অমর ২১ জুলাইঃ স্মৃতি রোমন্থনে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
২১ জুলাইয়ের প্রেক্ষাপট
সালটা ১৯৯৩। রাজ্যে বাম শাসন। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেসময় প্রায়শই বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতেন ছাপ্পা-রিগিং এর।
তাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে সচিত্র পরিচয় পত্রের দাবিতে মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিল যুব কংগ্রেস। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের লড়াকু নেত্রী ওরফে সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই অভিযানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী। সেদিন থেকে প্রতিবছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহীদ স্মরণে দিনটি পালন করেন।
পরবর্তীকালে কংগ্রেস ছেডে় গঠন করেন তৃণমূল কংগ্রেস।তবে ২১ জুলাই পালনের ধারা দীর্ঘ ২৭ বছরেও অটুট।
একজন মাত্র সাংসদ। সেখান থেকে অনেক লড়াই। ক্ষমতায় এখন তৎকালীন লড়াকু নেত্রী ওরফে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত দুই দশকের অঘোষিত বার্ষিক রাজনৈতিক সমাবেশে এবার বাধ সেধেছে করোনা।
ধর্মতলার শহীদ মিনার নয় , এবারে শহীদ দিবস পালিত হবে ভার্চুয়ালি। অমর একুশে জুলাই। স্মৃতি রোমন্থনে তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিকরা।
দ্য কোয়ারির সঙ্গে স্মৃতি রোমন্থনে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রশ্নঃ দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা। এবার ২১ জুলাই ভার্চুয়ালি পালন করা হবে। দীর্ঘ ২৭ বছরে যা প্রথম। গোটা বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
উত্তরঃ এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যান্য বার মিটিং, মিছিল, পোস্টার, ব্যানার, কর্মীদের নিয়ে যাওয়া, গাড়ি বুকিং, যেসব কর্মীরা দূর থেকে আসছেন স্বাগত জানানো- সব মিলিয়ে চরম ব্যস্ততা থাকে। এবার কোনোটাই করতে পারছি না। তাই খারাপ তো লাগছেই।
কিন্তু পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হবে। ২১ জুলাই পালন করতেই হবে। ১৯৯৩ সালের সেই ঘটনা আজও স্মৃতিতে তরতাজা।
প্রশ্নঃ প্রত্যেকবার ২১ জুলাই কর্মী সমর্থকদের আবেগ-উদ্দীপনা থাকে চোখে পড়ার মত। বিচিত্র সাজ, ব্যানার-পোস্টারে চারদিক সবুজে সবুজ। এবারের প্রস্তুটি তা কীভাবে নিচ্ছেন?
উত্তরঃ এবার বুথে বুথে এবং আমার বিধানসভা এলাকার অঞ্চলগুলিতে দলের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মিটিং করেছি। সোমবারও মিটিং আছে। গোটা বিষয়ের প্রস্তুতি পর্ব নিয়ে সবসময় খোঁজ নিচ্ছি।
বুথে বুথে কর্মীদের একত্রিত করা। শেড তৈরী রাখা। কারণ প্রতিবারই এই দিনটিতে বৃষ্টি হয়। টিভি লাগানো। ফ্ল্যাগ তোলার জন্য স্ট্যান্ড তৈরী রাখা। সবটাই হচ্ছে। নজর রাখছি।
প্রশ্নঃ ২০১১ সালের ১৩ মে ৩৪ বছরের বামদুর্গে ধস নামিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জয়ের উদযাপন হয়েছিল সেবার ২১ জুলাই শহীদ স্মরণের পর। সেদিনের বিশেষ স্মৃতি কেমন ছিল?
উত্তরঃ ২০১১ সালের ২১ জুলাই দিনটা খুব অন্যরকম ছিল। একদিকে শহীদদের উদ্দেশে মাল্যদান। অন্যদিকে সরকারে আসার একটা উন্মাদনা। বাংলার প্রায় প্রত্যেক ঘর থেকে মানুষকে সভাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সেবার কর্মী সমর্থকরা রীতিমত ঢাঁক-ঢোল বাজাতে বাজাতে শহীদ দিবসে জমায়েত হয়েছিলেন। সেইসঙ্গে ছিল সকল কর্মী সমর্থকদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। সেদিনের মঞ্চে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে যায়।
প্রশ্নঃ শহীদ দিবস দিনটি এযাবৎকালে রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এবারের ২১ জুলাই রাজনৈতিক ভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ প্রত্যেকবার ২১ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী দলকে উজ্জীবিত করতে বার্তা দেন। ২০১৮ সালে ১৯ এর লোকসভাকে সামনে রেখে বার্তা দিয়েছিলেন ৪২ এ ৪২। এবারে ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কী বার্তা দেন সেজন্যই অপেক্ষা করে আছি।
একদিকে করোনা পরিস্থিতি। অন্যদিকে আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলা। সেইসঙ্গে বিরোধীদের অপ-প্রচার তো রয়েছেই। বিরোধীরা বাংলায় ক্ষমতার লোভে পরিবর্তের গতিরোধ করতে চাইছে।
সেইসঙ্গে দলের অভিমুখ, মানুষের কাছে বার্তা, ২১ এর রোডম্যাপ, সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি – সবমিলিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ। কিস্তিমাত করতে মুখ্যমন্ত্রীর ফর্মূলা কী হবে সেটাই দেখার।
মমতাদির দেওয়া বার্তার পর আমাদের দায়িত্ব সেই বার্তাকে পাথেয় করে আগামীতে বৈতরণী পার করা।
উপসংহারঃ
এই বছরের ২১ জুলাই রাজনৈতিক দিক থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। করোনা ও আমফানে বিপর্যস্ত বাংলা। অন্যদিকে ক্রমশ ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে।
একদিকে বাম-কংগ্রেস জোটের মুহুর্মুহু আক্রমন। অন্যদিকে বিজেপির স্লোগান ‘বদল চাই ও বদলা চাই’। সবমিলিয়ে সাঁড়াশী চাপে তৃণমূল।
রাজনীতির মহারণে এবার কী বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী? নজর থাকবে শাসক থেকে বিরোধী সকলেরই।