলোট
এরপর যে বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। মহারাষ্ট্র। যার মধ্যে অন্যতম যুব কংগ্রেস নেতা তথা রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ মিলিন্দ দেওরা। সাউথ মুম্বই লোকসভা আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
মিলিন্দ দেওরাঃ
- ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মুম্বই কংগ্রেসের সভাপতি পদে নিযুক্ত ছিলেন।
- কিন্তু ১৯ এর নির্বাচনে কংগ্রেসের ফলাফল এবং দলের সঙ্গে বনীবনার কারণে সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান মিলিন্দ।
- তার পর থেকেই ক্রমাগত তাকে কোণঠাসা করেছে দল।
- কিন্তু দলের বাইরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে।
জিতিন প্রসাদাঃ
- একসময়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন জিতিন প্রসাদা।
- ছিলেন কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির সদস্যও।
- উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।
- কিন্তু ইদানিং দলের সঙ্গে সমঝোতার অভাবে তাকে আর দেখা যায় না।
- বরং বেশ কিছু মাস ধরে মোদি সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এই নেতা।
দ্বীপেন্দর হুড্ডাঃ
- হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র সিং হুড্ডার পুত্র দ্বীপেন্দর হুড্ডা।
- তিনবার কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
- কিন্তু ২০১৯ ফলাফলে তিনিও কিছুটা দলের ওপর আস্থা হারিয়েছেন।
- সম্প্রতি রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে তার নাম উঠে এলেও হাইকম্যান্ডের তরফে সবুজা সিগন্যাল না মেলায় তা আপাতত ঝুলে রয়েছে।
- এমনকি দলের দায়িত্ব থেকেও সরে আসতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সন্দীপ দীক্ষিতঃ
- দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র।
- রাজধানীর রাজনীতিতে তাকে ব্যবহার করে ভোটের মার্জিন বাড়াতে পারত কংগ্রেস।
- কিন্তু সেখানেও দলের সিদ্ধান্তের গাফিলতি প্রকাশ্যে আসছে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াঃ
- সম্প্রতি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলবদল এবং মধ্যপ্রদেশে সরকার বদলের খবরও আমাদের জানা।
- প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমনাথের সঙ্গে মতবিরোধ এবং হাইকম্যান্ডের তরফে দীর্ঘদিন কোনও উত্তর না মেলায় নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
- অথচ জনপ্রিয়তার নিরিখে কমলনাথ বা দ্বিগবিজয় সিংয়ের তুলনায় কোনও অংশেই তিনি কম ছিলেন না।
- সেবার কংগ্রেস থেকে জ্যোতিরাদিত্যের ইস্তফার পর ইতিহাসবীদ রামচন্দ্র গুহ জানিয়েছিলেন কংগ্রেস থেকে সরে গিয়ে নতুন করে দল গড়ুন তিনি।
- উদাহরণ হিসাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
- তবে বিজেপিতে এসেও লাভ-ই হল জ্যোতিরাদিত্য এবং তার অনুগামীদের ১৪ জন বিধায়কের কপালে জুটল মন্ত্রীসভার পদ।
রাজস্থানের রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ
- এরপর আসি সম্প্রতি রাজস্থানের উত্তপ্ত রাজনীতির আলোচনায়।
- এখানে শক্তি প্রদর্শনে গেহলোট শক্তি এগিয়ে থাকলেও পাইলটের জনপ্রিয়তার কাছে তা ঠুনকো হিসাবে মনে হবে।
- কারণ ২০১৮ সালের নির্বাচনে শচীন সামনে রেখে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস।
- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হন অশোক গেহলোট। দল রক্ষা করতে উপমুখ্যমন্ত্রী এবং পাঁচ মন্ত্রকের দায়িত্ব তাঁকে দেয় দল।
- সঙ্গে নিযুক্ত হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসাবেও।
- কিন্তু যেভাবে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী গেহলোট ব্যবহার করলেন তাতে ক্ষোভ জমা স্বাভাবিক।
- রাহুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে শচীন পাইলট। কিন্তু এখনও অবধি তার তরফে কোনও উত্তর মেলেনি।
এই মুহুর্তে দাড়িয়ে যে কটি রাজ্যের ক্ষমতায় কংগ্রেস রয়েছে তার সংখ্যা খুবই কম। বরং আঞ্চলিক দলগুলির প্রাধান্য বেশ কিছু রাজ্যে জাতীয় কংগ্রেসের তুলনায় বেশী হয়ে দাড়িয়েছে। হাতের বাইরে যেতে শুরু করেছে একের পর এক রাজ্য।
সেইসঙ্গে তরুণ নেতাদের ইস্তফা কংগ্রেসের ভবিষ্যত নিয়ে বিচলিত করেছে বহু বর্ষীয়ান নেতাদের । তাই জন্য রাহুল গান্ধীকে আবার কংগ্রেস সভাপতি পদে এনে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চাইছে দল।
শচীন পাইলট বনাম অশোক গেহলোট, সোমবারের বৈঠকই বাতলে দেবে রাজস্থানের ভবিষ্যৎ
ঠিক সেই কারণেই আট বিধানসভার উপনির্বাচনের কথা মাথায় রেখে হার্দিক প্যাটেলের মত তরুণ নেতাকে কার্যকরী সভাপতি পদে এনেছে কংগ্রেস।
শুধুমাত্র তাই-ই এতে করে পতিদার ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই পুরো সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ২৪ নং আকবর রোডের সিদ্ধান্তের ওপর।
দেশজুড়ে গেরুয়া শিবিরকে পর্যদস্তু করতে কতটা সক্ষম হয় ভারতের প্রাচীন দল? সেটাই এখন দেখার।