এয়ার ইন্ডিয়ার পর হিটলিস্টে কারা? অপরাধের জাল খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা
নয়ন রায়
সাইবার হানা বা ইন্টারনেটকে হাতিয়ার করে জালিয়াতির ঘটনা এই প্রথম নয়।মুম্বাই থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতা দিয়ে সেই জাল বিছিয়ে গেছে ভিন দেশে। করোনা সংক্রমনে বিপর্যস্ত গোটা দেশ। প্রায় দেড় বছর গৃহবন্দী অবস্থা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ ইন্টারনেটের দৌলতে অনলাইনের শরণাপন্ন।
তাতেই প্রতি ধাপে ধাপে লুকিয়ে প্রতারকের হাতছানি। প্রতিদিন সাইবার ক্রাইমের ঘটনা উঠে আসছে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বা সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে। সতর্ক করছেন সাইবার এক্সপার্টরা। দায়ের হচ্ছে অভিযোগ। অথচ পুলিশের সাইবার শাখা এই জালকে পাকড়াও করতে কতটা সক্রিয় ভূমিকা দেখায়, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন?
অনেকক্ষেত্রেই এই সাইবার অপরাধীরা রাজনৈতিকভাবে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠছেন যে তাদের ধরতে পেরেও উপরমহলের চাপে ছেড়ে দিতে হচ্ছে।বা কোনো ভিআইপি অতিথির মত অনায়াসে কিছুদিন জেলের হাওয়া খেয়ে বুক ফুলিয়ে ফের ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আপনার ব্যাঙ্কের এটিএম পিন হ্যাক করার বিষয়ে মাহির এই হ্যাকাররা। আধার কার্ডের লিঙ্ক ধরে তারা সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দিচ্ছে। তাদের কাছে এসব বাঁয়ে হাত কা খেল। কিন্ত সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসে যাচ্ছেন আমজনতা।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন মোবাইল স্টোরে কেওয়াইসি জমা থাকে। কলকাতার বেশ মোবাইল স্টোরে কিছু বিশেষ চক্র টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে এটিএম পাসওয়ার্ড আদায় করার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। কলকাতা থেকে হ্যাকারদের যাত্রাপথ শুরু হলেও উত্তর 24 পরগনা, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর, আসানসোল, দুর্গাপুর, উত্তরবঙ্গে এরা জাঁকিয়ে বসেছে।
অতিসম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। কেন এয়ার ইন্ডিয়া শিরোনামে? তার কারণ হলো যাত্রী পরিষেবা দেখাশুনা করে একটি সংস্থা SITA ।উড়ান সংস্থা মনে করছেন সেই সংস্থার উপর সাইবার হানা হয়েছে। হ্যাকারদের হাতে ৪৫ লক্ষ যাত্রীর যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য চলে গিয়েছে।
এস আই টি এj দাবি হ্যাকাররা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের সিভিভি নম্বর হাতাতে পারেনি। তড়িঘড়ি উড়ান সংস্থা দ্রুততার সঙ্গে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন পরামর্শ দিয়েছেন সকলকেই। শুধু এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়াও দেশি ও বিদেশি আরও বিমান সংস্থার উপর হ্যাকারদের নজর রয়েছে বলছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
ইতিমধ্যে ফিন এয়ার, সিঙ্গাপুর, লুফৎহানসা, ক্যাফে প্যাসিফিক মত বিমানসংস্থা এই হ্যাকারদের তালিকায় রয়েছে বলে সংবাদ মিলেছে কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে।
এয়ার ইন্ডিয়ার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিমান সংস্থাগুলি তাদের সার্ভারগুলিতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালে সাইবার হানায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের চার লক্ষ গ্রাহকের তথ্য চুরি করেছিল এই সাইবার অপরাধীরা। এর ফলে গত বছর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে ১৮০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। একইভাবে লন্ডনের আরো একটি বিমান সংস্থার ৯০ লক্ষ গ্রাহকদের তথ্য চলে গিয়েছিলো অপরাধীদের হাতে।
SITA ও PSS নামে পরিষেবা সিস্টেমের ডাটা প্রসেসরটি সাইবার হামলার শিকার হয়। সেই সিস্টেমে ব্যক্তিগত তথ্য ছিল। মূলত ডাটা ব্রিজেই শুরু হয় ফিশিং অ্যাটাক।
এসএমএস বা ইমেইল মারফত আশা কোন লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। এই বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন সাইবার এক্সপার্টরা। এক্সপার্টরা জানাচ্ছেন ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারের নামে কোন কল এলে এড়িয়ে যাবেন। যদি আপনি কোনো ট্রানজাকশন না করেন তা সত্ত্বেও সদ্য আপনার ফোনে ওটিপি মেসেজ এলে সতর্ক হয়ে যান। নাহলে আপনার জীবনের সঞ্চয় টাকা গায়েব হয়ে যেতে পারে।
শুধু এয়ার ইন্ডিয়া তথ্য চুরির ঘটনা নয়। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে হ্যাকাররা অফিস তৈরি করে মানুষের সঞ্চয় আত্মসাৎ করার পথ তৈরী করে ফেলেছে। দূর থেকে মনে হবে যেন আস্ত কলসেন্টার। কিন্তু তা নয়। ভিতরের গল্পটা অন্য। প্রচুর বেকার যুবকরা এখানে চাকরি করছেন। আপাদমস্তক দেখে বোঝা দায়, কী হচ্ছে সেখানে। প্রতিনিয়ত চলছে তাদের মগজ ধোলাই। এতটাই মগজ ধোলাই যে তাদের কাছে টাকার মোড়কে জীবন নতুন স্বপ্ন তৈরি হতে শুরু করে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করার মত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তারা। পরিবর্তে মোটা বেতন মিলছে। সাইবার থানার কাছে এই অপরাধীদের ছবিসহ তথ্য থাকলেও বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বা আদৌ তার খবরাখবর প্রশাসনের কর্ণকুহরে পৌঁছয় নাকি তা আজও অধরা।