২১ এ জনসভা নয়, পথসভা করবে তৃণমূল, আমাদের সরকার অনুমতি দেবেঃ দিলীপ ঘোষ
সহেলী চক্রবর্তী
২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই ছিল শেষ ২১ জুলাই। করোনা ও আমফানে বিপর্যস্ত বাংলা। করোনা রুখতে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা। তাই এবারের ২১ জুলাই শহীদ স্মরণ সভা ভার্চুয়ালি সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এযাবৎকালে বা বলা ভাল ২০১১ সালের পর থেকে ২১ জুলাই শুধুমাত্র শহীদ স্মরণে আটকে নেই। বরং পরিণত হয়েছে অঘোষিত বার্ষিক রাজনৈতিক সভায়। যেখান থেকে প্রত্যেক নির্বাচনের আগে নতুন রোডম্যাপ তৈরী করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রথার ব্যাতিক্রম হল না এবারেও।
আন্দাজ আগেই ছিল যে এবারের ২১ জুলাই আক্রমণাত্মক হবে। আন্দাজ সত্যি করেই শুরু থেকে মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের একের পর এক বলে ঝোড়ো ব্যাট চালালেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর ১ঘন্টা ১১ মিনিটের বক্তব্যের নিশানার পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিরোধীরা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রাহুল সিনহার কথায়, কালীঘাটে তৃণমূলের জন্ম।আর আজ ফের তাদের কালীঘাটেই ঢুকে যেত হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রীর করোনাকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ ছিল। আগেরবার সভাতে ভিড় হয়নি। আর এবার সভা হলে আরোই ভিড় হত না।
আমফানের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে সহযোগীতা করে না। প্রধানমন্ত্রী ১০০০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলেন। তার হিসেব চাইতে ওনার মুখ ভার। উনি এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যায় করেন। সবকিছুতেই এখানে কাটমানি দিতে হয়। এটা তো কাটমানির সরকার চলছে।
করোনায় চিকিতসা পরিকাঠামো নিয়ে বারবার রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ্যে এসেছে। রাহুল সিনহার কথায়, সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের গল্প সবাই বুঝে গেছে। গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হওয়ার পর এখন তিনি বলছেন র্যানডম টেস্টের কথা। বারবার তথ্য গোপন করে গেছেন তিনি। অন্যান্য রাজ্যে যেখানে রিকভারি রেট বাড়ছে, পশ্চিমবঙ্গে তা কমছে।
রাজনৈতিক কটাক্ষের উত্তরে রাহুল জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন।যেকোনো মুহুর্তে পার্টি টা ভেঙে যাবে। উনি প্রলাপ বকছেন। ২০১৮র ২১ জুলাই ৪২ এ ৪২ এর ডাক দিয়েছিলেন। তবে ২০১৯ এ পেয়েছেন মাত্র ২২ টা। ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে দল টাই ধুলিস্যাত হয়ে যাবে।
রাহুল সিনহার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ ২১ জুলাই। সামনের বার জনসভা নয়, পথসভা করতে হবে। তাঁর কথায় কংগ্রেসের শহীদ দিবস হাইজ্যাক করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিলীপ বাবুর কথায়, উনি আমাদের সভা করার অনুমতি দেন না। ত্রান বিলি করতে দেন না। তাতে কী হয়েছে! আমাদের সরকার তৃণমূলকে পথসভা করতে অনুমতি দেবে।
তৃণমূলের ভার্চুয়াল ২১ জুলাই নিয়ে ব্যঙ্গের সুরে দিলীপ ঘোষ বলেন, বিজেপির ভার্চুয়াল দেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতাই। আজ তিনিও সেই পথে হাঁটলেন। তখন হয়তো বোঝেননি ভার্চুয়াল সভা কী!
২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, সরকার গড়ব আমরাঃ মুখ্যমন্ত্রী
দুর্নীতি প্রসঙ্গে সরকারকে পঙ্গপালের সঙ্গে তুলনা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, রেশন ও ঘূর্ণিঝড় আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা লুঠ করছে তৃণমূল। সব জায়গা থেকেই কাটমানি খাচ্ছে । এক কথায় পঙ্গপালের মতো রাজ্যে লুঠ করছে তৃণমূল।
তাঁর কথায় মানুষকে দুঃস্থ করে রেখেছে তৃণমূল সরকার। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে বাধা দিয়েছেন মমতা। পরিযায়ীদের নিয়ে দায় এড়াতে চেয়েছেন মমতা।
পরিবর্তনের আঁচ পেয়ে গিয়েছেন মমতা। মানুষ ভোট দেবেন না বুঝেই একাধিক পুরসভায় ভোট করাচ্ছেন না। নাগরিক অধিকার কেড়ে ক্ষমতা ভোগ করছেন।
দিলীপ ঘোষের দাবি, রাজ্যজুড়ে বোমা-বন্দুকের কারখানা চলছে।তৃণমূল নয়, এবার রাজ্যের কথা ভাববে বিজেপি। দল নয়, তৃণমূলে একজন ব্যক্তির কথাই শেষ কথা। উনিশে তৃণমূল হাফ হয়েছে, একুশে সাফ হয়ে যাবে।
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ডিএ, ইনক্রিমেন্ট না দিন, সম্মানটুকু দিন। অপরাধের নিরিখে এগিয়ে বাংলা। পুলিশের কোনও কাজ নেই, শুধু বিরোধীদের বাধা দেওয়া ছাড়া।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ২৪ জুলাই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদে নামবে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ২১ জুলাই রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ঠ তাৎপর্যরপূর্ণ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী আজ হুঙ্কার দিয়ে বলেন ২০২১ সালের ২১ মে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল। জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বিজেপির। বাংলা শাসন করবে বাংলার মানুষরাই।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই হুঙ্কার আদৌ বাস্তবায়িত হল কিনা, নজর থাকবে সেদিকেই।