‘শান্তি’তেই অশান্ত পুরুলিয়া, ২১এ অকাল পদ্মবৃষ্টির আশঙ্কা জেলা জুড়ে…

সহেলী চক্রবর্তী

অযোধ্যা পাহাড়ের সাহেবডি গ্রাম হোক বা পাখি পাহাড়। কখনো কখনো বাঘমুন্ডির চরিদা গ্রাম হোক বা বলরামপুর। আবার কখনো বান্দোয়ান, পাড়া বা রঘুনাথপুর। আবার পাশের বিধানসভা কাশীপুর হোক বা পুরুলিয়া সদর।

এই অঞ্চলগুলি জুড়ে একসময়ে অনুন্নয়নের ছোঁয়া ছিল প্রকট। দীর্ঘ ৩৪ বছর বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার ফলে মানুষের অভিযোগ পুরুলিয়ায় উন্নয়নের গতি মন্থর ছিল।

তাই জেলা জুডে উন্নয়ন করতে মানুষ মমতাকেই বিকল্প ভেবেছিল। বেশ চলছিল সবকিছু। ২০১১ থেকে ২০১৬ । এই দুটি পর্বেই জেলা জুড়ে ছিল মমতার জয়জয়কার।

একদিকে মমতার উন্নয়ন। অন্যদিকে চোরাগোপ্তা দুর্নীতি। যা মানুষকে আহত করেছে বারবার।

পুরুলিয়া জেলার পিছিয়ে পড়া মানুষের মূলত দাবি ছিল রোটি-কাপড়া আউর মকান। তা কিন্তু হয়নি।

জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আর্থিক তছরুপ, ১০০ দিনের কাজে বল্গাহীন তোলা আদায়, পুরোনো বিল্ডিংয়ে নীল-সাদা রঙের অপচয়। কখনোও বা কৃষক মান্ডির বড়বড় বাড়ি, যা মানুষের কাজে লাগেনি।

এই সমস্ত দুর্নীতিকে সঞ্চয় করেই ১৯ এর ভোটে তৃণমূলকে ধরাশায়ী করেছে বিজেপি। জিতেছে জ্যোতির্ময় মাহাত।

এখানে তৃণমূল ১৯-এ আত্নবিশ্বাস দেখালেও পরাজয়ের মূল কারণ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাত। এমনটাই বলছেন দলের একাংশ।

রাজ্যের সহ সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, রাজনৈতিক পুনর্বাসন নাকি বনবাস?

স্থানীয়দের অভিযোগ গোটা দলটিকে শান্তিরাম মাহাতো পারিবারিক ভাবে ব্যবহার করেছে। দীর্ঘদিনের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাত সাংগাঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সময়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এক প্রকার বাধ্য হয়েই লোকসভায় ভরাডুবির পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে দফতর বিহীন মন্ত্রী করে রেখে দেন দীর্ঘদিন।

দলের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন দলের বহু সুযোগ্য সৈনিককে শান্তিরাম জায়গা দেননি। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয় কিছুটা। পুনরায় তাঁর দফতর ফিরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পুরুলিয়ার বালি ও নুড়িপাথর অবাধে লুঠ হয়েছে। এরফলে সরকার তার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এরকম ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ কালীঘাটে পৌঁছয়। দুর্নীতির রেশ কাটতে না কাটতে করোনা উত্তাপে শারীরিক সমস্যার দোহাই দিয়ে মন্ত্রী সার্কিট হাউসে কাটিয়ে দিয়েছেন।

এই কঠিন সংকটে গরীব খেটে খাওয়া ক্ষেত মজুর যারা, তারা মন্ত্রীকে পাশে পায়নি। এই সমস্ত অভিযোগগুলি ঘনীভূত হচ্ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই ঘনীভূত মেঘের বৃষ্টিপাত হল সভাপতির পদ থেকে অপসারণ।

পরিবর্তে নিয়ে আসা হল গুরুপদ টুডুকে। তাঁর সহধর্মীনি মমতার মন্ত্রীসভার সদস্যা সন্ধ্যারাণী টুডু। দল শান্তিরামকে যতই অপসারণ করুক না কেন, এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার মোড়ে মোড়ে একটাই আলোচনা, বকলমে দল চালাবে শান্তিরামই।

এখান থেকেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে। পুনরায় শান্তিরাম যদি ব্যাটন ধরে তাতে লাভবান হবে গেরুয়া শিবির।

জেলার মানুষের আশঙ্কা ৯টি বিধানসভা নিয়ে পুরুলিয়া জেলায় অর্ধেক বিরোধীদের হাতে না চলে যায়! কারণ প্রতিষ্ঠান বিরোধী জোড় হাওয়া ধাক্কা মারছে অযোধ্যা পাহাড়ে। সেক্ষেত্রে ২১ এই অকাল পদ্মবৃষ্টি না হয়ে যায় পুরুলিয়া জুড়ে!

সম্পর্কিত পোস্ট