মা দুর্গার আগমণেও দুঃখ ঘুচল না কোচবিহারের শোলা গ্রামের, চরম আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কোচবিহার শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে কোচ মহারাজার আদি বাসস্থান ভেটাগুড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে বোরভিটা এলাকায় মালাকার সম্প্রদায়ের বাস।
রাজ আমল থেকেই এলাকাটি সোলা শিল্পীদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। রাজ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোচবিহারের সোলার তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী যেমন মালা, মুকুট, বিশহরির মূর্তি,রাজবংশী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পূজা পার্বণের উপকরণ তৈরি করে আসছে এই গ্রামের বাসিন্দারা।
কিন্তু সম্প্রতি লকডাউনের কারণে মাথায় হাত পড়েছে তাদের। পরিবারের খরচ চালানো মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনরকম সরকারি অনুদান কিংবা কোন মানুষের সহযোগিতা পৌঁছয়নি এই এলাকায়।
অথচ এই গ্রামটি কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি সংলগ্ন। চূড়ান্ত অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন এই গ্রামের ৩৫ টি পরিবারের ২৮০ জন সদস্য। এরা সকলেই শোলা শিল্পী, রাজ আমলে থেকেই তাদের পরিচয় হয়ে আছে “মালাকার” হিসেবে।
স্থানীয় শিল্পী সোনালী মালাকার বলছেন,আসাম থেকে তাদের প্রধান কাঁচামাল সোলা আমদানি করতে হয়। করোনা আবহে কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। সমস্ত খাবার দোকান এবং বেসরকারি যানচলাচল বন্ধ থাকার কারণে কাঁচামাল আসাম থেকে নিয়ে আসাটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কাঁচামালের যোগান কম থাকায় সামগ্রী উৎপাদন করা হোক মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জীবনে ৩৮ বছর ধরে সোলার সামগ্রী তৈরি করছেন ৭৩ বছর বয়সের পার্বতী মালাকার। বয়সের ভার চোখে মুখে প্রকাশ পায়। আজও মালা তৈরি করছেন তিনি।
তাঁর কথায়, বছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় বাঙালীদের, এই অনুষ্ঠানে শোলার মালা একটি অন্যতম উপকরণ। দুর্গাপূজার সময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পূজা-পার্বণে শোলার তৈরি সামগ্রী বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, মা দুর্গার অলংকরণ থেকে শুরু করে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মনসা পূজা পর্যন্ত এই সোলার অলংকারের মাহাত্ম্য রয়েছে। কিন্তু চলতি বছর বিয়ে প্রায় বন্ধ, পূজা অর্চনাও খুব একটা বেশি হচ্ছে না। তাই সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে না। ঘরে অর্থের অভাব রয়েছে, বাচ্চাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনার ক্ষেত্রে ও সংকট দেখা দিয়েছে। এভাবেই চলছে সংসার।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-all-india-democratic-womens-association-roared-against-the-oppression-of-women/
স্থানীয় বাসিন্দা মন ভোলা বর্মন অভিযোগের সুরে বলেন, সরকার আমাদের কথা ভাবে না। ক্ষুদ্র কুটির শিল্প হিসেবে আমাদের গুরুত্ব যথেষ্ট রয়েছে, এই বিষয়ে রাজ্য সরকার প্রতিনিধি বিধায়ক, পঞ্চায়েত তাদের সাথে আলোচনা করেছিলাম। লাভ হয়নি। কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামানিক আমাদের এলাকার বাসিন্দা বলা যায়, সেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।বিনা সরকারের সহযোগিতায় আমরা আজ ঐতিহ্য এবং মানুষের আনুষ্ঠানিক পরম্পরা রক্ষা করে চলেছে আমাদের সামগ্রিক মাধ্যমে।
তার কথায়, এভাবে চলতে থাকলে আর বেশিদিন পারবোনা। গ্রামের বেশিরভাগ যুবকরাই ভিন রাজ্যে চলে গেছে কাজের জন্য।পারিবারিক কাজ তারা শিখেছে কিন্তু অর্থসংকট এতটাই এবং সরকারি অনুদান না থাকার কারণে তারা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে পেটের স্বার্থে। এভাবেই চলছি আমরা।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, এবং সমগ্র আসাম জুড়ে রাজবংশী কামতাপুরি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। এই সম্প্রদায়ের প্রতিটি অনুষ্ঠান পূজা-পার্বণে সোলার তৈরি মালা টোপর এবং অন্যান্য সামগ্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গোটা এলাকায় এই জিনিসের বিতরণ করে আসছে মাত্র এই কয়েকটি পরিবার এর মানুষ। তাদের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ অবশ্যই কাম্য।
একদিকে যেখানেই পার্টি শিল্পীদের জন্য ক্লাস্টার তৈরি করে তাদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে হাত লাগিয়েছে সরকার, তেমনি সোলা শিল্পীরাও দাবি করছেন সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের।