আনিসের পর তুহিনা, বিরোধীদের হাতে আর‌ও এক অস্ত্র তুলে দিয়ে বিতর্কবিদ্ধ তৃণমূল

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক : আনিস খানের পর তুহিনা খাতুন, একের পর এক ঘটনায় বাংলা ধীরে ধীরে উত্তাল হয়ে উঠছে। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, এ যেন সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের রিপিট টেলিকাস্ট!

তবে সংবাদমাধ্যমের অবস্থান থেকে আমরা এখনই সেই কথা বলতে পারি না। যদিও বিরোধীরা এই ইস্যুগুলোকে হাতছাড়া করতে মোটেও রাজি নয়।

আনিস খানের ঘটনায় সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বর্ধমান পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তুহিনা খাতুনের পরিবার তৃণমূল সমর্থক বলেই এলাকায় পরিচিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তুহিনার মর্মান্তিক মৃত্যুতে সদ্যনির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলর বশির আহমেদ ওরফে বাদশার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে ওই তরুণীর পরিবার।

কেউ বলছেন, ওই কাউন্সিলরের লোকেদের হাতেই মৃত্যু হয়েছে তুহিনার। আবার কারোর দাবি কাউন্সিলরের মানসিক নির্যাতনের কারণেই আত্মঘাতী হতে বাধ্য হয়েছে এই তরুণী। কারণ যাই হোক তুহিনার মৃত্যুর পর চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার।

বশির আহমেদকে এবারের পুর নির্বাচনে বর্ধমান পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করে তৃণমূল। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি ওয়ার্ডের তৃণমূল সমর্থকদের একাংশ। তারা নিজেদের মতো করে একজনকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড় করান।

তুহিনার পরিবার প্রথম থেকেই নির্দল প্রার্থীর পাশে ছিল। সক্রিয়ভাবে তারা নির্দল প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচার‌ও করে। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি বশির আহমেদ। অভিযোগ, তার লোকেরা তুহিনাদের বাড়ির উল্টো দিকের দেওয়ালে তাদের তিন বোনের গলায় ফাঁস লাগানো ছবি এঁকে দিয়ে যায়!

তুহিনার মৃত্যুর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। বিরোধীদের দাবি, এই ছবি অত্যন্ত ইঙ্গিতবহ। কারণ তুহিনার দেহ ছবির মতোই গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

পরিবারের অভিযোগ ২ তারিখ ভোটের ফল প্রকাশের পর বাড়িতে এসে তুহিনাদের তিন বোনকেই দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বশির আহমেদ ওরফে বাদশা। তারপরই তুহিনা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়!

এই ঘটনায় পুলিশের অভিযোগ দায়ের হলেও অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর এখনও গ্রেফতার হননি। তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ তিন মহিলা সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করলেও প্রধান অভিযুক্ত বশির গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকার মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।

দলের এক সক্রিয় মহিলা সমর্থকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি তৃণমূল। এদিকে তৃণমূল সমর্থক এই পরিবারটির সমর্থনে ইতিমধ্যেই লড়াই শুরু করেছে বাম-কংগ্রেস সকলেই।

সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই এই ঘটনার প্রতিবাদে বর্ধমান শহরজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল বার করে। থানার সামনে বসে তারা ধর্না দিয়েছে। নিয়মিত তুহিনার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে গিয়ে দেখাও করেছে।

তুহিনার মৃত্যুর ঘটনায় আনিসের মতোই সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের একমাত্র আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী জানান, তাঁরাও তুহিনার পরিবারের পাশে আছেন।

আনিসের মতোই তুহিনার মৃত্যুর বিচারের দাবিতে আগামী দিনে আইএসএফ পথে নামবে বলে জানিয়েছেন ভাঙড়ের এই বিধায়ক।

আনিস খানের ঘটনার রেশ এখনও মেলায়নি। তার ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে আছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। ফলে ইস্যুতে বিতর্ক ও আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এরই মাঝে বর্ধমানের তুহিনার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা যেন বিরোধীদের হাতে আর‌ও একটি অস্ত্র তুলে দিল।

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের বেপরোয়া লাগামছাড়া মনোভাব‌ই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন দলের নেতাদের একাংশ। কেউ কেউ আক্ষেপ করে এটাও বলছেন, দলের অতি সাফল্যই কাল হল। কর্মীদের একটা বড় অংশ এই অতি সাফল্যে সাপের পাঁচ পা দেখেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করাই যাচ্ছে না!

সম্পর্কিত পোস্ট