নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাতেই কি শাসকের নিচুতলা লাগামছাড়া হয়ে যায়? প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে আনিস কাণ্ড

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সময়টা ২০০৭ সাল। সবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা সপ্তমবারের জন্য সরকার গঠন করেছে বামফ্রন্ট যাকে বলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তারপরই সময় নষ্ট না করে রাজ্যজুড়ে শিল্পায়নের ঝড় তোলার কাজ শুরু করে দেয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভা।

প্রথমেই তার হাত দেয় সিঙ্গুরে। কিন্তু কৃষি জমি নিয়ে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুকের টানাপোড়েনের জেরে শুরুতেই তারা ধাক্কা খায়। সেই সময়ে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে শোনা যেত, আমরা ২৩৫, ওরা মাত্র ৩০।

তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর এই দম্ভ ছড়িয়ে পড়েছিল নিচুতলার বাম নেতাকর্মীদের মধ্যেও। তারা রাজ্যজুড়ে একের পর এক হঠকারী কাজ করতে শুরু করে। অচিরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশ প্রশাসনের বদলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে দেখা যায় সিপিএম নেতাদের মদদপুষ্ট বাহিনীকে। তাদের নির্দেশ মতো সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন থানার ওসিরা।

সেদিনের সেই পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের ঘটনার অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রায় দেড় দশক আগে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই একের পর এক ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি উত্তাল করে তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তৎকালীন বাম সরকার আমজনতার ভাবাবেগকে গুরুত্ব না দিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাতে গিয়ে আর‌ও বেশি ভুল করে।

Howrah SP Soumya Roy : এখনও এসপি পদে সৌম্য, বিধায়িকা স্ত্রীর জন্য কি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এই পুলিশ কর্তা?

বর্তমানে আমতার ছাত্রনেতা আনিস খান হত্যাকাণ্ডেও রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে আমজনতার একটা বড় অংশ প্রবল প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। যার জেরে পরপর দু’দিন কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে কলকাতার রাজপথ।

এদিকে সবে গতবছর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। আর তারপরই তাদের মাঝারি স্তর থেকে নিচু তলার নেতাকর্মীদের দাপট আরও বেড়েছে। ঠিক যেন শেষ বামফ্রন্ট সরকারের স্মৃতি!

আমতার আনিস খানের হত্যাকান্ডেও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সেই গাজোয়ারি আচরণের অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বাংলার শাসক দলকে।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার হাল ফেরাতে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে কি আদৌ কাজ হবে? কারণ স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ ইতিমধ্যেই লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণমানুষের রোষ ক্রমশ বাড়ছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কড়া হাতে আন্দোলন দমানোর কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী

কিন্তু আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে যে হাজারে-হাজারে মানুষ রাস্তায় নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাবে নাতো? এক্ষেত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদাহরণ কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর কপালের ভাঁজ চওড়া করতে পারে!

সম্পর্কিত পোস্ট