সৌজন্যতার বিরল নজির, মমতার ছবি হাতে বিধানসভার বাইরে আবেগপ্রবণ রাজীব

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দলবদল অনেকেই করছেন। তৃণমূল থেকে বিজেপি, বিজেপি থেকে তৃণমূল এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচার-আচরণ ভালোভাবে নেয়নি দল।

প্রথম অরাজনৈতিক একটি সভা থেকে দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তিনি নীরব থেকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলসূত্রে খবর, রাজীব আশা করেছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর এই সরব হওয়ার প্রসঙ্গে পাশে পাবেন সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

বরং ঘটল উল্টোটা। ঘনিষ্ঠ মহলই জানাচ্ছে, মন্ত্রীত্ব ছাড়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কথা বলেননি তৃণমূল সুপ্রিমো ওরফে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত শুক্রবার বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজীব। তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয় রাজীবকে নিয়ে। তখনই উঠে আসে তার বিজেপি যোগের ইঙ্গিত। প্রত্যাশিতভাবেই আজ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের সদস্য পদ ছাড়লেন না এখনই। এই বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে খুব স্বাভাবিক হলেও সেখানে নতুন করে সৌজন্যতার বিরল নজির গড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বিধান সভা থেকে বেরিয়ে আসার সময় রাজীবের হাতে ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। শুধু তাই নয়, এদিনও যথেষ্ট আবেগপ্রবণ ছিলেন তিনি। তবে একবারের জন্যেও কোনরকম ভাবেই দলকে আক্রমণ করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং তিনি মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মায়ের মত।

মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দৃশ্যের সাক্ষী ছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশের মানুষ।

কোনদিনই রাজ্য রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানাতে দেখা যায়নি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দলে থাকাকালীন বিরোধীদেরও কড়া সমালোচনা তিনি করেছেন। তবে তা ছিল গঠনমূলক। কোনদিনই শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে সেই আক্রমণ ব্যক্তিগত স্তরে পৌঁছয়নি। অন্যথা হয়নি আজও।

এমনকি আগামীদিনেও তিনি যে কোনোরকম ব্যক্তিগত আক্রমণ কাউকেই করবেন না, সে কথা নিশ্চিত করে জানান আজ রাজীব।

একথা রাজনৈতিক মহলে বারবার উচ্চারিত হয় যে, শাসক বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বরা বারবার একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিষয়ে আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলেও সেখানে কোনভাবেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসেনি।

রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো রবিবার অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেবেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক ঘরানা হবে সম্পূর্ণ অন্য। হয়তো বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নিয়মমাফিক বিরোধী অর্থাৎ এক সময় নিজের দলের প্রতি তাঁকে চড়া ভাষণ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিশানা মন্তব্য কোনটাই শালীনতার মাত্রা ছাড়াবেনা সেটা কার্যত স্পষ্ট।

শুরু সংসদের বাজেট অধিবেশন, গণতন্ত্র দিবসের দিন লালকেল্লার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক- মন্তব্য রাষ্ট্রপতির

২০১১ সালের পর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ক্ষোভ ছিল দলের মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার প্রতি। তাঁর ক্ষোভ ছিল যারা দুর্নীতি করেছেন সেসব নেতাদের প্রশ্রয় প্রসঙ্গে। তবে সেসব কিছুই আজ ম্লান হয়ে গেল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মমতার ছবি যখন হাতে নিয়ে বিধানসভা থেকে বের হলেন তখনই।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে সৌজন্যের রাজনীতি করেন সেটাতেই বারবার আকৃষ্ট হয় রাজ্যের যুব সম্প্রদায়। বর্তমান রাজনীতিতে হারিয়ে যেতে বসেছে সৌজন্যতা। রাজনীতিকদের মুখে কুকথার বুলি ক্রমশ মাত্রা ছাড়াচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে বঙ্গ সংস্কৃতি।

তবে যে স্বাস্থ্যকর রাজনীতির পরিচয় আজ রাজীব দিলেন, তার জন্য তাঁকে স্যালুট জানাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। কারণ আগামী দিনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতৃত্বদের রাজনীতির মান ধরে রাখতে রাজনীতির ময়দানে বড়ই প্রয়োজন।

সম্পর্কিত পোস্ট