সরকার ভাঙার ষড়যন্ত্র ! শচীন কে আইনি নোটিশ স্পিকারের
দ্য কোয়ারি ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট এবং উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছিল তা এবার আদালতে উপস্থিত।
দলবিরোধী কাজ এবং সরকার ভাঙার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শচীন পাইলট এবং তাঁর সঙ্গিদের নোটিশ পাঠান স্পিকার সিপি যোশী।
স্পিকারের পাঠানো নোটিশ বিধায়কদের ফোন নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ এবং বিধায়কদের বাড়ির দেওয়ালে আটকে দেওয়া হয় যাতে গোটা ঘটনা রাজস্থানের সাধারণ মানুষের নজরে আসে।
শুক্রবারের মধ্যে তার উত্তর জানতে চান স্পিকার। নতুবা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
কিন্তু স্পিকারের আনা নোটিশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে উপস্থিত হন রাজস্থানের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলট।
এর থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়, যে শচীন পাইলট বিজেপিতে যোগদানের বিষয় উড়িয়ে দিচ্ছিলেন তাঁর এবার কংগ্রেসেও ফেরার হার জিরো পার্সেন্টের দিকে যেতে শুরু করল।
বরং গুরুগ্রামের আইটিসি হোটেলে তাঁর উপস্থিতি তাঁর জল্পনার আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিল। আর তাতে শচীন পাইলটের আইনি পদক্ষেপ আরও ঘি ঢেলে দিলো।
যখন শচীন পাইলটের পক্ষে সওয়াল জবাবের জন্য দুই প্রথম সারির আইনজীবী হরিশ সালভে এবং প্রাক্তন এটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতোগীকে বেছে নিলেন।
যদিও কংগ্রেসের তরফে যখন অশোক গেহলোটের হয়ে সওয়াল জবাবের জন্য অভিষেক মনু সিংভিকে বেছে নেওয়া হল, তখন শচীনের কাছে আর রাস্তা ছিল না।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজস্থান বিজেপির হাইকম্যান্ড বসুন্ধরা রাজের ওপর অভিযোগ আনেন।
তিনি বলেন, অশোক গেহলোটের সরকার রক্ষা করতে তাঁকে বসুন্ধরা রাজে সাহায্য করছেন। অর্থাৎ যে বিজেপি এতদিন ধরে ওয়েট এন্ড ওয়াচ করছিল তারাও এবার কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে।
কিন্তু শুক্রবার আদালতের রায় কোনদিকে যায় তার ওপর নির্ভর করছে অশোক গেহলোটের ভবিষ্যৎ। যদি শচীন এবং ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের বিধায়ক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় সেক্ষেত্রে আস্থা ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে সুবিধা হবে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোটের।
কিন্তু যদি শচীন অনুগামীরা বিধানসভার ভিতরে থেকে আস্থা ভোটে অংশ নেয়, সেক্ষেত্রে রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখা বেশ কষ্টকর হবে।
গ্রপ্রশ্ন এখানেই তবে কি এতে বিজেপির কোনও ফায়দা হবে? কংগ্রেস সুত্রের খবর বিজেপির সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় বাকি ৩০ জন বিধায়কের ব্যবস্থার জন্য দিনরাত আপ্রাণ চেষ্টা করছেন পাইলট।
এমনিতেই রাজস্থানের ফেয়ারমন্ট হোটেলে থাকাকালীন দুই বিটিপি নেতার ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে হোটেলে বাইরে বের না হওয়ার জন্য পুলিশের দিকে অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
তবে কি এখান থেকেই শুরু থেকে গেহলোটের দল ভাঙার কাজ? যদিও বিটিপি বিধায়করা জানিয়েছেন তাঁরা গেহলোটের পক্ষেই রয়েছেন।
২০১৮ সালে সরকার গঠনের সময় মুখ্যমন্ত্রী পদের বদলে শচীন পাইলটকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি।
পাশপাশি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে তাকে নিযুক্ত করেন। পাইলটের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে পরে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু লোকসভা ভোটের পর রাহুলের ইস্তফা দেওয়ায় শচীনকে কোণঠাসা করতে শুরু করে কংগ্রেস।
সম্প্রতি শচীন তাঁর বিজেপি যোগের জল্পনা এড়িয়ে বলেন গান্ধী পরিবারের কাছে তাঁর ইমেজ নষ্ট করার জন্য এই কাজ করা হচ্ছে।
যদিও কংগ্রেস সুত্রের খবর, এখনও অবধি গান্ধী পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে তিনি দেখা করেননি।
বরং রনদীপ সুরজেওয়ালাকে সুর নরম করে বলতে দেখা যায় শচীনের জন্য কংগ্রেসের দ্বার খোলা রয়েছে। যে কোনও সময় এসে তিনি আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু জল এখন মাথার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। যে দ্বন্দ্ব এতদিন ধরে মরুপ্রদেশের রাজমহলে চলছিল তা আজ আদালতে উপস্থিত হয়েছে। যা নির্ধারণ করতে পারে জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ।
যদিও বিধায়কদের বিরুদ্ধে আনা অডিও ক্লিপিংসের অভিযোগ করেছেন ভানওয়ার লাল শর্মা। তনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট এখন বেকায়দায় পড়েছেন তাই এসব করে নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে চাইছেন।
ইতিমধ্যেই একটি অডিও রেকর্ড কংগ্রেসের হাতে এসেছে যাতে শোনা গিয়েছে দুই বিধায়ক ভানওয়া লাল শর্মা এবং বিশ্বেন্দ্র সিংকে বিজেপির সঙ্গে রফা করতে শোনা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই কংগ্রেস থেকে ওই দুই বিধায়ককে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও অডিওটির সত্যতা কংগ্রেস যাচাই করেনি।
গোটা ঘটনার জন্য বিজেপিকে দুষেছেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা।
- তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে সরকার ভাঙার চেষ্টা করছে বিজেপি। শচীন পাইলটকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা দরকার।