হাত ধরে মেয়েকে পাপের সাম্রাজ্যের সঙ্গে পরিচয় করান অনুব্রত!
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ
“নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা
এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি!”
ভাইপো ইন্দ্রজিতের গঞ্জনার মুখে এভাবেই লঙ্কারাজ রাবণকে নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা, ক্ষেদের কথা প্রকাশ করেছিলেন কাকা বিভীষণ। এমনটাই তাঁর বিখ্যাত মেঘনাদবধ কাব্যে তুলে ধরেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কিন্তু সুকন্যা মণ্ডল কি আদৌ বাবা অনুব্রত মণ্ডলকে এমন কিছু বলবেন? নিদেনপক্ষে বেঠিক পথকে কেন সঠিক বলে শিখিয়ে এই সর্বনাশের দিকে তাঁকে ঠেলে দেওয়া হল, বাবাকে সেই প্রশ্ন কি করবেন কেষ্ট কন্যা?
যে বাবা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর কেঁদে ভাসিয়েছিলেন সুকন্যা মণ্ডল, সেই বাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে যদি প্রশ্ন করেন, “নিজে করেছিলে করেছিলে, কিন্তু আমি সন্তান। আমাকে কেন সঠিক শিক্ষা দিলে না?” তাহলে এতো খারাপ কিছুর মধ্যেও পোয়েটিক জাস্টিস হয়ে যায়। কিন্তু তা বোধয় হবে না। আর এই না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কারণ টেট ফেল করে শিক্ষিকার চাকরি বা বাড়িতে বসে স্কুলের হাজিরার খাতায় সই করা এবং মাসের শেষে বেতন তোলা, এসব তো সজ্ঞানেই করেছেন সুকন্যা মণ্ডল। তিনি তো আর শিশু নন। বাবা অন্যায় পথ দেখিয়েছে বলে নিজে সৎ পথে হাঁটার চেষ্টা করবেন না, তা তো তাঁকে কেউ বারণ করেনি।
এরপরেও প্রবল পরাক্রমশালী বাবা গ্রেফতারের পর তাঁর বোধয় হতে পারত। কিন্তু বুধবারে সকালের ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে অনুব্রত কন্যা বেশ ভালো ‘খেলোয়াড়’। তিনি পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির মতো চাপের মুখে অত সহজে ভেঙে পড়বেন না। তাই মন খারাপের কথা বললে দিব্যি সিবিআই অফিসারদের জেরা এড়িয়ে যান।
দুর্নীতি ভুলে ধোলাই-পেটাইয়ে মন! শাসক থেকে বিরোধী, পিছিয়ে নেই কেউ
কারণ প্রভাবশালী বাবার সন্তান সুকন্যারা জানেন আদালতের নির্দেশ ছাড়া সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে বাধ্য করতে পারবে না। তাই বুধবার সকালের পরই কেন্দ্রীয় এজেন্সির গোয়েন্দারা শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এবার তাঁরা নিশ্চয়ই নোটিশ পাঠিয়ে অনুব্রতর আদরের রুবাইকে ডেকে পাঠাবেন।
তবে বেআইনিভাবে স্কুল শিক্ষিকা হওয়ার অভিযোগের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই আদালতের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অনুব্রত কন্যাকে। আশা করা যায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করার দুঃসাহস বা বোকামি কোনটাই তিনি করবেন না।
কিন্তু এ কোন সময়ের মধ্যে এসে পড়লাম! যেখানে বাবা নিজে পাপ তো করছেনই, হাতে ধরে সন্তানকে পাপের দুনিয়ায় প্রবেশ করাচ্ছেন। বিন্দুমাত্র লজ্জা, গ্লানিবোধ কিচ্ছু নেই! শুধু টাকা আর টাকা, যেভাবে কামাও আর কামাও!
আচ্ছা অনুব্রত মণ্ডলদের বিবেক, নৈতিকতা বলে কিছুই বোধহয় অবশিষ্ট নেই, তাই না? সন্তান হয়ে সুকন্যা মণ্ডল তো পারতেন বাবাকে কিছুটা আটকাতে। অন্তত নিজে এই পাপের ভাগীদার না হতেন।
নাকি এই দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচারের আবহে বড় হতে হতে তিনিও একেই স্বাভাবিক বলে চিনতে শেখেন। তবে ‘পাপ বাপকে ছাড়ে না’, সন্তান তো কোন ছাড়! তাই এখন সিবিআই-ইডির শক্তিশালী স্ক্যানারের সামনে অনুব্রত মণ্ডলের একমাত্র মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল।