সামনেই পুজো-আলকায়দা জঙ্গি গ্রেফতার, খাগড়াগড়ের রিপিট টেলিকাস্ট নয় তো?
সহেলী চক্রবর্তী
করোনার করালগ্রাসে জর্জরিত গোটা দেশ। তার মাঝেই দুর্গাপুজোর আনন্দে একটু হলেও করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে মেতে উঠতে চাইছে বাঙালী। ঠিক সেই আনন্দ ও আতঙ্কের মাঝেই পুরোনো স্মৃতি উসকে খবর শিরোনামে মুশিদাবাদ। সম্প্রতি মূর্শিদাবাদের ডোমকল থেকে ৬ আলকায়দা জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
একইসঙ্গে কেরল থেকেও গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগের গ্রাফ ক্রমশ উর্দ্ধমুখী। পাশাপাশি রাজনৈতিক বাদানুবাদের আঁচ সূর্যের গনগনে তাপমাত্রার মত বেড়েই চলেছ। এই রাজ্যের শাসক বিরোধী দলগুলি একযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সরকারকে। সেই তালিকা থেকে বাদ যাননি রাজ্যপালও।
মূর্শিদাবাদের ঘটনা স্মৃতি উসকে দিয়েছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কান্ডের। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর দুর্গাষ্টমীর দিন খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কান্ডে দু’জন মারা যায়-শামিম ওরফে শাকিল আহমেদ এবং সুবহান শেখ। আব্দুল হাকিম গুরুতর জখম হয়।
বিস্ফোরণের সময় শাকিলের বউ রাজিয়া বিবি ও হাকিমের বউ অলিমা বিবি উপস্থিত ছিল। সঙ্গে ছিল ওদের ছোট শিশু। কোনক্রমে তারা প্রাণে বেঁচে যায়। সেই বিস্ফোরণের বাড়ি থেকে বহু অস্ত্র আর টাকা উদ্ধার হয়।
তদন্তে নেমে ভারতে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর বিশাল নেটওয়ার্কের কথা জানা যায়। এপার বাংলার মাটিকে ব্যবহার করে ওপার বাংলায় গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করার জন্য ধারাবাহিক নাশকতার প্রস্তুতি চলছিল বলে চার্জশিটে জানায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ।
তবে তদন্তকারী সংস্থা যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতে দেখা যায়, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটলেও তার লাটাই ছিল মুর্শিদাবাদে। বহুকাল আগে থেকেই বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, সকেট বোমা তৈরির আঁতুড়ঘর মুর্শিদাবাদ।
খাগড়াগড়-কাণ্ডের দোষীদের তালিকা ও ঘটনার পরম্পরায় এনআইয়ের জালে উঠে এসেছে লালগোলার মকিমনগরের খারিজি মাদ্রাসা থেকে শুরু করে বেলডাঙার বোরখা ঘর, ডোমকলের ঘোড়ামারার খারিজি মাদ্রাসা, বহরমপুর ও নবগ্রামের দু’টি গ্রাম— যথাক্রমে উপরডিহা ও তেলগড়িয়ায়র নাম।
সেবারও বর্তমান সরকার খাগড়াগড়কে মামুলি তত্ত্ব দিয়ে জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় বিজেপি বনাম শাসক তারজা বাংলার মানুষ দেখেছিল। তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম এইচ মির্জা গোটা বিষয়কে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগে সরগরম হয়ে ওঠে বঙ্গ রাজনীতি।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-state-government-is-keen-to-make-unemployed-youth-self-reliant-through-colorful-fish-farming/
তৎকালীন পুলিশ সুপার মির্জা বিস্ফোরণ স্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বোমা পরের দিন দুপুরে নিষ্ক্রিয় করে দামোদর নদীর চড়ে। পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে এত অস্ত্র এবং বোমা কার অনুমতিতে নষ্ট করা হল? তারপর রাজ্য বিজেপি খাগড়াগড় কাণ্ডে এনআইএ তদন্তের দাবি করে।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০। ৬জন আলকায়দা জঙ্গি ধরা পড়ার সঙ্গে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কথা উঠে আসবেই এটাই স্বাভাবিক। খাগড়াগড় কাণ্ডের সময় কেন্দ্রে তখন বিজেপি সরকার। বিস্ফোরণ কান্ডের তদন্তভার নিল এনআইএ। ফের রাজ্য বনাম কেন্দ্র বাকযুদ্ধ শুরু। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার বিষয় কেন্দ্র কেন হস্তক্ষেপ করবে?
প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও তদন্তের কাজ শুরু করলো এনআইএ। একদিকে তদন্ত, অন্যদিকে নবান্ন থেকে কেন্দ্র বিরোধী মন্তব্য। তদন্ত যত এগোল ততই জেএমবি জঙ্গি যোগের জট খুলতে শুরু করলো। এ রাজ্যে ছুটে এলো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল , এনএসজি চিফ, আইবি প্রধান এবং এনআইএ প্রধান, র। সরগরম বর্ধমান।
দুর্গাপুজো মাথায় উঠলো বর্ধমানবাসীর। তদন্তের জাল এতটা গভীর মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসাতে টান পড়লো। জানা গেল শিমুলিয়া মাদ্রাসার ভিতরেই জেএমবি জঙ্গিরা তাদের অপারেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করত।
একদিকে খাগড়াগড় অন্যদিকে শিমুলিয়া মাদ্রাসা – কিভাবে জঙ্গি মডিউল কাজ করতো তার খোঁজে নামলো এনআইএ। তদন্তের চার দিনের মাথায় বর্ধমান শহরে এক বাড়ি থেকে যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হল, তাতেই ছবি পরিস্কার যে জঙ্গিরা বড় কোনো টার্গেট নিয়েছিল।
এনএসজি অস্ত্র উদ্ধার করে দামোদর নদীর বালির চড়ে আবহাওয়া ও কেমিক্যাল পরিবেশ তৈরি করে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটালো। তার যা আওয়াজ আজও বর্ধমান শহরবাসীর কানে বাজে। যে বাড়ি থেকে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে, সেই বাড়ির মালিককে এনআইএ গ্রেফতার করে। টানা ১৪ দিন এনআইএ বর্ধমান, শিমুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে তদন্ত চালিয়ে যায়।
খোঁজ চললো জেএমবি মাথাদের। খাগড়াগড় কাণ্ডের মূল মাথা সোহেল মেহফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর পালিয়ে যায় নাসিরুল্লা। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান ক্যাফে হামলার মূল মাথা এই হাতকাটা নাসিরুল্লা। পাঁচ জঙ্গি নিয়ে ঢাকার গুলশন এলাকার হোলি আর্টিজন ক্যাফেতে হামলা করে নাসিরুল্লা।
বারো ঘন্টা জঙ্গীরা পনবন্দী করে ২২ জনকে হত্যা করে। তারমধ্যে একজন ভারতীয় ছিল বাকিরা সব বিদেশী নাগরিক ছিল। বাংলাদেশের কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি মারা যায়। পরে বাংলাদেশের আদালত হাতকাটা নাসিরুল্লাকে হোলি আর্টিজন ক্যাফে ২২ জনকে হত্যা করার অপরাধে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/soumitra-chatterjee-a-veteran-actor-suffering-from-corona-is-worried/
বর্ধমান খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তে উঠে আসে জেএমবি জঙ্গিরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক বানিয়েছিল। তদন্তের গতি যত বাড়ালো তত প্রকাশ্যে এল কেরল, হায়দারাবাদ, চেন্নাইতে এই জঙ্গিরা তাদের গতিবিধি চালাত। মূলত সংখ্যালঘু গরিব পরিবার থেকে ছেলেদের জেএমবি টার্গেট করতো।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, মুর্শিদাবাদ থেকে যে ক’জন গ্রেফতার হয়েছে তাদের অধিকাংশই গরিব পরিবারের। একথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন। অধীর বাবুর বক্তব্য এই প্রথম মুর্শিদাবাদ জঙ্গি যোগ নাম যোগ হয়নি। আগেও হয়েছে। অধীরের সুরে সুর মেলান বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহারা।
বর্তমান সরকারের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। মালদায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে জাল নোট ও অস্ত্র মজুতের মত তথ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে। মুর্শিদাবাদের ঘটনার তদন্তে নেমে এনআইএ সারা রাজ্য জুড়েই জঙ্গি যোগের খোঁজ চালাবে গোয়েন্দা সূত্র এমনটাই জানা গেছে।
তাই পুজোর আগে আলকায়দা জঙ্গির ধরা পড়া আর আজ থেকে ৬ বছর আগে বর্ধমান শহরের খাগড়াগড় ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক এনআইএ। পাশাপাশি এই ইস্যুতে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে গরমাগরম আবহাওয়া থাকবেই।
করোনা আবহ থাকলেও দুর্গাপুজোর দেরি নেই। তার মধ্যে রাজ্যে থেকে জঙ্গি গ্রেফতার। চলতি বছর শেষ হলেই নির্বাচনের ঘন্টা বাজবে। সব মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতি অন্য দিকে মোড় নেবে এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে।