সংক্রমনের বাড়বাড়ন্তের কারণ কি তবে অটো! উত্তর খুঁজছে পুরসভা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আতঙ্কের নাম আটো। তারই মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়াচ্ছে করোনা। সম্প্রতি এমনই তথ্য হাতে এসেছে পুরসভার। আর তাতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শহরের বুকে পরিবহনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল অটো।
বাস ট্রাম ট্রেনের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন অটো শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। কিন্তু যাত্রীদের সচেতনতার অভাবে খুব সহজেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এই মারণ ভাইরাস।
প্রশাসনের হাজারো সর্তকতা স্বত্তেও কলকাতায় সংক্রমণ বাগে আনা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়েই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে যার কেন্দ্রে রয়েছে অটো। হাসপাতাল হোক কি বহুতল আবাসন, পূর্ব কলকাতার ইএমবাইপাস লাগোয়া এলাকাগুলি যেন হয়ে উঠেছে মারণ ভাইরাসের হটস্পট।
আর তার জেরেই ওই সব এলাকায় ক্রমশই বেড়ে চলেছে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা। এখন দেখা যাচ্ছে অটো চালকেরা কার্যত উপসর্গহীন হওয়ায় নিজেরা জানতে পারছেন না বুঝতেও পারছেন না যে তাঁরা সংক্রমিত। এই অবস্থাতেই তাঁরা চালাচ্ছেন অটো। আর সেই অটো ধরে যাতায়াত করছেন যারা তাঁরাই সংক্রমিত হচ্ছেন।
আর এই অটোতে করে যাতায়াতের ওপর বেশ ভালই নির্ভরশীল পাটুলি, বাঘাযতীন, কালিকাপুর, মুকুন্দপুর, রুবি এলাকার মানুষেরা। আর এইসব এলাকাতেই এখন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে মারণ ভাইরাস।
এমনকি মুকুন্দপুর বা আনন্দপুরে যে সব হাসপাতাল রয়েছে সেখানকার চিকিৎসকরা থেকে শুরু করে নার্স, কর্মী মায় রুগীর পরিজনেরাও অটোতেই যাতায়াত করেন। ফলে তাঁদের হাত ধরেও হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।
করোনা আক্রান্ত অমিত শাহ, দিল্লির এইমসে চিকিৎসাধীন
এই বিষয়ে পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালগুলিতে যাতায়াত করা বা মুকুন্দুপুর ছুঁয়ে যাদবপুর থেকে নয়াবাদ বা গড়িয়া রুটে চলাচল করা দু’জন অটোচালক ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। এখন এদের অটোতে চড়ে আর এদের সংস্পর্শে এসে কতজন সংক্রমিত হয়েছেন সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে সেটা যে ঘটবে না এমনটাও নয়।
তিনি বলেন, বরঞ্চ মনে করা হচ্ছে অটো চালকদের মাধ্যমেই পূর্ব কলকাতার একটা বড় অংশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। এই কারণেই পুরনিগমের তরফে অটোচালকদের মধ্যে কতজন উপসর্গহীন করোনা রোগী আছে তা জানতে আগামী ৪ আগস্ট মুকুন্দপুরে ফের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শিবির করা হচ্ছে।’
একই সঙ্গে পুরনিগমের স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিকদের আশঙ্কা, শুধু অটোচালকরাই নয়, এলাকার রিকশাচালক এবং হাসপাতাল লাগোয়া নানা গেস্ট হাউজের কর্মীরাও সংক্রমণের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে কাজ করছেন।
মুকুন্দপুর ও আনন্দপুর এলাকায় নানা হাসপাতালের পাশে যে সমস্ত ছোট দোকান ও রেস্তোঁরা চলছে সেগুলিও যে সংক্রমণের অন্যতম ক্ষেত্র তা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বাইপাসের দু’পাশের সমস্ত হাসপাতালে ছুঁয়ে চলা অটো নিয়ন্ত্রিত হয় যাদবপুর কেপিসি হাসপাতালের পাশের স্ট্যান্ড থেকে।
সেখানকার ছয়টি রুটের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস জানিয়েছেন, ‘এখন হাসপাতালের কর্মী ও রোগীর পরিবারের লোকেরাই অটোতে উঠছেন। তাই কে সংক্রমিত আর কে নন, বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিবার যাত্রা শেষে চালকরা গাড়ি স্যানিটাইজ করছেন। তাও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।’
উল্লেখ, বাইপাস লাগোয়া মুকুন্দপুর এলাকার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে কলকাতার মধ্যে রেকর্ড সংক্রমণ ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৪০০ ছুঁইছুঁই। স্বাভাবিক ভাবেই এবার শহরের বুকে অটো পরিষেবা কতটা নিরাপদ বা ওই সব এলাকায় অটো পরিষেবা বজায় রাখা হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছেন শহরের নাগরিকেরাই।