হায় রে কখন এল শমন অতিমারীর বেশে: রুপকথা নয় সে, নয়

রমেন ঘোষ, নয়াদিল্লি

সময়টা তখন বেশ আমেজভরা, পুরানো বছর শেষ হয়ে নতুন বছর আসছে, অর্থাৎ গ্রাম, শহর মিলিয়ে একটা বেশ খুশির ফুরফুরে হাওয়া। গ্রাম বাংলায় তখন রবি শষ্যের চাষ, আর শহরে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। হঠাৎ কোথা থেকে এল ডাকিনি যোগিনীর দল, তাদের নাম করোনা ভাইরাস, বিজ্ঞানের ভাষায় কোবিড-১৯। সমগ্র দেশবাসী কেন, বিশ্ববাসীকে মহামারীর করাল বাঁধনে বেঁধে এখনও পর্যন্ত নৃত্য করে চলেছে সেই মহামারী করোনা ভাইরাস, ভারতবর্ষে আতঙ্কের আরেক নাম।

পুরানো সব অভ্যাস, জীবনছন্দ যেন হঠাৎই হারিয়ে গেল। দেশের সময়কাল যেন দুভাগে ভাগ হয়ে গেল, করোনার আগের সময়, এবং পরের সময়। দিনভর পরিশ্রমের পর কিষাণ, ক্ষেতমজুর বাড়ি ফিরে কাঁঠালের কাঠের পিঁড়িতে কিষানির সঙ্গে আলাপ এখন যেন সূদুর অতীত, কারণ, এখন সবার মাথায় ঘুরছে স্বাস্থ্যবিধান, ফোন করাও অনেকের কাছে আতঙ্ক, কারণ সেখানেও করোনার সতর্কবার্তা।

কেরলে প্রথম চিনে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া এক পড়ুয়ার শরীরে প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়েও সব কিছু ছিল স্বাভাবিক। ট্রেন, বিমান(দেশীয় ও আন্তর্জাতিক), সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। অনেকে মনে করেন, সেটাই হয়তো ভাইরাসের এই করাল রূপ ধারণ করার অন্যতম কারণ।

২৫ মার্চ দেশে জারি করা হল লকডাউন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যার রেশ এখনও চলছে। তবে ততক্ষণে হয়ত অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে।

সেই সময় দিল্লি থেকে বাংলার মাটিতে বর্ধমানের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলাম আমি। পুরো করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব এবং রোগ বাদ দিয়ে রোগীর সঙ্গে মানুষের লড়াই, ঘৃণা চাক্ষুষ করেছি আমি, করোনার মুখোশের আড়ালে কীভাবে সাম্প্রাদায়িকতার জন্ম নিয়েছে সেটাও দেখেছি আমি।

পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতি কী অবস্থা, সংবাদমাধ্যমে কাজ করার দরুণ প্রত্যক্ষ করেছি। সেই সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, একদল স্বার্থন্বেষী মানুষ কীভাবে এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে উঠেপড়ে লেগেছ।

ধর্মের আফিম, যু্দ্ধের আফিম, অলৌকিকতার আফিমের নেশায় মানুষকে মশগুল করিয়ে সেই সুযোগে একের পর এক সরকার সংস্থা বেসরকারিকরণ, চাকরি ছাঁটাই এর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলেই নীরব থেকেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

করাল মহামারী থেকে অতিমারীতে পরিণত হওয়া করোনা বহুমূল্যবান প্রাণ কেড়েছে। বহু শিশুর  মুখের বুলি ফোটার আগেই তার অভিভাবক হারিয়েছে, সন্তানহারা হয়েছেন বহু মা, একমাত্র সম্বল স্বামী হারা হয়েছে সত্য বিবাহিত যুবতী।

এবার আসি বর্তমান প্রসঙ্গে। দিল্লিতে ফিরলাম প্রায় ৫ মাস পর। ফিরে এসে কী দেখলাম, তা জানার আগ্রহ সবার রয়েছে। দিল্লি কিছুটা ছন্দে ফিরেছে, কারণ, সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কমেছে সংক্রমণের হার।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/breaking-news-adhir-chowdhury-is-the-next-provincial-congress-president/

তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখা হয়েছে মেট্রো পরিষেবা, যা জালের মতো বিছিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত।

ফলে নিত্যযাত্রী, বা আমাদের মতো প্রতিদিন খবরের সন্ধানে ছুটে বেড়ানো লোকজনদের নিত্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধান মেনে চলা হচ্ছে ভালমতোই। মুখে মাস্ক বা হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হচ্ছে যে কোনও জায়গায় গেলেই। এসব দেখেশুনে কেমন যেন চাপা ভয় তাড়া করছে সবাইকে।

ভবিষ্যতে কী হবে কেউ জানে না, কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সবাই ধোঁয়াশায়। স্কুল, কলেজের গেট কবে খুলবে তাও কারও জানা নেই। এই পরিস্থিতি একটা মৃত্যুপুরীর মধ্যে আমরা যেন বাস করছি।

এরইমধ্যে কিন্তু বেশ কয়েকটা কাজ করে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ হয়ে গিয়েছে। সেখানে পুরোহিত ও কর্মকর্তাদের একাংশ করোনায় আক্রান্ত হলেও, তাকে উপেক্ষা করেই ভিতপুজো হয়েছে।

প্রস্তাবিত হয়েছে নতুন শিক্ষানীতি। সংসদ খুললে তা নিয়ে হয়তো জোরদার আলোচনা হবে। বিতর্কের তুফান উঠবে। করোনার ফাঁড়া কাটবে ধীরে ধীরে।

ততদিন পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে, সাবধানে ও সুরক্ষিত থাকবে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট