ভোট দেবে না তা আবার হয় নাকি! এটাই তো সিস্টেম, জনতাকে লাইনে দাঁড়াতেই হবে
আকাশ চৌধুরী
‘জনপ্রতিনিধি’ মানেই তো জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসা আমজনতার নেতা। এটাই তো গণতান্ত্রিক নিয়ম। তবে সেই ‘জনপ্রতিনিধি’ যদি ভোটের পর মানুষের থেকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে যান, তাকে কি জননেতা বলা যায়? উত্তর, না বলা যায় না।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন দিল্লিবাসী সুরিন্দার সিং অহলুওয়ালিয়া। তিনি জিতেও যান। সেদিন তাঁকে মানুষের ঘরে ঘরে ভোট ভিক্ষা করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্ত ১৯ ঘুরে ২০ শেষের মুখে।
বর্ধমান ও দুর্গাপুর লোকসভার মানুষ সাংসদকে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষ সেভাবে কি পেলেন?এই প্রশ্নেরও উত্তর হবে না। কারণ সাংসদ মহদয় বেশিরভাগ সময় দিল্লিতে থাকেন। কালেভদ্রে উদয় হন। বর্ধমান স্টেশন যেদিন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো সেদিন কোথায় ছিলেন তিনি?
তিনি ছিলেন অডিও বা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। ব্যাপারটা খানিকটা “চোখে পড়ছে যদিও, তবুও আছে” ধরণের। জনসাধারণের শিক্ষা ও চিকিৎসা বা অন্যান্য কোনো সমস্যায় আদৌ কী তাঁকে পাওয়া যাবে? কে বলেছে পাবেন না! বাইপাশের বিজেপি অফিসে গেলই দেখা পাবেন ‘ডামি’ সাংসদকে। তাঁর সই করা চিঠি বা অন্য কিছু দরকার থাকলে বিজেপি অফিসে জানালেই হবে। এটা তো ভোটের সময় তিনি বলেননি।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bjp-leader-killed-in-uttar-pradesh-three-people-including-the-main-accused/
যদি বলতেন তাহলে হয়ত ইভিএমেই যোগ্য জবাবটা পেয়ে যেতেন সুরিন্দর সিং অহলুওয়ালিয়া। আপাতত তিনি ৫ বছরের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত সাংসদ। ২৪ সালে আবার কী হবে তা দেখা যাবে। গোটা করোনার সময় কোথায় ছিলেন সাংসদ সাহেব?
কেউ কি দেখতে পেয়েছেন সাংসদ মহোদয়কে? কেউ নাকি দেখেননি। এই হাথরাস কাণ্ডের পাল্টা বিজেপি পথে নামল। সেখানে সুরিন্দার সাহেব কি দেখা গেছে? যতদূর মনে পড়ে তিনি ছিলেন না। ব্যারাকপুর মনীশ শুক্লা খুনের সময় বাংলা জুড়ে বিজেপি যে তাণ্ডব করলো সেখানেও সুরিন্দার সিং অহলুওয়ালিয়া সাহেবকে দেখা যায়নি।
বর্ধমান শহরে বিজেপি কর্মীরা মাঝে মাঝে শাসক দলের কাছে আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। তখনও কি দেখা গেছে? এর উত্তর খোদ বর্ধমান বিজেপি নেতারা দিতে পারবেন।
যাইহোক ভোটের সময় কথা দিয়েছিলেন দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কল কারখানা খোলার দাবিতে সরব হবেন। ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে ২০২০ সালের অক্টোবরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তাঁকে একবারও সেই বিষয়ে বাক্য খরচ করতে দেখা যায়নি।
এমএমসি বন্ধ, হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার বন্ধ, এলস্টিল প্লান্ট দুর্গাপুরে বন্ধ, কাটোয়া এনটিপিসি প্রজেক্ট কেন বন্ধ, তার জন্য একটা বাক্যও তো খরচ করেননি। জীবন জীবিকার প্রশ্নেও কার্যত নীরব রয়ে গেলেন তিনি।
মোদী সরকার ঘোষণা করেছিল চাকরি দেওয়ার। কই সাংসদ মহোদয় কিছুই তো করলেন না সেই বিষয়ে? বর্ধমানের ইতিহাস তো সাক্ষী। যা যা বলে তিনি যে ভোট নিলেন মানুষ তো ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্ট কোনো এফেক্ট পেলো না। তাহলে এর দায় কার?
মানুষ প্রশ্ন করবেন না কেন? ভোটে জিতে সাংসদ এই অঞ্চল বা শিল্পাঞ্চল এর জন্য কিছু কি করলেন?
এই প্রশ্ন এখনই বর্ধমানের আনাচে কানাচে তুলতে শুরু করেছেন আমজনতা। মূলত বর্ধমান দুর্গাপুরের যে ক’টা বিধানসভা আছে তার মধ্যে বেশিরভাগF কৃষিভিত্তিক এলাকা। কৃষক কী উপকৃত হলেন? কৃষির উন্নয়নে কী কী আর্থিক অনুদান নিয়ে এলেন? বা সারাদেশ যখন কৃষিবিল নিয়ে উত্তাল তখন তাঁকে কী বর্ধমানের কৃষকরা দেখতে পেয়েছেন? এরকম কোন ছবি তো ধরা পড়েনি সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায়।
তাহলে নিন্দুকেরা যে বলেন : politics is the possible industry এটাই ঠিক শ্লোগান। মানুষ আপনাকে পাচ্ছেন না। আপনাকে খুঁজে যাচ্ছেন। আপনাকে হয়ত পাওয়া যাবে দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল বা কোনো পুজো ফিতে কাটতে। তখন মানুষ প্রশ্ন করবেন কিনা তার গ্যারান্টি দেওয়া যাচ্ছেন না।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-french-teacher-lost-his-life-fundamentalist/
আপনাকে একা দোষ দিয়ে যদিও লাভ নেই। লোকসভার তৃণমূল সাংসদ ছিলেন সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী। তারও আগে সিপিএম সাংসদ ছিলেন অনুপ সাহা। তারও আগে নিখিলানন্দ সর। তাঁর আগে সুধীর রায়, বলাই রায়- সব এক সরণিতে। আপনিই বা বাদ যাবেন কেন!
আলোচনা-সমালোচনায় বিদ্ধ করছি বটে। তবে এটাই তো সিস্টেম অফ পলিটিক্স। মানুষ ভোট দেবে। মানুষই মার খাবে। রেশন দোকানে মানুষ লাইনে দাঁড়াবেন। আপনাদের তো রেশন দোকানে তো দাঁড়াতেই হয় না। আপনারা বেতন পান। তারপর অবসরের সময়ও পেনশন পাবেন।
২৪ এর লোকসভা ভোটেও কমবেশি একই দাবি দেখা যাবে। শিল্পাঞ্চল, কারখানা খুলতে হবে। কৃষকের মান বৃদ্ধি করতে হবে। আল্টিমেটলি বিগ জিরো। মানুষ ভোট দেবে। কারণ এর নাম গণতন্ত্র। ভোট না দিলে আবার বিপদ। তাই সুরিন্দার সাহেব আপনি একা নন আপনার পিছনে এই পলিটিক্যাল সিস্টেম স্ট্যান্ড বাই।