আমি অনাম্নী সাথে আমেরিকা… পর্ব-১

অনন্যা তেওয়ারী

আজ শুক্রবার সন্ধ্যে। কর্মব্যস্ত সপ্তাহের শুভ সমাপ্তি। লম্বা একটা হাই  তুলে, গা টা এপার থেকে ওপর পর্যন্ত যতসম্ভব মোচড় দিয়ে ভেঙে ল্যাপটপ টা নিয়ে ঝুল বারান্দার গ্লাসডোরের এপারে এসে বসেছি। কারণ গ্লাসডোর পেরিয়ে ওপারে যাবার সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছিনা।

আপনারা ভাবতে পারেন যে ঝুল বারান্দা নিয়ে কিসের এত ভ্যানতারাম। সেথায় যেতে আবার কিসের সাহস লাগে। কিন্তু একরত্তিও মিথ্যে বা বাড়িয়ে বলছিনা। কারণ আর কিছুই না বাইরে হু হু করা ঠান্ডা উপরন্তু সঙ্গে তুষারপাতের বিষফোঁড়া।

এ প্রসঙ্গে আমার পরিচয়ে আসি। আমার নাম..

আমার নাম নাই বা বললাম। ধরা যাক আমার নাম অনাম্নী। আমি আপনাদের বাড়ির আশেপাশেই বড় হলাম। হয়তো বা ঠিক পাশের  বাড়িতেই। তাই হাত মিলিয়েনি আসুন। আপনার আর আমার খুঁটি একই  দেশ এ বাঁধা। লেখাটা যখন গড়গড়িয়ে পড়ে ফেলছেন তখন আশা করাই  যায় যে মাতৃ ভাষাটিও এক। এরপরেই হয়তো মনে প্রশ্ন জাগবে তাহলে হুহু করা ঠান্ডা, বরফপড়া এই গুলো কোথায় হল।

আরও পড়ুনঃনতুন দিনের গন্ধে ম ম করছে গোটা বিশ্ব…

গল্পের গরু টা আসলে গাছে না উঠে একটি ষাঁড়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চরতে চরতে প্রশান্ত মহাসাগর পার করে অন্য একটা মহাদেশে এসে পৌঁছেছে। আশা করি বুঝতে পারছেন। এবং হ্যাঁ, ঠিক ই বুঝেছেন।

বিবাহ এবং কর্ম সূত্রে এখন আবাস স্থল দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ হয়ে গেছে। দেশ বদলিয়েছে সঙ্গে যা বদলিয়েছে সেটা হলো মহাদেশ। আপাত বসতস্থল মহাদেশটি হলো নর্থ আমেরিকা এবং দেশ ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা। রাজ্য ইলিনয়। এবার এইখানেই গন্ডগোল।

প্রথম যখন আমেরিকা আসি তখন আমার বসত রাজ্য ছিল আরিজোনা। কাঠফাটা গরম। সেলসিয়াস এ কখনো কখনো ৪৯- ৫০ ও ছেঁকা খেয়েছি। নিজের জায়গায় ও তো গরম কম ছিলোনা তাই কিছুটা গা সওয়া লাগতো। কিন্তু ইলিনয় হলো ঠিক উল্টো।কাঠফাটা গরম থেকে এসে পড়লাম চিমটি কাটা ঠান্ডায়। 

চূড়ান্ত বৈপরীত্যে তাই এখনো হিমশিম খাচ্ছি। আমি যে শহরে এখন আছি তার নাম Bloomington. শিকাগো থেকে মাইল এর ডিসটেন্স জানিনা। কিন্তু গাড়িতে ঘন্টা দুয়েক লাগে। এখনো যাওয়া হয়ে ওঠেনি।আপাতত তাই BLOOMINGTON ই মন দিয়ে চেনার চেষ্টা করছি। ও হ্যাঁ শিকাগো নাম টা বড় শহর এর গল্প বললেও ইলিনয় এর রাজধানী কিন্তু স্প্রিংফিল্ড।

যাইহোক বাড়ির বাইরে এখন ইঞ্চি খানেক বরফের আস্তরণ। সেই শ্বেত শুভ্র বরফের দর্শনে চোখ ধন্য করতে করতে মনে হলো এই তো নতুন সফরের শুরু। গল্পরা তৈরী হচ্ছে মনের ফ্যাক্টরি তে।  তাই গুটি কয় অভিজ্ঞতা ভাগ করে না নিতে পারলে তো বিদেশ যাপন টাই কেমন ফিকে।

#TheQuiry এর সঙ্গে যখন কথা বললাম তখন মনে হলো এই তো সুযোগ। তাই এই নতুন অভিজ্ঞতা ভাগের লোভটা সামলানো গেলোনা।

বিষয় আর কিছুই না। অনাম্নী আমেরিকা। অনাম্নী বললাম কারণ যে আমেরিকা কে আপনি চেনেন এ তার গল্প না। এটা আমার চোখে দেখা আমেরিকার গল্প। আরও গুছিয়ে বললে আরিজোনা থেকে ইলিনয়ে এসে নতুন করে এই দেশটাকে চেনার গল্প। এখানকার জল, হাওয়া, কাদা, মাটি, বরফ, পাথর, রাস্তা ঘাট, শহর বাজার, রাজ্য রাজনীতি, মানুষ পাখি, পুকুর নদী সবের গল্প নিয়ে আপনাদের সঙ্গে পসার জমাবো প্রতি শনিবার রাতে।

কোনো শনিবার যদি ফাঁকি পড়ে জানবেন নিতান্ত গোবেচারা আমি নিশ্চই সারা সপ্তাহ কিছু কারণে নাকানিচোবানি খেয়ে হয়তো লেখার খাতা খানা ছুঁতেই পারিনি। তবে কোনো ভাবেই ফাঁকিবাজ ভাবেননা না।

আমি-ই জানি আমার সেই একদিনের অনুপস্থিতিও আমার কাছে কতটা দুর্বিসহ।

আসলে আমি স্বভাব এবং অভাব সব কিছুতেই বাঙালি। তাই আড্ডা মারাটা কুক্ষিগত।

কয়েক সপ্তাহ হল এই নতুন শহরটায়। অনেকটা গুছিয়ে এনেছি। নিজের সংসার, সঙ্গে নিজেকে। আশা করি আমার চোখে নতুন করে পশ্চিম মধ্য আমেরিকারকে চিনতে খারাপ লাগবেনা। আজকে তাই এখানেই ইতি। গল্প গুলো বলার মত করে সাজাতে হবে তো। পরের সপ্তাহে সেই গল্পের ঝুলি খুলেই টোকা মারবো আপনাদের দরজায়। আমি অনাম্নী সাথে আমেরিকা।

পরবর্তী পর্ব আগামী শনিবার রাত ৯টায়

সম্পর্কিত পোস্ট