দেশে সবচেয়ে বড় অতিমারীর নাম বিজেপিঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ শনিবার হাথরসকাণ্ড নিয়ে একদিকে যেমন নয়ডার রাস্তায় নেমে পড়েছেন রাহুল গান্ধি-প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, তেমনি কলকাতার রাজপথে নেমে পড়লেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আগেই সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পূর্বঘোষণা মতো শনিবার সেই ইস্যুতে কলকাতায় মিছিল করলেন তিনি। মিছিল-শেষে যোগী প্রশাসনকে যেমন বিঁধলেন, তেমনই বিজেপির বিরুদ্ধেও সুর চড়ালেন। এদিন তাঁর বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছে, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের বেশ কিছুটা আগেই প্রচারের রাজনৈতিক সুরটি বেঁধে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। হাথরসের ঘটনাকে সামনে রেখে গ্রাম থেকে শহরে দলীয় নেতৃত্বকে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশও দিলেন তৃণমূল কর্মীদের।

গত বছর লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে প্রার্থীদের হয়ে প্রচারের পর যে পদযাত্রা করতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার রাজপথে সেই স্মৃতি ফিরল কোভিড আবহে। তবে এটা কোনও রাজনৈতিক মিছিল নয়। বরং অন্যায়ের প্রতিবাদে এই পদযাত্রা। ইস্যু উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ, খুন। এহেন নৃশংস ঘটনার বিধি মানায় কোনও ত্রুটি নেই।

একেবারে সামাজিক দূরত্ব একেবারে মাপা। একটুও কাছে ঘেঁষার জো নেই। মিছিল যতই দীর্ঘ হোক, ‘ভিড়ে ঠাসা’ কথাটা বোধহয় বলা যাবে না। সকলেই নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে হাঁটছেন। প্রতিবাদ মিছিলে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।

ঘড়িতে ঠিক বিকেল ৪টে। বিড়লা তারামণ্ডল থেকে হাঁটা শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে অগণিত সমর্থক, সাধারণ মানুষ। তৃণমূলের মিছিল নয়, দলিত তরুণীর গণধর্ষণ, খুনের প্রতিবাদ আজ মমতার প্রতিবাদী পদক্ষেপে পা মিলিয়েছেন আমজনতাও। সঙ্গে ফেস্টুন, ব্যানার, গান, স্লোগান।

বিড়লা তারামণ্ডল থেকে জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিট ফ্লাইওভার ধরে ধর্মতলার মেয়ো রোডে মিছিল পৌঁছতে লাগল মেরেকেটে ২৩ মিনিট। সেখানে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বক্তব্য রাখতে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/sushant-committed-suicide-not-murder-ames-reported-in-the-viceroys-report/

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই তাঁর জেলাসফর শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। উত্তরবঙ্গের সেই সফরের প্রশাসনিক বৈঠকে ভোটের আগে সমস্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর এ দিন দিলেন রাজনৈতিক দিকনির্দেশ। অর্থা‍ৎ, করোনা আবহেই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক— উভয়দিক থেকেই তাঁর ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই কেন এই পরিস্থিতিতেও পথে নামতে হল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমরা অতিমারির জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিলাম না। অথচ বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়ে মিটিং-মিছিল করছি।

প্রসঙ্গত, হাথরস-কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার হাথরস রওনা দিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। কিন্তু সেখানে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ-প্রশাসনের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। পুলিশের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যান ডেরেক ও’ব্রায়েন। মহিলা সাংসদদেরও নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ।

সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন মমতা বলেন, আমার মন হাথরসে পড়ে আছে। ওই পরিবারটিকে দেখার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামে ঢোকার ১ কিলোমিটার আগে সকলকে আটকে দেওয়া হয়। প্রতিমা মণ্ডলকে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে। মমতা বলেন, আমি ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলাম দলিত পরিবারটির সঙ্গে। কিন্তু ওদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশে কোথাও এমন হয়?

এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখন দেখা করতে দেওয়া না হলেও তিনি হাতরসে যাবেনই। বলেন, এনদিন তো দেখা করবই। সময় তো একদিন আসবেই।

এদিন মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ভোটের সময় দলিতের বাড়িতে খাবে, ছবি তুলবে। তারপর ভোট হলেই অত্যাচার। তাঁর কথায়, ওরা বলে আমি তোষণ করি। আমি বলি আমার জাত নেই। যখন যার ওপর অত্যাচার হবে আমি সেই জাতের। দলিত কন্যা নির্যাতিতা হয়েছে। তাঁকে ধর্ষন করে খুন করা হয়েছে। এখন আমি দলিত। হিন্দুর ওপর আক্রমণ হলে আমার চেয়ে বড় হিন্দু কেউ নেই। মুসলমানের উপর আক্রমণ হলে আমি সংখ্যালঘু। মানুষে মানুষে বিভাজন আমি মানি না। আমরা ধর্ম মানবতা। হাথরস নিয়ে মিছিলে এভাবে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে একহাত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল থেকে তাঁর বার্তা রামরাজ্যে সীতাদের দহন হচ্ছে কেন যোগী সরকার জবাব দাও।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন করোনার থেকে বড় প্যান্ডামিকের নাম বিজেপি। এর বিরুদ্ধে সতর্ক না হলে দেশ শেষ হয়ে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নমশূদ্রদের উপর কি কম অত্যাচার হচ্ছে? পঞ্জাবিরাও কৃষি বিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মমতার প্রশ্ন, তুমি কে সব ঠিক করার?

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/fraud-of-80-lakhs-rupeesin-the-name-of-installing-mobile-towers-sealed-by-two-companies-from-rajarhat/

তাঁর অভিযোগ, ক্রমেই ওয়ান নেশন, ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টির দিকে এগোচ্ছে দেশ। রাষ্ট্রপতি শাসনই কি ভবিতব্য হতে চলেছে এই দেশে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির শাসনে দেশে আর গণতন্ত্রের কিছু অবশিষ্ট নেই। একনায়কতন্ত্র চলছে, এজেন্সির শাসন চলছে। কেউ কথা বলতে পারবে না। কিছু বলতে গেলে তাঁকে ভয় দেখানো হচ্ছে।

তাঁর প্রশ্ন এটা কি দেশ চলছে? রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মহাত্মা গান্ধীরা যেন কেউ এদেশে জন্মানইনি, উনিই(প্রধানমন্ত্রী) সব। বিজেপিই সব। শুধু ভাষণ দিয়েই চালাচ্ছেন সব।’ হাথরসের ঘটনা প্রসঙ্গে দিল্লির হিংসার কথাও এ দিন তুলেছেন মমতা।

তাঁর অভিযোগ, বিজেপি সকলের পদবি নিয়ে খেলা করছে। দেশের দলিত, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কৃষকদের ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে। অথচ এই সুযোগে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। হাথরসের ঘটনার প্রতিবাদে তফসিলি জাতিপ্রধান গ্রামে গিয়ে প্রচার চালাতে বলেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে প্রতিবাদ কর্মসূচিও শুরু করতে বলেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট