বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্ষয়িষ্ণু বিজেপি, গোষ্ঠীদ্বদ্বের শিখন্ডী দিলীপ নাকি সুব্রত?
সহেলী চক্রবর্তী
তৃণমূল কংগ্রেসে মাদার বনাম যুব সংগঠনের দ্বন্দ্ব সর্বজন বিদিত। তবে এবার সেই একই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল বিজেপিতে। সৌজন্যে দুই হেভিওয়েটে বিজেপি নেতা। একজন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অন্যজন বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খান।
দ্বন্দ্বের কারণ জেলায় যুবসভাপতি নির্বাচন। বিজেপির মত একটি সাংগঠনিক ও শৃঙ্খলাপরায়ন দলেও এমন কিছু হতে পারে, তাতে অবাকই হচ্ছেন অনেকে। তবে শেষ পর্যন্ত ৩০ আগস্ট, রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই কোন্দল ঢাকলেন সৌমিত্র। বললেন “পূর্ব তালিকাই বহাল থাকছে। তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসাবে দিলীপ দা প্রয়োজনে কিছু রদবদল করতে পারেন।”
বিষয়টি দলগতভাবে তাঁরা মিটিয়ে নিলেও যদি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা যায় তাহলে সর্বভারতীয় একটি দলের থেকে এই জিনিস কখনই কাম্য নয়। হয়তো অনেকেই বলবেন এক সংসারে থাকতে গেলে ঠোকাঠুকি হবেই। তা নিয়ে অত মাথা ঘামালে চলবে না। বরং তারা যে একসঙ্গে আবার কাজ করছেন সেদিকেই দৃষ্টিপাত করা হোক।
সেসব নাহয় ঠিক আছে, কিন্তু এটাই প্রথম বার নয়। এর আগেও রাজ্য বিজেপি স্তরে একাধিকবার দিলীপ ঘোষকে নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন খোদ দিলীপ বাবু। তাঁর নিশানায় ছিলেন মুকুল রায়, অর্জুন সিং, রাহুল সিনহা, সৌমিত্র খান সহ রাজ্য বিজেপির অনেকেই।
কিন্তু যারা বলছেন আগামীদিনে পশ্চিমবাংলার রাজপাট থাকবে বিজেপির হাতে, তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন এত অন্তর্কলহ নিয়ে তাঁরা আগামীদিনে ক্ষমতা কায়েম করতে সক্ষম হবেন তো? বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক ঘটনায় সৌমিত্র খানকে যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে, তা দলের পক্ষে ইতিবাচক।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/tmc-leader-jangipur-jakir-hossain/
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এর আগে বিজেপির যুব সংগঠনকে এত সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। আগামীদিনে যুব-রাই দলের ভবিষ্যৎ। সৌমিত্র খানের ভূমিকাকে দলের যুবদের বিরাট অংশ সমর্থন করলেও বাধা আসছে মুরলীধর সেন লেন থেকে।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য মুকুল রায়ের হাত ধরে ১৮ টি সিট পেয়েছিল বিজেপি। সেইসময় মুকুল রায়ের যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল অভিযোগ ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই তৎপরতা আর দেখা যাচ্ছে না।
তবে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দিকে দিকে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তার জন্য কী সত্যিই সবক্ষেত্রে দিলীপ ঘোষ দায়ী? নাকি দিলীপ ঘোষকে শিখন্ডী খাড়া করে অন্য কেউ সুতো গোটাচ্ছেন?
সরেজমিনে তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে উঠে এল বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নাম। অনেকেই হয়ত এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নয়। প্রাচীন এই দলটি সভাপতি চালিত হলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দলের রাশ রয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদকের হাতে।
রাজ্য বিজেপির একাংশের অভিযোগ জেলায় জেলায় সভাপতি পদে কিছু অযোগ্য ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়েছে। তারা জেলায় পদ্ম চাষের জন্য জমি উর্বর করা তো দূর, বরং ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছাতে।
অভিযোগ, জেলায় বিভিন্ন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয় অভিযোগ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যে অর্থ সরবরাহ করা হয়, সেখান থেকে টাকা আত্মসাৎ পর্যন্ত তারা করে থাকেন। সেকথা সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের অজানা নয়।
এতদিন যেহেতু দিলীপ ঘোষ সংগঠনের উপর জোর দেননি তাই দলের রাশ টানতেও এখন ব্যর্থ তিনি। প্রশ্ন উঠছে এখানেই। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যারা সবসময় আঙুল তুলতে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ভিতরের এই গল্প দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবধি কী পৌঁছায়নি? কেন সাংগঠনিক সম্পাদকের হাতে কুক্ষিগত থাকবে ক্ষমতা? কেন দল পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য সভাপতিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না?
বিধানসভা নির্বাচনের বাকী মাত্র ৯ মাস। তার আগে সবদলই ব্যস্ত একদম নীচুতলা থেকে দলকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে জেলায় জেলায় বিজেপির খন্ডচিত্রই চোখে পড়বে। তার কারণ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। একথা কানাঘুষো ভেসে আসছে বিজেপির অন্দরমহল থেকে।
অন্যদিকে যখন যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছেন সৌমিত্র খান তখন বাধা দেওয়া হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বিজেপির যুব মোর্চার অভিযোগ, “উনি চান না সৌমিত্র খান কলকাতায় থেকে কাজ করুন। একাধিকবার তিনি সৌমিত্রকে ফিরে যেতে বলেছেন বিষ্ণুপুরে। এমনকি হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর সৌমিত্র যখন ছুটে গিয়েছিলেন সেখান থেকেও সৌমিত্রকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ।”
তাদের আরও অভিযোগ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের অঙ্গুলি হেলনে দল চালাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। তাতেই রাজ্য সভাপতির উপর বিরক্ত দলীয় নেতৃত্ব। এরফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্যের দক্ষ সংগঠক। মাঝখানে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং-এর সঙ্গেও বিবাদ চরমে উঠেছিল দিলীপ ঘোষের।
ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন একদা ডাকসাইটে নেত্রী রুপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মত নেতৃত্বরা। বরং ফ্রন্টফুটে এসেছেন অগ্নিমিত্রা পল। কিন্তু কতদিন তাঁকে মাঠে নেমে কাজ করতে দেওয়া হবে? প্রশ্ন তুলছেন বিজেপিরই একাংশ।
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার আগে মাঠে নেমে মার খেয়ে সংগঠনের কাজ করলেও ইদানিং তাঁকে প্রায়দিনই ঠান্ডা ঘরের স্টুডিওতে তর্ক বিতর্কতেই বেশী দেখেন বাংলার মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর সাধের উত্তরবঙ্গে যাদের উপর ভর রেখে বৈতরনী পার করল গেরুয়া শিবির সেই নিশীথ প্রামানিক ও জন বার্লাও ঘরের ভিতর।
পাশাপাশি একদা তৃণমূলের হেভিওয়েট যারা বিজেপিতে এসেছেন যেমন মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত, শোভন চ্যাটার্জী, নিশীথ প্রামাণিক- তাঁরা সকলেই ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করছেন দিলীপ ঘোষের দাপটে। থুড়ি সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ইশারায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার কথায়, “আমরা তৃণমূলকে উদ্দেশ্য করে বলতাম ওদের দলে একটাই পোস্ট। বাকী সব ল্যাম্পপোস্ট। আর আমাদের ক্ষেত্রে বলি এখন আমাদের দলে রাজ্যে একটাই পোস্ট, বাকী সব বাঁশের খুঁটি। অর্থাৎ ল্যাম্পপোস্টের থেকেও নীচু।”
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-fire-department-is-preparing-to-provide-better-services-to-the-people-every-pujo-pandal-has-a-fire-extinguisher/
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিতে গেলে বিজেপির অন্দরে এমন নেতৃত্বের প্রয়োজন, যিনি মাদার ও যুব উভয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে পারবেন।
শুধু তাই নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মাটি চষে বেরিয়েছেন তাতে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের অবস্থান তাঁর হাতের তালুতে।
তবে বিজেপির ক্ষেত্রে কিন্তু এর কোনোটাই নেই। উল্টে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই প্রকট হচ্ছে গোষ্ঠী কোন্দল। অভাব রয়েছে দক্ষ সংগঠকের।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ক্ষেত্রে লড়াইটা খুব একটা সুখকর হবে না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবিলম্বে যদি জেলাগুলিতে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল না করেন তাহলে আগামী দিনে হালে পানি পাওয়া গেরুয়া বাহিনীর পক্ষে বেশ কষ্টকর হবে।