দিল্লি যখন পুড়ছিল কোথায় ছিলেন অমিত শাহ, লোকসভায় প্রশ্ন অধীরের
অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ বর্মা, কপিল মিশ্রদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে এদিন লোকসভায় কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ মিনাক্ষী লেখি।
দ্য কোয়ারি ডেস্ক : রাজধানী দিল্লি যখন পুড়ছিল কোথায় ছিলেন অমিত শাহজি?
দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এভাবেই আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ অধীরের
তাঁর প্রশ্ন, দিল্লিতে যখন হিংসা ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন কোথায় ছিল সরকার? অধীর দাবি করেন, কিভাবে দিল্লিতে তিনদিন ধরে হিংসার ঘটনা অব্যাহত থাকল, সরকারকে, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এর জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, দিল্লির ঘটনায় কেউ দাবি করছেন হিন্দুরা জয়ী হয়েছে, কেউ দাবি করছে মুসলিমরা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মানবতার পরাজয় ঘটেছে।
দেশের মধ্যে দক্ষতায় সেরা দিল্লি পুলিশ থাকতেও তিনদিন ধরে লাগাতার হিংসার ঘটনা কিভাবে ঘটল তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে অধীর দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে মুসোলিনির সঙ্গে তুলনা করে কটাক্ষ করেন।
তিনি বলেন, ‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বেহালা বাজাচ্ছিলেন। ঠিক তেমনই রাজধানী দিল্লি যখন হিংসার আগুনে জ্বলছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ অধীরের,পাল্টা আক্রমণে বিজেপি সাংসদ মিনাক্ষী লেখি
অন্যদিকে, দিল্লির হিংসার ঘটনায় যাদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে দায়ী করছে বিভিন্ন মহল ও বিরোধীরা, সেই অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ বর্মা, কপিল মিশ্রদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে এদিন লোকসভায় কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ মিনাক্ষী লেখি।
তিনি কংগ্রেসের জবাবে বলেন, আপ নেতা তাহির হুসেনের বাড়ি থেকে বোমা ছোড়া হয়েছে।
মানুষকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়েছে। অ্যাসিড হামলাও করা হয়েছে। এরাই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
কেন তাঁদের প্রতিবাদ? কারণ, সরকার কিছু সংখ্যলঘু মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালাচ্ছে মানুষ।
কংগ্রেসকে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, আর আপনারা এর জন্য কপিল মিশ্র ও দিল্লি পুলিশকে দোষ দিচ্ছেন?
এছাড়াও বিজেপি সাংসদ মিনাক্ষি লেখি বলেন, অনুরাগ ঠাকুর ও প্রবেশ বার্মাকে দিল্লি হিংসার জন্য দোষ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন : সাত সাংসদকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে কংগ্রেসের বিক্ষোভে অচল লোকসভা
অথচ, তাঁরা বক্তব্য রেখেছেন ২০ এবং ২৮ জানুয়ারি। আর হিংসার ঘটনা ঘটেছে ২৩ ফেব্রুয়ারি।
আমানতুল্লা খান, শারজিল ইমাম এবং তাহির হুসেনদের কাজের জন্য দায়ী ছিলেন কপিল মিশ্র উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অনেক মেহনত করে মানুষ ঘর বানান, আর আপনারা এগুলি জ্বালিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেন না।
কিছু মানুষের এই ঘর জ্বালানোর ইতিহাস আছে। দেশে হিংসার ঘটনা ঘটে, কারা ঘটায় সে তথ্য তাঁর কাছে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মিনাক্ষী লেখি দাবি করেন, ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লির হিংসার ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে বিজেপি।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধিকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বিরাট গাছের যখন পতন হয়, তখন মাটি কেঁপে ওঠে।
উল্লেখ্য, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যু পরবর্তীতে শিখ দাঙ্গা নিয়ে ওই উক্তি করেছিলেন রাজীব গান্ধি।
এরপরই কংগ্রেসকে তাঁর প্রশ্ন, দিল্লি দাঙ্গার সময় সেখানে কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিতি আপনারা প্রত্যাশা করেছিলেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
এছাড়াও নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারি সহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
প্রত্যেকের কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন জানান। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বিজেপি, দাবি করেন মিনাক্ষী।
বিচারপতি মুরলিধরের বদলি
বিচারপতি মুরলিধরের বদলির বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, কিছু লোকের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত। যাতে মানুষ জানতে পারে কে বা কারা কেন বদলি হচ্ছেন।
আরও পড়ুন : সম্পর্কে ভাঙ্গন, প্রশান্ত কিশোরকে বহিষ্কার করলেন নিতীশ কুমার
উল্লেখ্য, বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জন্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর না করার কারণ দিল্লি পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি মুরলিধর।
আর এক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলেছিলেন। কিন্তু ওইদিন রাতেই তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়।
এনিয়ে প্রশ্ন তোলে রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, লোকসভার কাজ স্বাভাবিক রাখতে এদিন দুপুরে সর্বদলীয় বৈঠক করেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা।
কংগ্রেসের দাবি মেনে নিয়ে দলের বরখাস্ত সাত সাংসদকে লোকসভায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।