বঙ্গ বামেদের মতো বুদ্ধ নির্ভরতা নয়, ত্রিপুরা পুনর্দখলে ত্রিশক্তি মানিক-জীতেন্দ্র-বাদল

দ্য কোয়ারি ডেস্ক: হেরে গিয়েছিলেন এবং রাজনীতি থেকে অন্তরালেই চলে গিয়েছেন। ভোট এলে অল্প বার্তা দেন দলীয় ‘কমরেড’ বাহিনিকে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের এহেন অবস্থান চলছেই। টানা সাড়ে তিন দশকের শাসনের পর এখন পশ্চিমবঙ্গে শূন্য বামেরা। বুদ্ধহীন সিপিআইএম অনেকটা নেইমার ছাড়া ব্রাজিল বা মেসি বিহীন আর্জেন্টিনার মতো-গোল কানা টিম।

বঙ্গে বামেরা অতীতের ধুসর পাতায় চলে গিয়েছে। নেতৃত্ব সংকট তার অন্যতম কারণ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নীরবতা নিয়ে সিপিআইএমের অন্দরমহলে গুঞ্জন আগেই উঠেছে। তবে পরাজয়ের পর তখনও তিনি পার্টি অফিসে যাতায়াত ধরে রেখেছিলেন। বর্তমানে অসুস্থ দেশের অন্যতম কমিউনিস্ট নেতা।

ঠিক উল্টো ছবি ত্রিপুরায়। গত বিধানসভা ভোটে এই রাজ্যে টানা ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়। হার হয়েছে তো কী হয়েছে, এই মনোভাবে পরাজিত নায়ক মানিক সরকার সরাসরি রাজপথে নেমে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তিনিও দেশের অন্যতম কমিউনিস্ট নেতা, টানা কুড়ি বছরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে সরকার থেকে চলে যাওয়ার পর দু’বার বিধানসভার ভোটে পরীক্ষা দিয়ে একেবারে অকৃতকার্য হয়েছে সিপিআইএম সহ বামেরা। ইস্যু অনেক। অথচ সেই ইস্যু ধরে রাজনৈতিক উত্থানের ডেডলক এমনই চেপে বসেছে যে মুজফ্‌ফর আহমেদ ভবনের ভোট ম্যানেজাররা ফর্মুলা খুঁজে পাচ্ছেন না।

চোখ জ্বলছে পেট্রোলে, প্রতিবাদের অস্ত্র সাইকেল

২০১১ সালের ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের পরাজয় প্রায় ধরাবাঁধা ছিল। ফল ঘোষণার পর বুদ্ধবাবু পদত্যাগ পত্র দিয়ে মৌনব্রত নিলেন। আর ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন আগরতলায় সিপিআইএম রাজ্য দফতরে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। দশরথ দেব ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে হতচকিত রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাস পর্যন্ত বলেছিলেন খুবই অস্বাভাবিক লাগছে!

পরের ছবিটা পশ্চিমবঙ্গের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ত্রিপুরায়। বিরোধী দলনেতা হিসেবে মানিক সরকারের সরব ভূমিকা রাজ্যের অন্যান্য বিরোধী নেতাদের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। বিধানসভায় দলের পরাজয়ের পরই রাজপথের আন্দোলনে তিনি রয়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। লাগাতার রাজনৈতিক সন্ত্রাসের মুখে আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন। সেইসাথে দলীয় কর্মসূচি মেনে আপ টু ডেট ভিডিও কনফারেন্সে পলিটব্যুরো বৈঠক করছেন।

গত বিধানসভা পরবর্তী ত্রিপুরায় সিপিআইএমের ছবিটা কেমন? পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধুয়ে মুছে সাফ।লোকসভা ভোটে দুটি আসনেই পরাজয়। এমনকি সদ্য শেষ হওয়া উপজাতি অধ্যুষিত স্বশাসিত পরিষদের ভোটে শূন্য হয়ে টানা ১৮ বছরের বোর্ড হাতছাড়া হলো।  পতনের এই ধারা বজায় থাকলে আগামী বিধানসভাতে বঙ্গ বামেদের মতো হাল হবে ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের।

আগরতলার বাম নেতারা পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের ‘কমরেড’ দের হাঁড়ির হাল দেখে আগেভাগেই তৈরি।সূত্রের খবর, ত্রিপুরায় শাসক বিজেপি-আইপিএফটি জোটের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মানুষের মনোভাব বুঝে প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম সর্বশক্তি নিয়ে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে ঝাঁপাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে বুদ্ধবাবুর ব্যাকআপ লাইন তৈরি করেনি সিপিআইএম। কিন্তু ত্রিপুরায় ভোট যুদ্ধে বামেদের নেতৃত্ব মানিক সরকার থাকলেও, দুটি ব্যাকআপ মুখ তৈরি বাদল চৌধুরী ও জীতেন্দ্র চৌধুরী। দুজনেই রাজ্যের হেভিওয়েট নেতা। বাদলবাবু দীর্ঘদিনের পূর্তমন্ত্রী ও এখন উপ বিরোধী নেতা। আর উপজাতি মুখ জীতেন্দ্র চৌধুরী দীর্ঘদিনের সাংসদ ছিলেন। দল ছাড়াও তাঁর নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে উপজাতি এলাকায়।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দেখানো পথেই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা

সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বাদল-জীতেন্দ্র দুজনেই বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন আবার এলাকা ভিত্তিক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকছেন। বাদলবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করে সরকার। পুলিশের হেনস্থার মুখে পড়েন তিনি।আইনি প্রক্রিয়া এখন শাসক বিজেপি বেকায়দায়। বাদল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ধোপে টেকেনি।

জীতেন্দ্র চৌধুরীর ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা রয়েছে পার্বত্য এলাকায়। উপজাতি স্বশাসিত পরিষদ হাতছাড়া হওয়ার পর জীতেন্দ্রবাবু আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে সিপিআইএমের বড় বড় মিছিল শাসক দলের কাছে চিন্তার কারণ।

আগামী বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় বামেরা ত্রি নেতৃত্বের শক্তিশেল ছুঁড়বে। লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই উঠে আসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে পরপর তিনবার সরকার গড়া তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বে বহু বিধায়ক দল ছাড়তে মরিয়া। উপজাতি এলাকায় ক্ষমতা দখলকারী তিপ্রা মথার সঙ্গে টিএমসির জোট হলে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে বামেদের লড়াইয়ের প্রধান মুখ মানিক সরকার। বিজেপি বা তৃণমূল অথবা কংগ্রেস বিলক্ষণ জানে মানিকবাবু আর যাই হোক বুদ্ধবাবুর মতো রাস্তায় নামতে ভয় পান না।

সম্পর্কিত পোস্ট